
তুচ্ছ ঘটনায় বারবার উত্তপ্ত হচ্ছে পাহাড়। এবারও অদৃশ্য ইশারায় খাগড়াছড়িতে বাঙালি-পাহাড়ি সংঘাত হয়েছে। প্রাণ ঝরেছে তিনজনের। সেনা-বিজিবিসহ আহতের সংখ্যা অর্ধশতাধিক। এখনও খাগড়াছড়ি সদর, পৌরসভা ও গুইমারা উপজেলায় বহাল আছে ১৪৪ ধারা। তবে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত অবরোধ স্থগিত করেছে আন্দোলনকারীরা। কিছুটা স্বাভাবিক হতে শুরু হয়েছে জনজীবন। খাগড়াছড়িতে সরেজমিনে অবস্থান করে পাওয়া গিয়েছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো বলছে, বাঙালি-পাহাড়ি সংঘাতের পেছনে রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধি রয়েছে। পার্বত্য অঞ্চলকে কেন্দ্র করে রয়েছে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসা। আগামী ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে করে এই পাহাড়ি অঞ্চলে অস্ত্র ব্যবসার রাজত্ব কারা করবে সেই হিসাব কষা হচ্ছে। আগামী নির্বাচন এবং পূজাকে টার্গেট করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্যই উদ্ভূত পরিস্থিতি তৈরি বলে দাবি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর। ইতোমধ্যে মেডিকেলে প্রতিবেদনে প্রমাণ হয়েছে, পাহাড়ে শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের ঘটনাটি সঠিক ছিলো না। উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত সৃষ্ট ঘটনার সাথে শুধু দেশীয় রাজনীতি নয়, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর স্বার্থসিদ্ধ সম্পৃক্ত রয়েছে বলেও প্রশাসনিক সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছেন।
গত তিনদিন ধরে খাগড়াছড়ি সদরের চেঙ্গি স্কয়ার, শাপলা চত্বর, আদালত চত্বর , মুক্তমঞ্চ, খাগড়াছড়ি বাজার, মাটিরাঙ্গা বাজার, গুইমারা বাজার, সিন্দুকছড়ি, বুদংপাড়া, বাইল্যাছড়ি, মাটিরাঙ্গা রসুলপুর, আলুটিলা পর্যটন কেন্দ্র এলাকা, সিন্দুকছড়ি, নাকাপা, চাষী নগর, পাতাছড়া, জালিয়াপাড়ার বিভিন্ন স্থানীয় নাগরিকদের সাথে সরেজমিনে কথা বলে জানা গেছে, মৌলিকভাবে বাঙালি, পাহাড়ি, আদিবাসী, উপজাতি কারো সঙ্গে কারো কোনো বিবাদ যেই। সবাই অলিতেগলিতে ছোট ছোট দোকানে একসাথে বসে আড্ডা দিচ্ছে, গল্প করছে চা খাচ্ছে। উত্তপ্ত পরিস্থিতি কবে শান্ত হবে সেই খবর জানার চেষ্টা করছে। রাজনৈতিক দলগুলোর স্বার্থ আদায় গড়ে ওঠা বিভিন্ন সংগঠনগুলো ভূমিকার দিকে নজর রাখছে।
ছোট ছোট দোকানগুলোতে দলবেঁধে আড্ডায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে পাহাড়ের আধিপত্য কার হাতে থাকবে, সেগুলোর জন্যই শক্তি প্রদর্শনের বার্তা দেওয়া হচ্ছে। পাহাড় থেকে সেনাবাহিনী-বিজিবির ওপর অবৈধ ভারী অস্ত্র ব্যবহার করে কেন গুলি চালানো হয়েছে, আবার কেনইবা পাহাড়িরা বাঙালিদের দোকান বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছে তার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র হিসাব কষা হচ্ছে।
সামগ্রিক বিষয় নিয়ে সাক্ষাতে কথা হয় একটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে। তিনি পার্বত্য অঞ্চলে দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি দায়িত্ব পালন করছেন। নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক হয়ে তিনি পাহাড়ের আদ্যপান্ত বিষয় নিয়ে জনকণ্ঠকে চাঞ্চল্যকর অনেক তথ্য জানিয়েছেন। বললেন, পাহাড়ে যারা আদিবাসী রয়েছে, উপজাতি রয়েছে, বাঙালি জাতি রয়েছে বা আরও বিভিন্ন জাতের মানুষ রয়েছে মৌলিকভাবে তাদের নিজেদের মধ্যে কোনো সংঘাত নেই। বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর স্বার্থসিদ্ধি, এবং পার্শ্ববর্তী ভারত-মিয়ানমার এবং বিশ্বের আরও কিছু অস্ত্র ব্যবসার সাথে জড়িত দেশগুলোর প্রেসক্রিপশনে পাহাড়ে বারবার সংঘর্ষ লাগে। আর এগুলো বিশেষভাবে তৈরি হয় জাতীয় নির্বাচন, উপজেলা নির্বাচনসহ স্থানীয় নির্বাচনের পূর্বে এবং পূজার সময়। দীর্ঘ সময় পাহাড়ি অঞ্চলে এককভাবে দাপট ছিলো ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগের। পাহাড়কে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতায় গড়ে ওঠে বিশাল অস্ত্রের বাজার। এবার ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তার কিছুটা পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই উদ্দেশ্যে সম্প্রতি খাগড়াছড়িতে সেনাবাহিনীর ওপর হামলা এবং পাহাড়ি-বাঙালি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। হামলার ইন্ধনের পিছনে, অস্ত্র দিয়ে সহযোগিতার পিছনে রাজনৈতিক বড় প্রেসক্রিপশন যুক্ত হয়েছে।
সেই বাহিনীটির প্রধান আরও বলছেন, পার্বত্য অঞ্চলে সেনাবাহিনী যদি সামনে না থাকে, পুলিশ, আনসার এবং বিজিবির লড়াই করা অনেক কষ্ট হয়ে যাবে। এখনও দুর্গম পাহাড়ি পথে দুর্গমতার কারণে লাগাতার প্যাট্রোলিংয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। এলাকা দুর্গম হওয়ার কারণে তাদের অগোচরে পাহাড়ে অস্ত্রের কারখানা গড়ে উঠছে। কিছু কিছু সময় যখন অস্ত্রসহ কাউকে আটক করা হয় তখন দেখা যায় তাদের হাতে ভারতীয়, চাইনিজ, ইতালিয়ান, কোরিয়ান ও যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি অস্ত্র পাওয়া যায়। অবাক করার বিষয়, যাদের আটক করা হয় তাদের অধিকাংশই থাকে বিদেশি নাগরিক। তারা কীভাবে বাংলাদেশে আসে, আর তাদের হাতে কীভাবে অস্ত্র এসেছে সেই কারণগুলোর উত্তর অনেক সময় অজানা থাকে। রাজনৈতিক নানা বাধা-বিপত্তির কারণে সেগুলোর সামনে আনা যায় না।
সেনা, বিজিবি এবং গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের বড় অংশে ঘিরে অস্ত্রের বাজার রয়েছে। গভীর রাতে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয় বিভিন্ন গোষ্ঠীর সদস্যদের। পাহাড়ে অধিকারের আন্দোলনে থাকা পাঁচটি সংগঠনের হাতে হাজার হাজার আধুনিক মরণাস্ত্র রয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে এলএমজি, এসএমজি, একে৪৭ রাইফেল, ৭.৬২ মি.মি. রাইফেল, এম-১৬ রাইফেল, জি-৩ রাইফেল, ০.২২ রাইফেল, স্নাইপার রাইফেল, পিস্তল, মর্টার, দেশীয় পিস্তল, দেশীয় বন্দুক, হ্যান্ড গ্রেনেড ও রকেট লাউঞ্চারসহ আধুনিক সব আগ্নেয়াস্ত্র। পাঁচটি পাহাড়ের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি জায়গায় গভীর রাত্রে অস্ত্রের কোড বসানো হয় বলেও দাবি তোলা হচ্ছে। বিশেষ ইন্টারনেটের ব্যবস্থায় পাহাড়ে সেই অস্ত্রের কোড বসানো হয়। যেগুলো চট্টগ্রাম কক্সবাজার এবং তিন পার্বত্য অঞ্চলের গোপন সীমানয় বেচা বিক্রি চলে। তাদের নিরাপত্তায় সুরক্ষায় থাকে রাজনৈতিক ছত্রছায়া এবং প্রশাসনের সহযোগিতা।
গোয়েন্দা সংস্থার নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো বলছে, দীর্ঘ দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে আওয়ামী লীগের বড় একটি সিন্ডিকেট এই অস্ত্র ব্যবসার সাথে জড়িত। যারা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং পার্বত্য অঞ্চলে প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করত। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের পতনের পর সেই অস্ত্র ব্যবসায়ীদের বড় একটি অংশ ইউপিডিএফ অধ্যুষিত এলাকায় অবস্থান করছে। তারা ইচ্ছে করলে দেশের বাহিরে পালিয়ে যেতে পারত। কিন্তু তারা দেশের বাইরে না গিয়ে পাহাড়ে ইউপিডিএফ এলাকায় অবস্থান করছে। তাদের ইন্দনে আগামী ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে পাহাড়ে আরও বড় ধরনের সংঘাত-সহিংসতার সম্ভাবনা রয়েছে। পাহাড়ে পালিয়ে থাকা আওয়ামী লীগের বড় অংশটি বর্তমানে যে রাজনৈতিক দলগুলো ভালো অবস্থায় রয়েছে তাদের সাথে সমঝোতা করে অস্ত্র ব্যবসা অব্যাহত রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
গত একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগেও সেখানে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে দুইজন নিহত হওয়ার খবর রয়েছে। স্থানীয়রা মনে করেন, পাহাড়ের মানুষের ভোটাধিকার এখন আর তাদের মাঝে নেই। তারা চাইলে কোনো দলের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবে না। অস্ত্রধারীরা যেখানে ভোট দিতে বলবে সেখানেই তাদেরকে ভোট দিতে হবে। তাই এখন থেকে পাহাড় কাদের অধীনে নিয়ন্ত্রণে থাকবে সেগুলো ছোট ছোট ঘটনার মাধ্যমে স্পষ্ট করা হচ্ছে শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে।
বিশাল বিস্তৃত সীমানাজুড়ে ভারত-মিয়ানমারের সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর শক্ত অবস্থান রয়েছে। বাংলাদেশ সরকার ইচ্ছা করলেই সেটা এখনই নির্মূল করতে পারবে না। কথিত শান্তি চুক্তির মাধ্যমে অনেক জটিলতায় পাহাড়ের মধ্যে রয়ে গেছে বলে সংশ্লিষ্ট বিশিষ্ট নাগরিকরা মনে করছেন। পাহাড়িরা উপজাতি কোটার মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি, সরকারি চাকরিসহ গুরুত্বপূর্ণ সকল সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করছেন। কিন্তু বাংলাদেশের নাগরিকরা ইচ্ছে করলেই পাহাড়ে গিয়ে কিছু করতে পারবে না। পার্বত্য অঞ্চলে বিশাল এলাকা জুড়ে ক্ষুদ্র সংখ্যক নাগরিকের মধ্যে দেশীয় এবং রাজনৈতিক অনেক হিসাব-নিকাশ জড়িত।
সর্বশেষ ২০২২ সালের জনশুমারির প্রাথমিক প্রতিবেদন মতে, তিন পার্বত্য জেলা তথা খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি এবং বান্দরবান জেলার মোট জনসংখ্যা ১৮ লক্ষ ৪২ হাজার ৮১৫ জন। এর মধ্যে বাঙালি ৯ লক্ষ ২২ হাজার ৫৯৮ (৫০.০৬%) জন এবং অবাঙালি/ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ৯ লক্ষ ২০ হাজার ২১৭ (৪৯.৯৪%) জন। তিন পার্বত্য জেলায় মুসলিম ৮ লক্ষ ২০ হাজার ৪৯৮ (৪৪.৫২%) জন, বৌদ্ধ ৭ লক্ষ ৬৯ হাজার ২৭৯ (৪১.৭৪%) জন, হিন্দু ১ লক্ষ ৬৯ হাজার ৯৬ (৯.১৮%) জন, খ্রিস্টান ৬০ হাজার ২৮ (৩.২৬%) জন এবং অন্যান্য ২৪ হাজার ৩৪ (১.৩০%) জন।
বাংলাদেশের আয়তন ১ লক্ষ ৪৭ হাজার ৫৭০ বর্গ কিলোমিটার, পার্বত্য তিন জেলার মোট আয়তন প্রায় ১৩ হাজার ১৯১ বর্গ কিলোমিটার, যা দেশের মোট আয়তনের ১১.১৯ শতাংশ। অন্যদিকে দেশের মোট জনসংখ্যা যেখানে ১৬ কোটি ৫১ লক্ষ ৫৮ হাজার ৬১৬ জন, সেখানে তিন পার্বত্য জেলায় বসবাস করেন ১৮ লক্ষ ৪২ হাজার ৮১৫ জন, যা দেশের মোট জনসংখ্যার ১.১৬ শতাংশ। অর্থাৎ দেশের ১১.১৯ শতাংশ আয়তনের পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাস করেন মোট জনসংখ্যার ১.১৬ শতাংশ মানুষ।
কথিত শান্তি চুক্তির মাধ্যমে বাঙালিরা পাহাড়ে অনেকভাবে অবহেলিত বলেই দেশীয় সীমানায় ভূ-রাজনৈতিক রাজনৈতিক অনেক জটিলতা তৈরি হয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন।
সম্প্রতি খাগড়াছড়িতে ঘটে যাওয়া সামগ্রিক বিষয় নিয়ে জুম্ম ছাত্র-জনতার ছাত্র প্রতিনিধি কৃপায়ন ত্রিপুরার সঙ্গে কথা জনকণ্ঠকের। তিনি বলেন, যেকোনো ইস্যু নিয়ে পাহাড়কে সবসময় উত্তপ্ত এবং সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি করে রাখার জন্য একটা গোষ্ঠী সব সময় লেগেই থাকে। পাহাড়ি, আদিবাসী, বাঙালি ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে সবসময় ঘটনা তৈরির একটা ষড়যন্ত্র চলছেই। বিশেষ করে নির্বাচন আসলে, পূজা আসলে এ বিষয়গুলো আরও বেড়ে যায়। সম্প্রতি ধর্ষণ নিয়ে খাগড়াছড়ির গুইমারায় যে ঘটনা ঘটেছে তা সম্পর্কে সবাই ইতোমধ্যে অবগত। গত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগেও খাগড়াছড়ি এলাকায় অনেকগুলো ঘটনা ঘটেছে, প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এবারও ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে খাগড়াছড়িতে বড় একটি ঘটনা ঘটে গেল, প্রাণহানি হয়েছে। আপনারা দেখেছেন পূজার এই সময় দিনাজপুরের একটি ছবি নিয়ে গুজব ছড়ানো হয়েছে, মসজিদ ভাঙা হয়েছে। মূলত এখানে কিছুই ঘটেনি। যারা পূজার সময় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এগুলো প্রচার করে মানুষকে ক্ষিপ্ত করে সংঘাত তৈরি করে, তাদের বড় উদ্দেশ্য রয়েছে। পাহাড়ে প্রত্যেকটি ঘটনার পেছনে রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশের বড় অংশ জড়িত থাকে বলেও যোগ করেন তিনি। এবারও খাগড়াছড়িতে ধর্ষণকে কেন্দ্র করে যে ঘটনা ঘটেছে এতে হয়তো যারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে গুজব ছড়িয়েছে তাদের কিছুই হয়নি। এই সংঘাতে বাঙালিদের দোকানপাটসহ অনেক ক্ষতি হয়েছে। একই সঙ্গে পাহাড়িদের প্রাণ গিয়েছে। আমরা এসব ঘটনায় সচেতন হওয়ার জন্য সবাইকে আরো বেশি আহ্বান জানাই।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) খাগড়াছড়ি সভাপতি এ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে পাহাড়ি-বাঙালি মতবিরোধের দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। এই দ্বন্দ্বগুলোর পেছনে আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর কিছু স্বার্থ আছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত-মিয়ানমার তাদের কিছু স্বার্থ রয়েছে। তাছাড়া এই পাহাড়কে কেন্দ্র করে এখানে একটা অস্ত্রের লেনদেন আছে। সারা পৃথিবীতে যে একটা অস্ত্রের বাজার রয়েছে পাহাড়কে কেন্দ্র করে সে বাজারও পার্বত্য অঞ্চলকে কেন্দ্র করে যুক্ত রয়েছে। এখানকার যারা রাজনৈতিক দলগুলো রয়েছে তারা যুগ যুগ ধরে পাহাড়ি-বাঙালি বিভিন্ন গোষ্ঠী নিজেদের প্রয়োজনে ব্যবহার করছে। যারা ক্ষমতা কেন্দ্রিক রাজনীতি করছে, তাদের ইন্দনে অনেক সময় নানা ধরনের ঘটনা তৈরি হয়। এরশাদ সাহেবের আমলে জেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে যে নিয়ম রয়েছে সেটা যদি চলমান থাকতো, তাহলে অনেক ধরনের ঘটনা সংঘাত কমে যেতে বলেও তিনি মনে করেন। এখানকার ইউপিডিএফ যারা করেন তাদের সব সময় নেতিবাচক ভূমিকায় দেখা যায় বলেও তিনি দাবি করেন। সামগ্রিক পার্বত্য অঞ্চলে জটিলতা গুলো সমাধানের জন্য রাজনৈতিক ঐক্য অনেক বেশি প্রয়োজন।
রাজনৈতিক মতবিরোধের সংকট দূরীভূত হলে পাহাড়ের সংকট অনেক কেটে যাবে বলেও তিনি যুক্ত করেন। পাহাড়ের যেকোনো ঘটনায় সরাসরি রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা চোখে না পড়লেও তার পেছনে রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধ যুক্ত থাকে বলেও তিনি জানান। তিনি আরও বলেন, এখানকার প্রশাসনকে সবসময় রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে ব্যবহার করা হয় বলে এখানকার প্রশাসনকে স্বাভাবিকভাবে নিতে পারে না পাহাড়িরা। তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সমাধানের জন্য তাদের ডাকলেও সাড়া পাওয়া যায় না।
সেনাবাহিনীর ২০৩ পদাতিক ব্রিগেড ও খাগড়াছড়ি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাসান মাহমুদ বলেছেন, খাগড়াছড়ির ধর্ষণের ঘটনাকে পুঁজি করে পাহাড়কে অশান্ত করার পরিকল্পনা করেছে ইউপিডিএফ। এর রেশ তিন পার্বত্য জেলায়ও পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি। বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা বৃহৎ পরিকল্পনার অংশ। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ইউপিডিএফ এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছে বলেও তিনি জানান।
তিনি বলেন, তারা (ইউপিডিএফ) সেনাবাহিনীর গাড়িতে হামলা করে তিন সৈনিককে আহত করেছে। তারা বহিরাগত সন্ত্রসীদের জড়ো করেছে, গুলি চালিয়েছে। সেনাবাহিনীর সদস্য ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে। পাহাড়িরা যেভাবে উপর থেকে সেনাবাহিনীদের ওপর গুলি চালিয়েছে, সেনাবাহিনী যদি ধৈর্যের পরিচয় না দিত, তাহলে উভয়পক্ষে অনেক রক্তপাতের মাধ্যমে দেশে নানা ধরনের অঘটন ঘটে যেত।