Image description
 

২০২৫ সালের প্রথম দশ মাসেই ইরানে অন্তত ১,০০০ জনকে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন ইরান হিউম্যান রাইটস (আইএইচআরএনজিও) জানিয়েছে, এ সংখ্যা গত তিন দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। শুধু গত এক সপ্তাহেই ৬৪ জনকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে, যা প্রতিদিন গড়ে নয়জনেরও বেশি।

 

সংগঠনটি বলছে, প্রকাশিত পরিসংখ্যান ন্যূনতম হিসেবে ধরা হয়েছে। প্রকৃত সংখ্যা এর চেয়েও বেশি হতে পারে। কারণ, দেশটিতে স্বচ্ছতার অভাব এবং সংবাদ প্রকাশে কঠোর বিধিনিষেধ রয়েছে।

আইএইচআরএনজিও জানিয়েছে, ইরান মৃত্যুদণ্ডকে রাজনৈতিক দমন-পীড়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। তারা জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশনকে আহ্বান জানিয়েছে, এসব মৃত্যুদণ্ডকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে তদন্ত করার জন্য।

মানবাধিকার সংগঠন ইরান হিউম্যান রাইটস 

সংগঠনটির পরিচালক মাহমুদ আমিরি-মোখাদ্দাম বলেন, ‌‘সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের কারাগারে গণহত্যা শুরু করেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কার্যকর প্রতিক্রিয়া না থাকায় এর ব্যাপ্তি প্রতিদিন বাড়ছে। ভুয়া বিচার প্রক্রিয়ায় নির্বিচারে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা মানবতাবিরোধী অপরাধের শামিল এবং এটি অবশ্যই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আলোচনার শীর্ষে থাকতে হবে।’

কোন অপরাধে বেশি ফাঁসি

আইএইচআরএনজিও’র তথ্য অনুযায়ী: ৫০% মৃত্যুদণ্ড মাদক-সংক্রান্ত অপরাধে, ৪৩% হত্যার দায়ে, ৩% নিরাপত্তা অভিযোগে (বাগি, ইফসাদ-ফিল-আরজ, মহারেবাহ), ৩% ধর্ষণের দায়ে এবং ১% ইসরাইলের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে

 

সব মিলিয়ে ১,০০০ মৃত্যুদণ্ডের মধ্যে মাত্র ১১% আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছে ইরানি কর্তৃপক্ষ। বিশেষ করে মাদক-সংক্রান্ত কোনো মৃত্যুদণ্ড সরকারিভাবে প্রকাশ করা হয়নি।

১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের ৪৬ বছর পরও ইরানের বিপ্লবী আদালতগুলোতে মাদক মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হচ্ছে। এসব আদালতে নিরপেক্ষতা বা ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তা নেই; বরং অনেক সময় নির্যাতন-নির্ভর স্বীকারোক্তি ও আইনজীবীর পর্যাপ্ত সহায়তা ছাড়াই রায় দেওয়া হয়।

আন্তর্জাতিক আদালত ও জাতিসংঘের তদন্তে বলা হয়েছে, এভাবে ভুয়া বিচার প্রক্রিয়ার পর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা—যদি তা সুসংগঠিতভাবে রাজনৈতিক দমননীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়—তাহলে তা মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়।