Image description

দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল নোবোয়াকে হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে। মঙ্গলবার দেশটির একদল বিক্ষোভকারী জনতা প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েলের গাড়ি লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ করেছেন। তবে তিনি অক্ষত রয়েছেন বলে দেশটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

ইকুয়েডরের একজন মন্ত্রী গাড়িবহরে হামলার এই ঘটনাকে প্রেসিডেন্টের ওপর হত্যাচেষ্টা বলে অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেছেন, প্রেসিডেন্টের গাড়িতে গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে। দেশটির পরিবেশ ও জ্বালানি মন্ত্রী ইনেস মানসানো সরকারের কাছে প্রেসিডেন্টের ওপর হত্যাচেষ্টার আনুষ্ঠানিক প্রতিবেদন দাখিল করেছেন।

তিনি বলেন, মঙ্গলবার অন্তত ৫০০ বিক্ষোভকারী প্রেসিডেন্টের গাড়িবহর ঘিরে ধরে হামলা চালিয়েছে। এ সময় প্রেসিডেন্টকে বহনকারী গাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। পরে সন্তেহভাজন পাঁচ হামলাকারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্টের গাড়িবহর লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ করেন।

দেশটির প্রেসিডেন্টের দপ্তর বলেছে, গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করা হবে। তবে প্রেসিডেন্টের গাড়িতে আসলেই গুলি ছোড়া হয়েছিল কি না, তা নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা যায়নি বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

দেশটিতে জ্বালানি ভর্তুকি প্রত্যাহারের প্রতিবাদে চলমান বিক্ষোভের মাঝে প্রেসিডেন্টের গাড়িবহরে হামলার এই ঘটনা ঘটেছে। আক্রান্ত হওয়ার পর দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় কুয়েঙ্কা শহরে (ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৭৭ কিলোমিটার দূরে) শিক্ষার্থীদের এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে প্রেসিডেন্ট নোবোয়া বলেন, তার সরকার এমন কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই সহ্য করবে না।

তিনি বলেন, ‘‘তোমাদের সঙ্গে এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বাধা দেওয়ার জন্য যারা হামলার চেষ্টা করেছে, তাদের খারাপ কাজের অনুসরণ করো না। নতুন ইকুয়েডরে এ ধরনের হামলা মেনে নেওয়া হবে না। আইনের শাসন সবার জন্য প্রযোজ্য।’’

দেশটির পরিবেশ ও জ্বালানি মন্ত্রী মানসানো বলেন, প্রেসিডেন্টের গাড়িতে গুলি ছোড়া, পাথর নিক্ষেপ, রাষ্ট্রীয় সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি করা—এসবই অপরাধ। আমরা এমন কিছু ঘটতে দেব না।

অন্যদিকে, দেশটির জাতীয় আদিবাসী ফেডারেশন কনাই অভিযোগ করে বলেছে, প্রেসিডেন্ট নোবোয়ার আগমণ উপলক্ষে যারা বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিল, তাদের ওপর ব্যাপক নিপীড়ন-নির্যাতন চালিয়েছে পুলিশ। সংস্থাটি বলেছে, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর ‘নৃশংস অভিযানে’ বয়স্ক নারীসহ বহু মানুষ আহত হয়েছেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে সংস্থাটি বলেছে, ‌‌‘‘আমাদের অন্তত পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে।

• ভর্তুকি প্রত্যাহারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ

ইকুয়েডরে ডিজেলের ওপর থেকে ভর্তুকি প্রত্যাহারের প্রতিবাদে দুই সপ্তাহ আগে দেশটিতে ধর্মঘট ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচি শুরু করে কনাই। সরকারের ভর্তুকি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তে কৃষক ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির অভিযোগে ওই কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়।

গত সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের দিকে জ্বালানির ওপর সরকারের দেওয়া ভর্তুকি প্রত্যাহারের এক নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন প্রেসিডেন্ট নোবোয়া। একই সঙ্গে দেশজুড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কয়েকটি প্রদেশে জরুরি অবস্থা জারি করেন তিনি।

দেশটির সরকার বলছে, ভর্তুকি প্রত্যাহারে বছরে প্রায় ১ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় হবে। এই অর্থ ইতোমধ্যে দেশের ক্ষুদ্র কৃষক ও পরিবহন খাতের শ্রমিকদের মাঝে ক্ষতিপূরণ হিসেবে পুনর্বণ্টন শুরু হয়েছে।

সূত্র: রয়টার্স