
ভারতের অর্থনীতিতে নতুন চাপ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের রাশিয়ান তেল কেনার কারণে ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছেন। এর ফলে এখন মোট শুল্কের হার দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশে।
বুধবার থেকে কার্যকর হওয়া এ সিদ্ধান্তের প্রভাব বৃহস্পতিবারই পড়ে ভারতীয় শেয়ার বাজারে। সকালে লেনদেন শুরু হতেই সেনসেক্স সূচক নেমে আসে ৫০৮ পয়েন্ট। একই সময়ে নিফটি সূচক পড়ে যায় ১৫৭ পয়েন্ট। বাজারজুড়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
সেনসেক্সভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে এইচসিএল টেক, এইচডিএফসি ব্যাংক, পাওয়ার গ্রিড, সান ফার্মা ও এনটিপিসির শেয়ারদরে বড় ধস নামে। অন্যদিকে এশিয়ান পেইন্টস, মারুতি, টাইটান ও লার্সেন অ্যান্ড টুবরোর মতো কোম্পানির শেয়ার কিছুটা লাভ করে। তবে সামগ্রিক বাজারের প্রবণতা নেতিবাচক।
বাজার পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্ক ভারতের রপ্তানি খাতের জন্য বড় হুমকি। বিশেষ করে টেক্সটাইল, রত্ন ও গয়না, চামড়াজাত পণ্য এবং কৃষি–প্রক্রিয়াজাত শিল্পের ক্ষতি হবে সবচেয়ে বেশি। এ খাতে রপ্তানি হারাতে পারে কয়েক দশক ধরে তৈরি হওয়া অবস্থান। ধারণা করা হচ্ছে, প্রায় ৩৭ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি ক্ষতি হতে পারে চলতি অর্থবছরে।
ভারতের জন্য আশার দিক হলো দেশীয় প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের আস্থা। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করে বেরিয়ে গেলেও দেশীয় বিনিয়োগকারীরা বিপরীতে ব্যাপক হারে শেয়ার কিনছে। গত মঙ্গলবারই বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিক্রি করেছে প্রায় ৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বেশি শেয়ার, কিন্তু দেশীয় বিনিয়োগকারীরা কিনেছে তার চেয়েও বেশি। এতে বাজার কিছুটা সামলে উঠতে পারলেও সামগ্রিক আস্থার সঙ্কট কাটেনি।
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হবে। এ জন্য বিকল্প বাজার খোঁজার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা ও ইউরোপে রপ্তানি বাড়ানোর উদ্যোগ চলছে। পাশাপাশি রপ্তানিকারকদের জন্য আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
তবে অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, কেবল কূটনৈতিক আলাপই যথেষ্ট নয়। ভারতের রপ্তানি নির্ভর খাতগুলোকে নতুন করে সাজাতে হবে। দেশীয় উৎপাদনে বৈচিত্র্য আনা এবং আঞ্চলিক বাজার বাড়ানোই দীর্ঘমেয়াদে সমাধান হতে পারে। আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক চাপের কারণে বাজার আরও অস্থির থাকবে—এই সতর্কবার্তাও দিয়েছেন তারা।