
সম্পর্কের উষ্ণতায় নতুন অধ্যায় সূচনা করে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের কাছে অত্যাধুনিক মাঝারি পাল্লার আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র এআইএম-১২০ উন্নত সংস্করণ বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ মন্ত্রণালয়—যা আগে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় নামে পরিচিত ছিল—এক সরকারি ঘোষণায় ইসলামাবাদকে এই ক্ষেপণাস্ত্রের নতুন ক্রেতাদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে।
বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে এনডিটিভি।
এই অনুমোদন আসে কয়েক সপ্তাহ পর, যখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে হোয়াইট হাউসে স্বাগত জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
চুক্তির বিবরণ
যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রে-থিয়ন একটি পূর্ববর্তী প্রতিরক্ষা চুক্তির সংশোধিত সংস্করণে ৪১ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত বরাদ্দ পেয়েছে। এর আওতায় ক্ষেপণাস্ত্রের সি–৮ এবং ডি–৩ মডেল তৈরি করা হবে।
নতুন এই সংশোধিত চুক্তিতে পাকিস্তানকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, ফলে পুরো প্রকল্পের মূল্য দাঁড়িয়েছে প্রায় দুই দশমিক পাঁচ এক বিলিয়ন ডলার। উৎপাদন কাজ শেষ হওয়ার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ২০৩০ সালের মে মাস পর্যন্ত।
চুক্তির আওতায় পাকিস্তান ছাড়াও যুক্তরাজ্য, পোল্যান্ড, জার্মানি, ফিনল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, কাতার, সৌদি আরব, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ইসরাইল, তুরস্কসহ ৩০টিরও বেশি দেশ রয়েছে।
ভারতের জন্য অর্থ ও তাৎপর্য
কতগুলো ক্ষেপণাস্ত্র পাকিস্তান পেতে যাচ্ছে তা এখনো স্পষ্ট নয়, তবে সামরিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এই অনুমোদন পাকিস্তান বিমানবাহিনীর এফ–১৬ যুদ্ধবিমানের আধুনিকীকরণের ইঙ্গিত বহন করছে।
এই ক্ষেপণাস্ত্র শুধুমাত্র এফ–১৬ যুদ্ধবিমানে ব্যবহারযোগ্য—যা পাকিস্তান বিমানবাহিনীর মূল আকাশযুদ্ধ সক্ষমতা নির্ধারণ করে। পাকিস্তানের সংবাদপত্র এক্সপ্রেস ট্রিবিউন জানিয়েছে, ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারতীয় বিমানবাহিনীর মিগ–২১ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করতে পাকিস্তান এই ক্ষেপণাস্ত্রই ব্যবহার করেছিল।
ক্ষেপণাস্ত্র সম্পর্কে বিস্তারিত
প্রতিরক্ষা বিষয়ক বিশ্লেষণী ওয়েবসাইট কুওয়া জানিয়েছে, এআইএম–১২০ সি–৮ সংস্করণটি যুক্তরাষ্ট্রের মূল ডি–শ্রেণির রপ্তানি সংস্করণ। পাকিস্তান এর আগের সি–৫ সংস্করণ পরিচালনা করছে, যা ২০১০ সালে তাদের নতুন ব্লক–৫২ এফ–১৬ যুদ্ধবিমানের সঙ্গে সরবরাহ করা হয়েছিল।
এআইএম–১২০ ক্ষেপণাস্ত্র বিশ্বের অন্যতম কার্যকর দীর্ঘপাল্লার আকাশযুদ্ধ অস্ত্র। এর বিশেষত্ব হলো ‘লক্ষ্যে ছুড়ে ভুলে যাও’ বা ফায়ার অ্যান্ড ফরগেট প্রযুক্তি—যার ফলে এটি পাইলটের নিরবচ্ছিন্ন নির্দেশনা ছাড়াই নিজস্ব রাডার ব্যবস্থার মাধ্যমে দীর্ঘ দূরত্বে লক্ষ্য শনাক্ত ও আঘাত হানতে সক্ষম।
পাকিস্তান–যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের পটভূমি
সম্প্রতি পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক উন্নতির ইঙ্গিত স্পষ্ট হচ্ছে, বিশেষ করে গত মে মাসে ভারত–পাকিস্তানের চার দিনের সীমান্তযুদ্ধের পর। পাকিস্তান প্রকাশ্যে জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি আনার ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ভূমিকা ছিল মুখ্য এবং ইসলামাবাদ এমনকি তাঁর নাম নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্যও প্রস্তাব করেছে।
অন্যদিকে ভারত দাবি করে, যুদ্ধবিরতির সমঝোতা হয়েছিল দুই দেশের সামরিক পরিচালকদের (ডিজিএমও) সরাসরি আলোচনার মাধ্যমে, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতা ছাড়াই।
বিশ্লেষণ ও প্রতিক্রিয়া
ওয়াশিংটন থেকে ইসলামাবাদের উদ্দেশে এই ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ দক্ষিণ এশিয়ার কৌশলগত ভারসাম্যে নতুন প্রশ্ন তুলেছে। ভারতের প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এতে পাকিস্তানের এফ–১৬ যুদ্ধবিমানের আকাশযুদ্ধ সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পাবে, যা নিয়ন্ত্রণরেখা এলাকায় শক্তির ভারসাম্য নড়বড়ে করতে পারে।
যদিও যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, এই অস্ত্র বিক্রি ‘আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ক্ষুণ্ন করবে না,’ তবু বাস্তবে এটি দিল্লি–ওয়াশিংটন সম্পর্কের সূক্ষ্ম ভারসাম্যে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।
পাকিস্তানের পক্ষে এটি কেবল সামরিক শক্তি বাড়ানোর পদক্ষেপ নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের কূটনৈতিক ঘনিষ্ঠতারও এক গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত। ভারতের জন্য বার্তাটি স্পষ্ট—দক্ষিণ এশিয়ায় ভূরাজনৈতিক মিত্রতার সমীকরণ দ্রুত বদলে যাচ্ছে।