Image description
 

চেয়ে-চিন্তে সম্মান নেওয়া যাকে বলে আরকি। কিংবা জোর করে বাগিয়ে নেওয়া। শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেলেও ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষেত্রে এই দুটো কথাই লোকে বলবে। কারণ, বাইডেন শাসনের অবসানের পর দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এসে মার্কিন এই প্রেসিডেন্টও গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলকে অর্থ ও অস্ত্র সহায়তা দিয়েছেন। সেই অস্ত্রে প্রাণ ঝরেছে হাজার হাজার ফিলিস্তিনির। এমনকি ট্রাম্প কিছুদিন আগে পুনর্গঠনের নামে গাজা দখলের পরিকল্পনাও ঘোষণা করেন। আজ কিংবা সামনের বছর যদি গাজায় শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ট্রাম্পকে নোবেল দেওয়া হয়, তাহলে নোবেল শান্তি পুরস্কারের বহুচর্চিত বিতর্ক আরও বড় হবে। নোবেলের দুর্নাম বাড়বে।

কিন্তু ট্রাম্প মনে করেন, তিনিই এবার শান্তিতে নোবেল পাওয়ার সবচেয়ে বড় দাবিদার। তাঁর প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতিতে ইসরায়েল ও হামাস শেষতক রাজি হওয়ার পর ট্রাম্পকেই সবচেয়ে যোগ্য প্রার্থী হিসেবে মনে করছেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন। তাঁর ভাষায়, ‘এবারের নোবেল ট্রাম্পেরই প্রাপ্য।’

গাজা তথা ইসরায়েল-ফিলিস্তিন বিষয়ে যদি এবার নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়, তাহলে অনেক পক্ষ সমান দাবি রাখে কৃতিত্ব পাওয়ার। যেমন : গাজার অকুতোভয়ী সংবাদকর্মী, চিকিৎসাকর্মী ও ত্রাণকর্মীরা এবং গ্রেটা থুনবার্গসহ বিশ^ব্যাপী ফিলিস্তিনের পক্ষে সংহতি জানিয়ে অহিংস ও

শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীরা। যাঁরা নিরলসভাবে গাজায় ইসরায়েলি মানবতাবিরোধী অপরাধের ও মানবিক সংকটের খবর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রচার করে আসছেন, যাঁরা এই কঠিন পরিস্থিতিতেও জরুরি চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন, যাঁরা অনাহারীর মুখে আহার ও পানি তুলে দিয়েছেন এবং যুদ্ধ বন্ধে যাঁরা অব্যাহত চাপ তৈরি করেছেন নিজ নিজ দেশের সরকারের ওপর এবং ইসরায়েল ও এর যুদ্ধমিত্র যুক্তরাষ্ট্রের ওপর।

আর ট্রাম্প কী করেছেন? নোবেল পাওয়ার জন্য প্রথমে ২০-দফা প্রস্তাব পেশ করলেন। এরপর তা মেনে নিতে দুপক্ষকে জোর করতে থাকলেন। যুদ্ধবিরতিতে রাজি না হলে হামাসকে আরও শক্তি প্রয়োগ করে নির্মূল করা ও ইসরায়েলকে অসহায়তা করে বিচ্ছিন্ন করার হুমকি দিলেন। ফলে জোর করে হলেও শান্তির আভাস পাওয়া যাচ্ছে গাজা উপত্যকায়। কিন্তু ট্রাম্পের ২০-দফা পরিকল্পনায় শান্তির পরিবর্তে জটিল মারপ্যাঁচ রয়েছে, বিশেষ করে হামাস ও স্বাধীনতাকামী ফিলিস্তিনিদের জন্য ‘কালো দিন’ অপেক্ষা করছে বলে দ্য গার্ডিয়ানে এক বিশ্লেষণী প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এর আগেও ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন দ্বিরাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রবর্তনের মধ্য দিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা হয়েছে। এমনকি একবার শান্তিতে নোবেল পুরস্কারও দেওয়া হয়েছে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখার জন্য- ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াসির আরাফাত ও তৎকালীন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী মেনাচেম বেগিমকে।

ট্রাম্প অবশ্য শুধু গাজার জন্য নোবেল দাবি করছেন না। এ ছাড়াও আরও সাতটি যুদ্ধ বা সংঘাত থামিয়ে দেওয়ার কৃতিত্ব দাবি করে তিনি মুখ বড় করে বলেছেন, তাঁকে একটা নয় পাঁচ-ছয়টা নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়।

সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ট্রাম্প বলেন, ‘সবাই বলছে, আমার নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়া উচিত।’ তিনি দাবি করেন, ‘আমি সাতটি যুদ্ধ শেষ করেছি। কোনো প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রী এর কাছাকাছি কিছুও করেননি।’ তিনি যে যুদ্ধগুলো বন্ধ করেছেন বলে দাবি করেন, এসবের মধ্যে রয়েছে কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ড; কসোভো ও সার্বিয়া; ডিআর কঙ্গো ও রুয়ান্ডা; ভারত ও পাকিস্তান; ইরান ও ইসরায়েল; মিশর ও ইথিওপিয়া এবং আর্মেনিয়া ও আজারবাইজান।

ট্রাম্প যে যুদ্ধগুলো শেষ করার দাবি করেন, তার কিছুর সঙ্গে তিনি নিজেই জড়িত ছিলেন (যেমন : ইরান-ইসরায়েল এবং হামাস ও ইসরায়েল)। কিছু যুদ্ধবিরতিতে তাঁর ভূমিকা বিতর্কিত (ভারত-পাকিস্তান)। তবে কিছু সংঘাতে জড়িত পক্ষগুলো মধ্যস্থতাকারী হিসেবে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার স্বীকৃতি দেয়।

ট্রাম্পের অধীনে যুক্তরাষ্ট্র ইয়েমেনের হুতিদের ওপর হামলা চালিয়েছে, সোমালিয়ায় সামরিক অভিযান চালিয়েছে এবং ক্যারিবীয় অঞ্চলে ভেনেজুয়েলার নৌকা লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। যিনি নিজেই যুদ্ধে জড়িয়ে থাকেন, যিনি অন্য দেশে হামলার নির্দেশ দেন, তিনি কীভাবে শান্তিতে নোবেল পাবেন- এই প্রশ্ন থাকছে। আজ শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ীর নাম ঘোষণা হবে। যদি ট্রাম্প নোবেল পান, তিনি খুশি হবেন; কিন্তু নিন্দা কুড়াতে হবে নোবেলকে। এমনকি ট্রাম্পের সঙ্গে যৌথভাবে যদি প্রকৃত শান্তিকামী কোনো ব্যক্তি- যেমন সুইডিশ আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ- নোবেল পান, তাঁরা এই নোবেল প্রত্যাখ্যানও করতে পারেন।