
নেপালের রাজনীতিতে এক ঐতিহাসিক মোড় এসেছে। বিক্ষোভ-সহিংসতার মুখে পদত্যাগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি। তার পদত্যাগের পর আগামী সরকার নিয়ে নতুন আলোচনায় সরব হয়ে উঠেছে বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেওয়া জেনারেশন-জি।
প্রথমদিকে তারা কাঠমান্ডুর মেয়র বালেন্দ্র শাহকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চেয়েছিল। কিন্তু আন্দোলনকারীদের ডাকে সাড়া দেননি তিনি। তাই এবার বিক্ষোভকারীরা দৃষ্টি ঘুরিয়েছেন অন্যদিকে। মঙ্গলবার রাতে প্রায় পাঁচ হাজার তরুণের অংশগ্রহণে একটি ভার্চুয়াল বৈঠকে তারা দেশের অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কির নাম প্রস্তাব করেন।
একজন বিক্ষোভকারী নেপালি গণমাধ্যমকে বলেছেন—‘বালেন্দ্র শাহ আমাদের আহ্বানে সাড়া দেননি। তাই আমরা অন্য বিকল্প নিয়ে আলোচনা করেছি। বেশিরভাগই সুশীলা কার্কির নামকে সমর্থন দিয়েছেন।’
সুশীলা কার্কির পাশাপাশি আলোচনায় উঠে এসেছে আরও কয়েকজনের নাম। তাদের মধ্যে রয়েছেন— বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের প্রধান কুলমান ঘিসিং, তরুণ রাজনৈতিক মুখ সাগর ঢাকাল ও ধারানের মেয়র হার্কা সামপাং।
এছাড়া, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জনপ্রিয় ইউটিউবার ‘র্যান্ডম নেপালি’-র নামও প্রস্তাব করেন কয়েকজন। তবে তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, অন্যরা দায়িত্ব নিতে রাজি না হলে তবেই তিনি এগোতে প্রস্তুত।
যদিও বিক্ষোভকারীরা সুশীলা কার্কির নাম চূড়ান্তভাবে প্রস্তাব করেছেন, তবে তার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথ এতটা সহজ নয়। তাকে প্রথমে সেনাপ্রধান অশোক রাজ সিগদেলের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। এরপর প্রেসিডেন্টের অনুমতি পেলে তবেই তিনি অন্তর্বর্তী নেতৃত্বে আসতে পারবেন।
এদিকে, কেপি শর্মা অলির পদত্যাগের পর থেকেই দেশজুড়ে সহিংসতা বেড়ে গেছে। ক্ষুব্ধ বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্ট, সুপ্রিম কোর্টসহ একাধিক সরকারি ভবনে আগুন ধরিয়ে দেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বাড়িতেও হামলার ঘটনা ঘটে। এমনকি বিক্ষোভকারীদের দেওয়া আগুনে এক সাবেক প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী প্রাণ হারান। সব মিলিয়ে এ আন্দোলনে এখন পর্যন্ত ২৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
নেপালের তরুণ প্রজন্ম এখন পুরোনো রাজনীতিকে প্রত্যাখ্যান করে নতুন নেতৃত্ব চাইছে। সুশীলা কার্কির নাম সামনে আসা শুধু রাজনৈতিক পরিবর্তন নয়, নারীর ক্ষমতায়নের দিক থেকেও একটি ঐতিহাসিক মোড় ঘোরানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে। আন্দোলনকারীদের এই দাবি প্রমাণ করছে—তারা শুধু সরকার পতন নয়, বরং একটি নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতির সূচনা করতে চায়।