
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারী বলেছেন, ‘‘বাংলাদেশ থেকে হিন্দুরা ভারতে চলে আসছে নিজেদের স্বার্থে। এর মধ্যে কোনও ধর্মীয় কারণ নেই। বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের ওপর মুসলিমদের অত্যাচারের অভিযোগও মিথ্যা। মুসলমানদের কারণে হিন্দুরা বাংলাদেশ থেকে ভারতে পালিয়ে আসছেন, এটা একদমই সত্যি নয়।’’
বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর নিপীড়নের অভিযোগের বিষয়ে দেশটির সংবাদমাধ্যম আজতক বাংলাকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে একথা বলেন তৃণমূল কংগ্রেসের এই বিধায়ক।
বাংলাদেশে হিন্দুরা ধর্মীয় কারণে নিপীড়নের শিকার হয়েছেন, এমন দাবি প্রত্যাখ্যান করে মনোরঞ্জন ব্যাপারী বলেন, ‘‘মুসলমানের কারণে, ধর্মীয় কারণে, হিন্দুদের ওপর অত্যাচার হয়েছে, তাই তারা চলে আসছে। আপনি একজন লোককে দেখান এমন দাবি করছে। দেখাতে পাবেন না। তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশে হিন্দু বলেই অত্যাচারিত হচ্ছে না। এই যে হাসিনার সরকারের পতন ঘটল, হিন্দু মুসলমান উভয়ই অত্যাচারিত হয়েছে। হিন্দুরা বেশি হয়েছে। কারণ আওয়ামী লীগের সঙ্গে তারা যুক্ত। আওয়ামী লীগের লোকরা এখানে আসছে। পশ্চিমবঙ্গে দেখুন না যত দলীয় খুন খারাবি হয়, তার বেশিরভাগই মুসলমান। অধিকাংশ মুসলমান। তা আমি কি বলবো যে হিন্দুরা মুসলমানদের মেরে দিয়েছে? দলীয় কারণে মারা যাচ্ছে। ওখানে তো আওয়ামী লীগের পক্ষে হিন্দুরা ছিল। ফলে হিন্দুদের ক্ষয়ক্ষতি একটু বেশি হয়েছে। সেটা হিন্দু বলে হয়নি। আওয়ামী লীগ বলে হয়েছে। হিন্দুদের ওপরে, হিন্দু বলে অত্যাচার এইটা হচ্ছে বাজার গরম করার জন্য বলা হচ্ছে। আর কিছু না।’’
এসময় তিনি আরও বলেন, যদি আমি একেবারে একাত্তর সালে থেকেই শুরু করি। একদম বাংলাদেশ। একাত্তরের পরে বাহাত্তর, তিয়াত্তরের আগেও। আজ এত বছর পরে এখন বাংলাদেশ থেকে লোক কেন আসবে? স্বাধীনতার এত বছর পর্যন্ত তুমি ওখানে থাকতে পারলে মুসলমানরা তোমার কোনও ক্ষতি করল না। এখন এত বছর পরে তোমার ক্ষতি করছে। তুমি আর টিকতে পারছ না। পালাতে হচ্ছে। এই দাবির সত্যতা কতটা?’’
তৃণমূল কংগ্রেসের এই বিধায়ক বলেন, ‘‘ওপার বাংলা (বাংলাদেশ) থেকে যারা এসেছে, এক মাস আগে যারা এসেছে, এক বছর আগে যারা আসছে তাদের কথা বলছি না। পুলিশ ধরছে এখন। তোমার কাছে রেশন কার্ড আছে, প্যান কার্ড আছে, ভোটার কার্ড আছে, আধার কার্ড আছে। যেখানে তুমি জমিতে বাস করছ। একটি দলিল আছে, আছে প্রমাণ। সব থেকে বড় কথা তুমি ভোট দিচ্ছ তোমার ভোটে ভারতবর্ষের সরকার নির্বাচিত হচ্ছে। কেউ বলেনি তুমি ভারতবর্ষের নাগরিক না। এটা তুমি তুললে। প্রথম মেট্রোর সামনে হঠাৎ মিটিং ডাকা হল। মতুয়াদের নাগরিকত্ব। তার আগে পর্যন্ত কেউ বলেনি তোমরা ভারতবর্ষের নাগরিক না। তোমাদের দিকে আঙুল তুলে কেউ বলেনি। এরা নিজেরাই বলছে নাগরিকত্ব চাই, আমাদের নাগরিকত্ব নাই।’’
তিনি বলেন, আমাদের খুদিরাবাদে ২০০০ সালের পর থেকে পঁচিশ বছরের মধ্যে অন্তত ষাট থেকে সত্তরটা জনবসতি গড়ে উঠেছে, গ্রাম গড়ে উঠেছে। আপনি গিয়ে দেখুন অর্ধেক লোক বাংলাদেশ থেকে আসা। আর ত্রিশ থেকে চল্লিশ শতাংশ বিহার থেকে আসা। আর ওখানকার স্থানীয় লোক পাঁচ কি দশ শতাংশ হয়ে গেছে। ‘‘২০০০ সালের পর থেকে আমি একবার দেখতে গিয়েছিলাম যে, লোকগুলো বাংলাদেশ থেকে আসছে কেন? শুনলে আপনি অবাক হয়ে যাবেন। একটা জমি চারজনের কাছ থেকে বায়না নিয়েছে। একজন বেচে দিয়ে পালিয়েছে। তিনজনকে ঠকিয়ে বাংলাদেশ থেকে পালিয়েছে। কে কার বউ নিয়ে পালিয়ে আসছে। কে কোথায় অপকর্ম করেছিল? পুলিশ খুঁজছে। বর্ডার পার হয়ে নাম পাল্টে পালিয়ে আসছে। নিম্নবর্ণ পালিয়ে এসে এখানে উচ্চ বর্ণ হয়ে গেছে। এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে তারা আসছে।’’