
ভারতের কোনো ধরনের সামরিক আগ্রাসন হলে ‘দ্রুত ও বিধ্বংসী প্রতিক্রিয়া’ জানানো হবে—এমন কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী। বুধবার (৮ অক্টোবর) জেনারেল সদর দপ্তরে (জিএইচকিউ) অনুষ্ঠিত ২৭২তম কর্পস কমান্ডারস কনফারেন্সে এই সতর্কবার্তা দেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির।
এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ।
পাকিস্তানের আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক বিবৃতিতে জানায়, সম্মেলনে ভারতের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃত্বের “দায়িত্বহীন ও উসকানিমূলক মন্তব্যে” গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, এসব বক্তব্য ‘রাজনৈতিক ফায়দা লোটার উদ্দেশ্যে যুদ্ধোন্মাদনা উসকে দেওয়ার ধারাবাহিক প্রচেষ্টা।’
আইএসপিআর জানায়, ‘ভারতের যেকোনো আগ্রাসনের জবাবে পাকিস্তান দ্রুত, দৃঢ় ও ধ্বংসাত্মক প্রতিক্রিয়া দেখাবে—যাতে ভৌগোলিক অবস্থান থেকে ভারতের যে আপাত নিরাপত্তাবোধ সৃষ্টি হয়েছে, তা সম্পূর্ণভাবে ভেঙে দেওয়া হবে। যে কোনো কল্পিত ‘‘নতুন স্বাভাবিকতা’’র জবাবে পাকিস্তান তৈরি করবে নতুন বাস্তবতা—দ্রুত প্রতিশোধমূলক প্রতিক্রিয়ার।’
সভায় চলমান সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান, জাতীয় নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং সেনাবাহিনীর সামগ্রিক প্রস্তুতি পর্যালোচনা করা হয়। অংশগ্রহণকারীরা ভারত-সমর্থিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী যেমন ‘ফিতনা আল-খারিজ’ ও ‘ফিতনা আল-হিন্দুস্তান’ নির্মূলের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘রাজনৈতিক মদদপুষ্ট সন্ত্রাস ও অপরাধচক্রের যে বিদ্যমান যোগসূত্র রাষ্ট্র ও জনগণের নিরাপত্তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে, তা আর চলতে দেওয়া হবে না—যে পরিস্থিতিই আসুক না কেন।’
এই মন্তব্যগুলো এসেছে এমন এক সময়, যখন ভারতের সামরিক কর্মকর্তারা সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পাকিস্তানবিরোধী মন্তব্য বাড়িয়ে তুলেছেন।
গত ৩ অক্টোবর ভারতীয় বিমানবাহিনীর প্রধান অমর প্রীত সিং দাবি করেন, মে মাসের চার দিনের সশস্ত্র সংঘাতে ভারত পাকিস্তানের পাঁচটি যুদ্ধবিমান—এফ-১৬ ও জেএফ-১৭ ধ্বংস করেছে। তবে তিনি এর কোনো প্রমাণ দেননি।
মে মাসের সেই সংঘর্ষ, যা কয়েক দশকের মধ্যে দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশীর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ, শুরু হয় কাশ্মীরের পাহালগাম এলাকায় পর্যটকদের ওপর এক হামলা থেকে। ভারত দাবি করে, এ হামলার পেছনে ছিল পাকিস্তান-সমর্থিত জঙ্গিগোষ্ঠী।
এরপর ভারত তিন দিন ধরে পাকিস্তানের ভেতরে নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের ওপর বিমান হামলা চালায়। জবাবে পাকিস্তান সেনাবাহিনী প্রতিরক্ষামূলক অভিযান ‘বুনইয়ান-উম-মারসুস’ চালিয়ে ভারতীয় আগ্রাসনের জবাব দেয়। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, অভিযানে ভারতের ছয়টি যুদ্ধবিমান—যার মধ্যে তিনটি ছিল রাফায়েল—এবং বহু ড্রোন গুলি করে নামানো হয়। ৮৭ ঘণ্টা পর, ১০ মে, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে সংঘর্ষের অবসান ঘটে।
পাকিস্তান-সৌদি প্রতিরক্ষা চুক্তি
বুধবারের সম্মেলনে সম্প্রতি সম্পাদিত পাকিস্তান–সৌদি আরব কৌশলগত পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তিকে স্বাগত জানানো হয়। সেনাবাহিনী জানায়, এটি আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বহুমাত্রিক সহযোগিতা বৃদ্ধির এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই চুক্তি উভয় দেশের অভিন্ন মূল্যবোধ, পারস্পরিক সম্মান ও শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি যৌথ অঙ্গীকারের প্রতিফলন।’
কনফারেন্সে কাশ্মীর ও ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি অবিচল সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করা হয়। পাকিস্তান জানায়, তারা জাতিসংঘের প্রস্তাব অনুযায়ী কাশ্মিরিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের পক্ষে রয়েছে এবং ফিলিস্তিন ইস্যুতে ১৯৬৭ সালের সীমারেখার ওপর ভিত্তি করে আল কুদস আল শরিফকে রাজধানী রেখে দুই-রাষ্ট্র সমাধানের পক্ষে অবস্থান বজায় রাখবে।
গাজায় তাৎক্ষণিক অস্ত্রবিরতি ও মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর আহ্বান জানিয়ে সম্মেলনে ফিলিস্তিনিদের ন্যায্য অধিকারের প্রতি পাকিস্তানের অঙ্গীকারও পুনর্ব্যক্ত করা হয়।
শেষ বক্তব্যে সেনাপ্রধান আসিম মুনির সৈন্যদের ধৈর্য, উদ্ভাবনী ক্ষমতা ও শৃঙ্খলার প্রশংসা করেন এবং যেকোনো প্রচলিত বা হাইব্রিড হুমকির মোকাবিলায় সর্বোচ্চ প্রস্তুতি ধরে রাখার নির্দেশ দেন।