Image description
 

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য আলোচনা ঘিরে সন্দেহজনক এক ইমেইল নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে মার্কিন কর্তৃপক্ষ। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের খবরে বলা হয়েছে, একটি ভুয়া ইমেইলের মাধ্যমে ম্যালওয়্যার ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল, যার লক্ষ্য ছিল হোয়াইট হাউসের কাছে পাঠানো সুপারিশ ও বাণিজ্য কৌশলগুলো সম্পর্কে চীনকে ধারণা দেওয়া।

 

জানা গেছে, জুলাই মাসে এই ম্যালওয়্যারযুক্ত ইমেইলটি রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান জন মুলেনার নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন মার্কিন বাণিজ্য সংস্থা, আইন ফার্ম ও সরকারি সংস্থার কাছে পাঠানো হয়। সাইবার বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এই হামলার পেছনে চীনা গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হ্যাকার গ্রুপ APT41-এর হাত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

চীনের কড়া সমালোচক মুলেনার যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের কৌশলগত প্রতিযোগিতা বিষয়ক কংগ্রেসীয় কমিটির চেয়ারম্যান। এই কমিটি চীনের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার উপর যেসব হুমকি তৈরি হয়েছে, সেগুলো নিয়ে কাজ করে।

 

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই ইমেইলটি পাঠানো হয়েছিল এমন একটি সময়ে, যখন সুইডেনে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য আলোচনা চলছিল। ওই আলোচনার ফলেই দুই দেশ পরবর্তী নভেম্বর পর্যন্ত শুল্ক আরোপে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নেয়—যেখানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং একটি এশীয় অর্থনৈতিক সম্মেলনে বৈঠকের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল।

 

"আপনার মতামত আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ"—এই বক্তব্য দিয়ে পাঠানো ইমেইলটিতে একটি প্রস্তাবিত আইনের খসড়া ছিল। কিন্তু ইমেইলের সঙ্গে থাকা সংযুক্ত ফাইলটি খুললেই হ্যাকাররা ভুক্তভোগী প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার ও তথ্য ব্যবস্থায় প্রবেশ করতে পারত।

তবে এই সাইবার হামলা কতটা সফল হয়েছে, তা এখনও নিশ্চিত নয় বলে জানিয়েছে জার্নাল।

চীনের ওয়াশিংটন দূতাবাস এক বিবৃতিতে জানায়, তারা এই হামলার বিস্তারিত সম্পর্কে জানে না। “সাইবার হামলা সব দেশের জন্যই একটি সাধারণ হুমকি এবং এগুলোর উৎস নির্ধারণ কঠিন,” বলে মন্তব্য করে তারা। আরও জানায়, “চীন সব ধরনের সাইবার হামলা ও সাইবার অপরাধের বিরোধিতা করে এবং উপযুক্ত প্রমাণ ছাড়া অন্যদের দোষারোপ করতেও আমরা কঠোরভাবে বিরোধিতা করি।”

এই ম্যালওয়্যার ইমেইলটি প্রথম নজরে আসে যখন মুলেনারের কমিটির কর্মীরা এ সংক্রান্ত অদ্ভুত কিছু প্রশ্ন পেতে শুরু করেন। তখনই বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়।

ইতিমধ্যে মার্কিন ক্যাপিটল পুলিশ এবং এফবিআই বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। এফবিআই জানিয়েছে, তারা "অবস্থার ব্যাপারে অবগত এবং দোষীদের চিহ্নিত করতে প্রয়োজনীয় সংস্থাগুলোর সঙ্গে কাজ করছে।"

মুলেনার এক বিবৃতিতে বলেন, “এই ঘটনা প্রমাণ করে, চীনা সাইবার হামলাগুলো কেবল আমাদের তথ্য চুরি করতেই নয়, বরং আমাদের কৌশলগত পরিকল্পনাকে প্রভাবিত করতেও চালানো হয়। তবে আমরা কোনো ধরনের হুমকিতে ভীত হবো না।”

এই ঘটনার মধ্য দিয়ে আরও একবার প্রকাশ পেলো, বিশ্ব রাজনীতিতে সাইবার নিরাপত্তা ও তথ্য যুদ্ধ কতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।