Image description

নরওয়েজীয় নোবেল কমিটি যখন এই বছরের নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ীর নাম ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন একটি নাম তাদের সিদ্ধান্তের ওপর ছায়া ফেলছে। আর সেই নামটি হলো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত জানুয়ারিতে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই ট্রাম্প পরিষ্কার ভাষায় বলেছেন, তিনি মনে করেন, এই মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার তারই প্রাপ্য। কারণ তার দাবি, তিনি অন্তত ‌‘সাতটি যুদ্ধের অবসান ঘটিয়েছেন।’

বুধবার তিনি নিজেকে অষ্টম যুদ্ধের সম্ভাব্য সমাপ্তির কৃতিত্ব দাবি করা ব্যক্তির সম্মুখ সারিতে বসিয়েছেন। ওই সময় ইসরায়েল ও হামাস ট্রাম্পের সদ্য ঘোষিত ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার ভিত্তিতে যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপে রাজি হয়েছে। চলতি বছরের পুরস্কার ঘোষণা এমন এক সময়ে হতে যাচ্ছে, যখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ পৃথিবীর বহু স্থানে সংঘাত চলছে।

এবারে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য ৩৩৮ জন মনোনীত হয়েছেন এবং নরওয়ের সংসদ কর্তৃক নিযুক্ত পাঁচ সদস্যের নোবেল কমিটি বিজয়ী নির্ধারণ করতে যাচ্ছে শুক্রবার।

• ট্রাম্প কি নোবেল শান্তি পুরস্কারের যোগ্য?

তিনি এই পুরস্কারের যোগ্য, এটা কেন বলেন ট্রাম্প? সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে দেওয়া ভাষণে ট্রাম্প বলেছিলেন, সবাই বলছে, আমার নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়া উচিত।

তিনি বলেন, আমি সাতটি যুদ্ধের অবসান ঘটিয়েছি। কোনও প্রেসিডেন্ট কিংবা প্রধানমন্ত্রী কখনও এর কাছাকাছি কিছু করেননি।

ট্রাম্প দাবি করেন, তিনি কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ড; কসোভো ও সার্বিয়া; গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র (ডিআরসি) ও রুয়ান্ডা; পাকিস্তান ও ভারত; ইসরায়েল ও ইরান; মিসর ও ইথিওপিয়া এবং আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের যুদ্ধ বন্ধ করেছেন।
• ট্রাম্পের কৃতিত্ব কী?

ট্রাম্প যেসব যুদ্ধ শেষ করার দাবি করেন, তার কিছুতে তিনি নিজেই সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। কিছু যুদ্ধবিরতির ক্ষেত্রে তার ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক আছে। তবে এমন কিছু সংঘাতও আছে যেখানে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো তাকে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কৃতিত্ব দেয়।

গত সেপ্টেম্বরে মার্কিন এই প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, গাজায় ইসরায়েলের দুই বছরের যুদ্ধের সম্ভাব্য অবসানের জন্য তিনি পুরস্কারের যোগ্য। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র ও ইসরায়েলের প্রতি দৃঢ় কূটনৈতিক সমর্থন ওই যুদ্ধ টিকিয়ে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তবে ট্রাম্প তার পূর্বসূরি জো বাইডেনের তুলনায় ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে যুদ্ধবিরতির জন্য বেশি চাপ দিয়েছেন বলে ধারণা করা হয়।

গত সপ্তাহে ট্রাম্প গাজা যুদ্ধবিরতি নিয়ে ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনা প্রকাশ করেন। বুধবার ইসরায়েল ও হামাসের যুদ্ধবিরতি ঘোষণার ফলে এই যুদ্ধ অবসানের সবচেয়ে কাছাকাছি অবস্থানে এসেছে।

এর আগে, গত জুনে ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে ইরান ও ইসরায়েলের যুদ্ধ শেষ হয়। তবে এই সংঘাতের শুরু হয় ইসরায়েলের ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা ও বিজ্ঞানীদের হত্যার মাধ্যমে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রও অংশ নিয়েছিল। ট্রাম্প মার্কিন সামরিক বাহিনীকে ইরানের তিনটি স্থাপনায় হামলার নির্দেশ দেন। এরপর কাতারে যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম সামরিক ঘাঁটিতে পাল্টা আঘাত হানে ইরান, তারপরই যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসে।

তার আগে, মে মাসে ভারত ও পাকিস্তান পরস্পরের সামরিক ঘাঁটিতে পাল্টাপাল্টি বিমান হামলা চালায়। পাকিস্তান দাবি করে, ভারতের হামলায় বহু বেসামরিক নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে, ভারত বলেছে, তারা পাকিস্তানের ভেতরে ‘সন্ত্রাসী ঘাঁটি’ ধ্বংস করেছে। চিরবৈরী দুই প্রতিবেশীর চারদিনের সংঘর্ষের পর ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন। এই যুদ্ধবিরতের নেপথ্যে পাকিস্তান ট্রাম্পকে কৃতিত্ব দিলেও ভারত তার ভূমিকা অস্বীকার করে।

গত আগস্টে কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের মাঝে পাঁচদিন ধরে যুদ্ধ চলে। এরপর ট্রাম্পের ফোনালাপ ও মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম এবং চীনা প্রতিনিধিদলের মধ্যস্থতায় উভয়পক্ষের মাঝে যুদ্ধবিরতি শুরু হয়। এই যুদ্ধবিরতির জন্য এখন পর্যন্ত কেবল কম্বোডিয়াই ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়েছে।

২০০০ সালের শুরুর দিক থেকে কসোভো ও সার্বিয়ার মাঝে উত্তেজনা চলে আসছে। ২০২০ সালে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে দুই দেশ একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। উভয় দেশের সম্পর্কে এখনও ব্যাপক টানাপোড়েন রয়েছে। তবে ট্রাম্প দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর ওই দুই দেশের মাঝে পুরোমাত্রার কোনও যুদ্ধ হয়নি।

ট্রাম্প দাবি করেন, তিনি মিসর ও ইথিওপিয়ার মধ্যকার যুদ্ধও শেষ করেছেন। কিন্তু এই দুই দেশের মধ্যে নীলনদের একটি জলবিদ্যুৎ বাঁধকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা থাকলেও তারা কখনও পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে জড়ায়নি।

রুয়ান্ডা ও কঙ্গো গত জুনে ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় একটি শান্তিচুক্তিতে স্বাক্ষর করে। উভয় দেশের মাঝে উত্তেজনা চলমান থাকলেও চুক্তিটি এখনও কার্যকর রয়েছে।

গত আগস্টে হোয়াইট হাউসে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যে একটি শান্তিচুক্তির তত্ত্বাবধান করেন ট্রাম্প। চুক্তিতে ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে চলমান সংঘাতের অবসান ঘটানোর প্রতিশ্রুতি রয়েছে। তবে পরবর্তীতে ফক্স অ্যান্ড ফ্রেন্ডস অনুষ্ঠানে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, তিনি আজারবাইজান ও আলবেনিয়ার মধ্যে যুদ্ধ শেষ করেছেন।


• ট্রাম্প কি সত্যিই এই পুরস্কার পেতে পারেন?

অসলো পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক নিনা গ্রেগার বলেন, যদি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই বছর নোবেল শান্তি পুরস্কার পান, তাহলে আমি অবাক হবো। কারণ এখন পর্যন্ত শান্তির জন্য যথেষ্ট অবদান রাখতে পারেননি তিনি।

তিনি বলেন, গাজা যুদ্ধের অবসানে তার প্রচেষ্টা প্রশংসনীয়। কিন্তু তার প্রস্তাব কার্যকর এবং স্থায়ী শান্তি আনবে কি না, তা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না।


• ট্রাম্প কেন নোবেল পুরস্কার চান?

ট্রাম্প বলেন, তিনি এই পুরস্কারের যোগ্য এবং তার বহু সমর্থকও এই বিষয়ে একমত। তবে পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে প্রায়ই যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে নিজের তুলনা করেন তিনি।

ওবামা ২০০৯ সালে ‘আন্তর্জাতিক কূটনীতি ও জনগণের মধ্যে সহযোগিতা জোরদার করার অসাধারণ প্রচেষ্টার’ স্বীকৃতি হিসেবে নোবেল শান্তি পুরস্কার পান। যদিও তখন তার ক্ষমতায় আসার মেয়াদ ছিল মাত্র কয়েক মাস। পরে ওবামার নোবেল পুরস্কার পাওয়া নিয়ে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়।

ট্রাম্প গত বছর বলেছিলেন, ‘‘আমার নাম যদি ওবামা হতো, তাহলে আমি ১০ সেকেন্ডের মধ্যেই নোবেল পেয়ে যেতাম।’’

নরওয়ের পত্রিকা ড্যাজেন্স নায়েরিংসলিভ বলেছে, গত জুলাইয়ে নরওয়ের অর্থমন্ত্রী ও সাবেক ন্যাটো প্রধান জেন্স স্টলটেনবার্গকে ফোন দিয়ে শুল্ক ও নোবেল শান্তি পুরস্কার নিয়ে আলোচনা করেছিলেন ট্রাম্প।


• ট্রাম্প কি কখনও আগ্রাসী ছিলেন?

নিনা গ্রেগার বলেন, নোবেল কমিটি যখন বিজয়ী বেছে নেয়, তখন তারা প্রার্থীর সামগ্রিক শান্তিপ্রচেষ্টা বিবেচনা করে।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ট্রাম্পের সরে আসা, ডেনমার্কের মালিকানাধীন গ্রিনল্যান্ড দখলের আকাঙ্ক্ষা এবং নিজ দেশে গণতান্ত্রিক অধিকার ক্ষুণ্ন করার ঘটনাগুলো আলফ্রেড নোবেলের ইচ্ছার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

জুনে ইরানে ইসরায়েলের সঙ্গে যৌথ বোমাবর্ষণে অংশ নেওয়া ছাড়াও ট্রাম্প ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ায় জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের নেতাদের লক্ষ্য করে হামলা চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন।

মার্চে ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিমান হামলা চালায় মার্কিন সামরিক বাহিনী। সেপ্টেম্বরে ভেনেজুয়েলা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে মাদক পাচার করছে, এমন অভিযোগে তিনটি নৌকা ডুবিয়ে দেওয়ার জন্য সামরিক বাহিনীকে নির্দেশ দেন তিনি।

গ্রিনল্যান্ড, কানাডা এবং পানামা খাল দখলের হুমকিও দিয়েছেন ট্রাম্প।


• নোবেল শান্তি পুরস্কার কি কেবল অহিংসদের জন্য?

সুইডেনের আলফ্রেড নোবেলের উইল অনুযায়ী, নোবেল শান্তি পুরস্কার সেই ব্যক্তিকে দেওয়া হয়, যিনি ‌‌‘দেশগুলোর মাঝে ভ্রাতৃত্ব, স্থায়ী সেনাবাহিনীর বিলুপ্তি বা হ্রাস এবং শান্তির প্রসারে সর্বোচ্চ অবদান রেখেছেন।

তবে বাস্তবে এই পুরস্কারটি বিতর্কে ঘেরা। ১৯৭৩ সালে ভিয়েতনাম যুদ্ধের অবসানে ভূমিকা রাখার স্বীকৃতি হিসেবে নোবেল শান্তি পুরস্কার পান মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার। যদিও তার নেওয়া বিভিন্ন সিদ্ধান্ত সেই যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করেছিল এবং কম্বোডিয়ায় ব্যাপক বোমাবর্ষণে লাখো মানুষের প্রাণহানি ঘটে।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশে পাকিস্তানের গণহত্যার সময়ও প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের নেতৃত্বে ইসলামাবাদের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। পরবর্তীতে চিলির গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট সালভাদর অলেন্দেকে উৎখাতে সামরিক অভ্যুত্থানেও সহায়তা করেন তিনি। এমনকি পুরস্কার পাওয়ার পর ১৯৭৫ সালে তিনি ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট সুহার্তোর পূর্ব তিমুর আক্রমণের অনুমোদন দেন। যুক্তরাষ্ট্রের স্নায়ুযুদ্ধের সময়ের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র ছিলেন সুহার্তো।

আরও পড়ুন
ট্রাম্প সত্যি নোবেল প্রাপ্য, বললেন আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট

১৯৯৩ সালের অসলো চুক্তির জন্য ১৯৯৪ সালে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী ইতজাক রবিন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী শিমন পেরেস ও ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াসির আরাফাত যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কার পান।

মিয়ানমারের গণতন্ত্রকামী নেত্রী অং সান সু চি ১৯৯১ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার পান। ২০১৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত দেশটির সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর চালানো গণহত্যায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে তার পুরস্কার বাতিলের দাবি ওঠে।

আর ওবামার নোবেল জয় নিয়েও সমালোচনা রয়েছে। নিনা গ্রেগার বলেন, ওবামা ২০০৯ সালে পুরস্কার পান। সমালোচকরা বলেন, তিনি তখনও যথেষ্ট কাজ করেননি এবং মাত্র কয়েক মাস আগে ক্ষমতায় এসেছিলেন।

তিনি বলেন, ওবামার ক্ষেত্রে কমিটি তার বহুপাক্ষিক কূটনীতি ও নিরস্ত্রীকরণের দৃষ্টিভঙ্গিকে গুরুত্ব দেয়; যা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছিল। গ্রেগারের মতে, এসব ঘটনার দিকে তাকালে দেখা যায় নোবেল কমিটি মাঝে মাঝে বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিতেও পিছপা হয় না; যদি তারা মনে করে প্রার্থী সত্যিই পুরস্কারের যোগ্য।
• তাহলে ট্রাম্প কি নোবেল জিততে পারেন? কারা তাকে সমর্থন দিয়েছেন?

২০২৫ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়নের সময়সীমা ছিল গত ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত। ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ফেরার কিছুদিন পরই এই সময়সীমা শেষ হয়ে যায়।

গত জুলাইয়ে ট্রাম্পকে মনোনীত করেন নেতানিয়াহু, আগস্টে কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেতও তার পক্ষে মনোনয়ন দেন। একই মাসে আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ান ও আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম অলিয়েভ যৌথভাবে তার প্রতি সমর্থন জানান।

ট্রাম্পের প্রশাসনের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ বলেন, এই পুরস্কারের সবচেয়ে যোগ্য প্রার্থী ট্রাম্প। রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান বাডি কার্টারও সেপ্টেম্বরে নরওয়েজীয় কমিটির কাছে চিঠি দেন। মার্কিন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি ফাইজারের প্রধান নির্বাহী অ্যালবার্ট বোরলাও বলেন, এই পুরস্কার ট্রাম্পের প্রাপ্য।

তবে গত ৩১ জুলাইয়ের পরের সব মনোনয়ন ২০২৬ সালের পুরস্কারের জন্য গণ্য হবে। পাকিস্তান সরকার ইতোমধ্যে আগামী বছরের জন্য ট্রাম্পকে মনোনীত করেছে।

ট্রাম্পের প্রার্থিতা বিবেচনায় আছে কি না, নরওয়েজীয় নোবেল আয়োজকদের কাছে এমন প্রশ্ন করেছিল আল-জাজিরা। কিন্তু এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি নোবেল কমিটি।
• ট্রাম্প নোবেল না পেলে কী হতে পারে?

গত সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় দেশটির সামরিক বাহিনীর এক বৈঠকে ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি এবার নোবেল শান্তি পুরস্কার না পেলে সেটি হবে আমেরিকার জন্য বড় অপমান। তিনি বলেন, তারা এমন কাউকে পুরস্কার দেবে, যে কিছুই করেনি...হয়তো এমন কাউকে দেবে, যে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মানসিক অবস্থা নিয়ে একটি বই লিখেছে।

ট্রাম্প যদি নোবেল পুরস্কার না পান, তাহলে সেটির প্রতিক্রিয়া কেমন হবে, সেই বিষয়ে নরওয়েতে ব্যাপক প্রশ্ন উঠছে। যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে দেশটির রপ্তানি পণ্যের ওপর ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনবিসিকে ট্রাম্প প্রশাসন বলেছে, নরওয়ে প্রায় দুই ট্রিলিয়ন ডলারের সার্বভৌম তহবিল যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি ক্যাটারপিলার থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় তারা ব্যাপক উদ্বিগ্ন। গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলের সঙ্গে ক্যাটারপিলারের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ওই বিনিয়োগ প্রত্যাহার করেছে নরওয়ে সার্বভৌম তহবিল।

গত ৩ অক্টোবর ব্লুমবার্গকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসপেন বার্থ আইদ বলেছিলেন, নোবেল শান্তি পুরস্কারের সিদ্ধান্তে সরকারের কোনও ভূমিকা নেই। এটি সম্পূর্ণ নোবেল কমিটির এখতিয়ারে। মনে রাখা জরুরি, এটি একটি স্বাধীন কমিটি।

সূত্র: আল-জাজিরা, ফক্স নিউজ, ব্লুমবার্গ, সিএনবিসি।