
ইন্দোনেশিয়ার রাজপথে এখন প্রতিবাদী ঢেউ। আইন প্রণেতাদের অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধা এবং পুলিশের বর্বরতার প্রতিবাদে হাজারো নারী গোলাপি রঙের পোশাক পরে ঝাড়ু হাতে বিক্ষোভে নেমেছেন। প্রতীকী এই ঝাড়ুর মাধ্যমে তারা রাষ্ট্র থেকে ময়লা-আবর্জনা ও দমন-পীড়ন ঝেটিয়ে বিদায় করার বার্তা দিচ্ছেন।
ইন্দোনেশিয়ার সাম্প্রতিক এই বিক্ষোভ এমন এক সময়ে শুরু হয়েছে যখন দেশটির প্রেসিডেন্ট প্রাবো সুবিয়ান্ত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসান ও জাপানের আত্মসমর্পণের ৮০তম বার্ষিকী উদযাপনে চীনে একটি কুচকাওয়াজে অংশ নিচ্ছেন।
বিক্ষোভের কারণ ও স্লোগান
বিক্ষোভকারীদের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল— 'পুলিশ সংস্কার করো', 'তোমার মিষ্টি প্রতিশ্রুতিতে ডায়াবেটিস হচ্ছে'—এরকম নানা স্লোগান। বিক্ষোবের আয়োজক 'দ্যা অ্যালায়েন্স অফ ইন্দোনেশিয়ান ওমেন' জানিয়েছে, রাষ্ট্রের ময়লা-আবর্জনা এবং নিরাপত্তা বাহিনীর দমন-পীড়নকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করার প্রতীক হিসেবে তারা ঝাড়ু ব্যবহার করছেন।
গত সপ্তাহে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভ ইতিমধ্যেই বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশটিকে নাড়িয়ে দিয়েছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল পর্যন্ত এই বিক্ষোভে ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। কোথাও কোথাও লুটপাট ও দাঙ্গার ঘটনাও ঘটেছে।
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া প্রতিবাদকারীরা বলছেন, "বিক্ষোভ মূলত শান্তিপূর্ণ হচ্ছে। সরকার যদি এটিকে রাষ্ট্রদ্রোহিতা বলে আখ্যায়িত করে, তাহলে প্রশ্ন তো উঠবেই।" প্রেসিডেন্ট প্রাবো এর আগে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন যে সহিংসতা হলে সামরিক বাহিনী ও পুলিশ কঠোর হাতে তা মোকাবিলা করবে। তিনি আরও বলেছিলেন, বিক্ষোভে 'সন্ত্রাসবাদ ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার' চিহ্ন দেখা গেছে।
বিক্ষোভের সূত্রপাত ও বিস্তার
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে জনগণের মধ্যে ক্ষোভ আগে থেকেই ছিল। তবে এই দফায় বিক্ষোভ মূলত ছড়িয়ে পড়ে পার্লামেন্ট সদস্যদের মাসিক ভাতা বাড়ানোর একটি সিদ্ধান্তের কারণে। বর্তমানে ইন্দোনেশিয়ার একজন এমপি প্রতি মাসে ১০ কোটি রুপিয়াহ (প্রায় ৬,১৫০ মার্কিন ডলার) পান, যা দেশের গড় আয়ের চেয়ে ৩০ গুণ বেশি। এই আর্থিক বৈষম্য, দুর্নীতির অভিযোগ এবং সামাজিক অসমতা জনগণের ক্ষোভ আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
রাজধানী জাকার্তায় বিক্ষোভ শুরু হয় গত ২৫ আগস্ট। ২৮ আগস্ট রাতে তা সহিংস রূপ নেয়, যখন পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ২১ বছর বয়সী একজন মোটরসাইকেল চালক পুলিশের গাড়ির নিচে চাপা পড়ে মারা যান। এই ঘটনা জনগণের ক্ষোভকে আরও উসকে দেয়। প্রেসিডেন্ট প্রাবো সুবিয়ান্ত ও পুলিশ প্রধান ক্ষমা চাইলেও বিক্ষোভ পশ্চিম জাভা থেকে শুরু করে বালি ও লম্বকের মতো দ্বীপ এলাকাগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ে।
বিক্ষোভ প্রশমিত করতে প্রেসিডেন্ট প্রাবো রাজনীতিকদের রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা বাতিলের ঘোষণা দিলেও অনেক বিক্ষোভকারী মনে করছেন এটি যথেষ্ট নয়। ২০২৪ সালে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর এটি প্রাবোর জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। নির্বাচনে তরুণ ভোটারদের সমর্থন পেয়েছিলেন তিনি, অথচ এখন সেই তরুণদের উপরই ব্যাপক দমন-নিপীড়ন চালানো হচ্ছে বলে বিভিন্ন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। অনেক বিক্ষোভকারীর মতে, এই আন্দোলন ইন্দোনেশিয়ার সমাজ ও শাসন ব্যবস্থায় একটি বড় পরিবর্তন নিয়ে আসবে।