
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সম্পর্ক ক্রমশ খারাপ হওয়ার প্রেক্ষাপটে, এ বছরের গ্রীষ্মে পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের সঙ্গে তার বৈঠকটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরকে এখন ওয়াশিংটনের সঙ্গে পাকিস্তানের কৌশলগত সম্পর্ক এবং সম্ভবত দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তর রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা নীতিতে অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
জুন মাসের বৈঠকটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রেসিডেন্ট ও পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের মধ্যে প্রথম সাক্ষাৎ। যদিও এটি খুব বেশি শিরোনাম তৈরি করেনি। মুনির কোনো শো-ম্যান নন, কিংবা প্রকাশ্য রাজনীতিকও নন। তিনি একজন ক্যারিয়ার সেনা কর্মকর্তা, যিনি শৃঙ্খলা ও গোপনীয়তার ওপর জোর দেন, জনমতের চেয়ে বরং পেশাদারিত্বে বিশ্বাসী। এসব বৈশিষ্ট্যই তাকে ট্রাম্পের কাছে আদর্শ সঙ্গী করে তোলে, যিনি সাধারণত শক্ত নেতৃত্ব, নিরাপত্তা-কেন্দ্রিক ও গোপনীয় স্বভাবের বিদেশি নেতাদের সঙ্গেই সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন।
২০২২ সাল থেকে মুনির পাকিস্তানের সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, যা দেশের সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ পদ। এ পদ সবসময়ই অত্যন্ত প্রভাবশালী, যেখানে ঘরোয়া রাজনৈতিক সমীকরণ আর বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি বা পাকিস্তানি তালেবানের মতো হুমকির মধ্যে ভারসাম্য রাখতে হয়। আফগানিস্তান ও ইরান থেকে আসা নিরাপত্তা হুমকির মোকাবিলায় মুনির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তবে তার নেতৃত্ব নতুন মাত্রা পায় এপ্রিলের শেষে কাশ্মীরে এক সন্ত্রাসী হামলায় ১৯ জন পর্যটক নিহত হওয়ার পর। মোদি পাকিস্তানকে দায়ী করে পশ্চিম সীমান্তে সামরিক অভিযান চালান।
চার দিনব্যাপী উত্তেজনা দুই দেশকে যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত ট্রাম্প হস্তক্ষেপ করে যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করেন। পাকিস্তান প্রকাশ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে ধন্যবাদ জানালেও মোদি মার্কিন প্রেসিডেন্টের মধ্যস্থতা অস্বীকার করেন। ঘটনাটি ট্রাম্প-মোদি সম্পর্কে আরো শীতলতা আনে এবং মুনিরের জন্য তৈরি করে কূটনৈতিক সুবিধা। ট্রাম্পের এই ব্যক্তিনির্ভর কূটনীতি মোদির সঙ্গে সম্পর্ককে আরো খারাপ করে তোলে, যা মুনিরের জন্য ছিল লাভজনক।এর পরপরই মুনিরকে ফিল্ড মার্শাল পদে উন্নীত করা হয়। দেশে তিনি ‘ইস্পাত-স্নায়ুর নেতা’ হিসেবে প্রশংসিত হন, আন্তর্জাতিক পরিম-লেও তার মর্যাদা বাড়ে। বিপরীতে, মোদি অভ্যন্তরীণ চাপ ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতির মুখে পড়েন।
ট্রাম্প প্রশাসন পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার ইঙ্গিত দিয়েছে, যা বাইডেন সরকারের তুলনায় ভিন্ন অবস্থান। মুনিরও সুযোগ কাজে লাগিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ড ও পেন্টাগনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ান। ফলশ্রুতিতে কংগ্রেসে ভাষণ দিতে গিয়ে ট্রাম্প প্রকাশ্যে পাকিস্তানের প্রশংসা করেন। এমনকি কানাডায় জি-৭ সম্মেলনে মোদির কূটনৈতিক অপমানের দু’দিন পর ট্রাম্প ওয়াশিংটনে মুনিরের সঙ্গে নজিরবিহীন একান্ত মধ্যাহ্নভোজে বসেন। বৈঠকে সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা, বাণিজ্য ও পাকিস্তানের অর্থনীতি পুনরুজ্জীবনের বিষয়ে আলোচনা হয়।
অন্যদিকে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ আন্তর্জাতিকভাবে চমক তৈরি করেন ট্রাম্পকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনীত করে। পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধ এড়াতে তার ভূমিকার স্বীকৃতি হিসেবেই এই উদ্যোগ বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে ট্রাম্প-মুনির সম্পর্কের সব ক্ষেত্রে পূর্ণ মিল নেই। চীন ও আফগানিস্তান ইস্যুতে মতভেদ রয়ে গেছে। ভবিষ্যতে এসব চ্যালেঞ্জ কীভাবে মোকাবিলা করা হয়, সেটিই নির্ধারণ করবে তাদের সম্পর্ক কতটা টেকসই হবে। শিগগিরই মুনিরের যুক্তরাষ্ট্র সফরের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। রাশিয়া ও চীনকে ঘিরে আসা চ্যালেঞ্জ এবং দক্ষিণ এশিয়ার গুরুত্ব তিনি উপলব্ধি করেন। এখন মোদির সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হলেও মুনিরকে তিনি একদিকে মোদির বিকল্প এবং অন্যদিকে সম্ভাব্য কৌশলগত অংশীদার হিসেবে দেখছেন। সূত্র : দ্য ওয়াশিংটন টাইমস।