Image description

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মিদের মুক্তি নিয়ে আলোচনায় বসতে যাচ্ছে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ও ইসরায়েল। আলোচনা শুরু আগে গতকাল সোমবার (৫ অক্টোবর) কয়েকটি শর্ত দিয়েছে হামাস, যা যুদ্ধবিরতির পূর্বশর্ত হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। সৌদি আরবভিত্তিক টিভি চ্যানেল ‘আশরাক’ ও ‘আল-আরাবিয়া’ এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।

হামাসের পক্ষ থেকে দেওয়া অন্যতম প্রধান শর্ত হলো পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতি। তারা দাবি করেছে, গত জানুয়ারির যুদ্ধবিরতির সময় ইসরায়েলি বাহিনী গাজার যেসব অবস্থানে ছিল, সেখানে ফিরিয়ে নিতে হবে। এর মানে হচ্ছে, গাজার ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলগুলো থেকে ইসরায়েলি সেনাদের সম্পূর্ণরূপে সরে যেতে হবে। হামাস মনে করে, সেনা প্রত্যাহার ছাড়া যুদ্ধবিরতির বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।

আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হচ্ছে, আলোচনা চলাকালে গাজা অঞ্চলে প্রতিদিন কমপক্ষে ১০ ঘণ্টা ইসরায়েলের বিমান ও ড্রোন হামলা বন্ধ রাখতে হবে। এছাড়া, যেদিন জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হবে, সেদিন এই সময়সীমা ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত বাড়াতে হবে। হামাস বলেছে, আলোচনা যতদিন চলবে, ততদিন ইসরায়েলকে এই শর্তগুলো মেনে চলতে হবে।

এছাড়া হামাসের একটি সূত্র জানিয়েছে, গাজার বিভিন্ন স্থানে তারা ইসরায়েলি বন্দিদের মরদেহ সংগ্রহ করছে। এসব মরদেহ চিহ্নিত ও হস্তান্তরের জন্য সময় প্রয়োজন, এবং এই কাজ নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে হলে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে বিমান হামলা বন্ধ রাখা আবশ্যক। হামাস মনে করে, এই মানবিক কার্যক্রমে বাধা দিলে আলোচনা ব্যাহত হতে পারে। আল-আরাবিয়ার খবরে আরও বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র হামাসকে আশ্বস্ত করেছে যে, আলোচনার সময় ইসরায়েল নতুন করে হামলা শুরু করবে না এবং গাজা থেকে তাদের সেনারা সরে যাবে।

হামাস এই যুদ্ধবিরতিতে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি তুলে ধরেছে, সেটি হলো দীর্ঘদিন ধরে কারাবন্দি থাকা তাদের শীর্ষ নেতাদের মুক্তি। এর মধ্যে আছেন— মারওয়ান বারঘোতি, আহমেদ সাদাত, ইব্রাহিম হামেদ, হাসান সালেমেহ এবং আব্বাস সায়েদের মতো গুরুত্বপূর্ণ নেতারা। পূর্ববর্তী যুদ্ধবিরতিতে ইসরায়েল এসব নেতাকে মুক্তি দিতে অস্বীকৃতি জানায়। কিন্তু হামাস এবার স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, ‘এই নেতাদের মুক্তির জন্য এটিই তাদের শেষ সুযোগ।’

এদিকে, হামাসের একজন নেতা ইজ আল-দিন আল-হাদাদ ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে জানিয়েছেন, তারা রকেটের মতো আক্রমণাত্মক অস্ত্র সমর্পণ করতে প্রস্তুত। তবে নিজেদের আত্মরক্ষার স্বার্থে হালকা ও প্রতিরক্ষামূলক অস্ত্র— যেমন রাইফেল— নিজেদের কাছে রাখতে চায় হামাস। এর মাধ্যমে তারা বুঝিয়ে দিতে চায় যে, হামাস আলোচনার মাধ্যমে সমাধান চাইলেও, আত্মরক্ষার প্রস্তুতি ত্যাগ করবে না।

সংলাপে হামাসের এই অবস্থান স্পষ্ট করে যে, তারা শুধু অস্ত্রবিরতিই নয়, বরং একটি বাস্তবসম্মত শান্তি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গাজায় মানুষের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে চায়। হামাস জানিয়েছে, যতক্ষণ পর্যন্ত আলোচনার পরিবেশ সুরক্ষিত থাকবে এবং ইসরায়েল হামলা বন্ধ রাখবে, ততক্ষণ তারাও পাল্টা হামলা বন্ধ রাখবে। তবে এসব শর্ত মানা না হলে যুদ্ধবিরতির কোনো ফলপ্রসূ অগ্রগতি হবে না বলেও ইঙ্গিত দিয়েছে তারা।