
সব পক্ষের সমান সুযোগ নিশ্চিত করেই আগামী ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। সব বাধা অতিক্রম করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আনন্দমুখর পরিবেশে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন আয়োজন করতে চায়। গত শুক্রবার প্রায় ছয় ঘণ্টা ধরে চলা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
গত শুক্রবার বিকেল ৫টা থেকে রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট টিম ও ১৮টি হলের হল প্রাধ্যক্ষ ও হলে ছাত্ররাজনীতির রূপরেখা প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক ও ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসারদের নিয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভা সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত একটি অংশ ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন পেছানোর পক্ষে। ওই অংশটি সব পক্ষের জন্য এখনো সমান প্রচার, প্রচারণার সুযোগ তৈরি হয়নি বলতে চাচ্ছে। তবে উপাচার্য ওই সভার মধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন, বড় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ভূমিকম্প, জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদি ছাড়া অন্য কোনো বাধা ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন পেছাতে পারবে না।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কালো দিবস উপলক্ষে গতকাল শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) অডিটরিয়ামে আয়োজিত এক সভা শেষে ডাকসু নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান বলেন, ‘ছাত্রসংগঠনগুলো যে আচরণ করেছে তাতে আমরা আশাবাদী। অনেক রকম তাদের নিজস্ব মতভেদ, মতানৈক্য সত্ত্বেও তারা মোটা দাগে ডাকসুতে অংশ নিচ্ছে। আনন্দ ও উদ্দীপনা সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। এটা আমাদের বিরাট একটা শক্তি।
শুক্রবারের ছয় ঘণ্টার সভায় উপস্থিত থাকা কয়েকজন সদস্য ও ডাকসু নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাওয়া প্রার্থীরা মনে করছেন, উপাচার্যের শনিবারের (গতকাল) এই বক্তব্য আগের দিনের একটি অংশের চাওয়ার জবাব। তবে প্রার্থীরা বলছেন, উপাচার্যের এখনই উচিত কারা বিঘ্ন সৃষ্টির চেষ্টা করছে সেটি শিক্ষার্থীদের জানিয়ে দেওয়া।
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের মনোনীত ডাকসুতে সহসাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী তানভীর আল হাদি মায়েদ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে যদি কেউ ডাকসু নির্বাচন নিয়ে প্রেশার দিয়ে থাকে, তাহলে উপাচার্যের এখনই বলা উচিত তাঁকে কারা প্রেশার দিচ্ছে। কোন পক্ষ থেকে কারা তাঁকে প্রেশার দিচ্ছে সেটি তাঁর প্রকাশ করা উচিত। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসক হিসেবে তাঁর দায়িত্ব হচ্ছে, কে বা কারা তাঁকে ডাকসু নির্বাচন নিয়ে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে সেটি শিক্ষার্থীদের কাছে প্রকাশ করা।’
‘ডাকসু ফর চেঞ্জ ভোট ফর চেঞ্জ’ প্যানেলের সহসভাপতি পদপ্রার্থী বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে অনেকে বাইরের প্রভাব দ্বারা প্রভাবিত হয়ে কাজ করছেন বলেই গত ১১ মাসে ডাকসুটি হয়নি। আমাদের তীব্র আন্দোলন অনশনের কারণেই প্রশাসন নির্বাচনী তফসিল দিয়েছে। তফসিল ঘোষণা করার পরও একটি অংশ এখনো প্রভাবিত হয়ে নির্বাচন বানচাল করার জন্য কাজ করছে। আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য যে বক্তব্য দিয়েছেন সেই বক্তব্য থেকে যেকোনো সাধারণ বোধবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ বুঝতে পারবে, এই মুহূর্তে তাঁর এই বক্তব্য দেওয়ার কারণ হচ্ছে নির্বাচন বানচাল করতে চাচ্ছে একটি অংশ।’
ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট প্যানেলের সহসভাপতি পদপ্রার্থী সাদিক কায়েম বলেন, ‘ডাকসুতে আমরা এখন পর্যন্ত দেখতে পাচ্ছি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ওপর কারো দ্বারা প্রেসার ক্রিয়েট করা হচ্ছে। আমাদের কাছে মনে হচ্ছে, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডটা ঠিকমতো ফাংশন করছে না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মধ্যে যারা একটা আদর্শ লালন করে তারাও বিভিন্নভাবে নির্বাচন বানচাল করার জন্য বিভিন্নভাবে ইন্টারফেয়ার করছে বলে আমাদের কাছে অভিযোগ আসছে।’
স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী আল সাদী ভূঁইয়া বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে জানতে পেরেছি, একটি অংশ ডাকসু নির্বাচন পেছাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে চাপ প্রয়োগের চেষ্টা করছে। তবে এটিতে তারা কখনো সফল হবে না। আমরা শিক্ষার্থীদের নিয়ে ওই অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলব।’
সম্মিলিত শিক্ষার্থী সংসদ প্যানেলের সহসভাপতি পদপ্রার্থী জামালুদ্দিন মুহাম্মদ খালিদ বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচনকে কেউ বাধাগ্রস্ত করতে চাইলে আমরা বসে থাকব না। ১০ মাসের দীর্ঘ লড়াই শেষে ডাকসু এনেছি। এটাকে সফল করা পর্যন্ত আমরা মাঠ ছাড়ছি না ইনশাআল্লাহ। ভিসি স্যার এভাবে অস্পষ্ট কথাবার্তা না বলে আমাদের ডেকে হেল্প নিতে পারেন।’
প্রতিরোধ পর্ষদ প্যানেলের মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক পদপ্রার্থী মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আমরা চাই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু পরিবেশে সর্বজন গ্রহণযোগ্য ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। নির্বাচন হতে হবে অর্থ ও পেশিশক্তির প্রভাবমুক্ত। ’১৯ সালের মতো পদ ভাগাভাগির নির্বাচন এবার হবে না, নির্বাচন হবে সুষ্ঠু ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়। এটাই আমাদের চাওয়া। তাই প্রশাসনকে সক্রিয়, নিরপেক্ষ ও কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে।’ ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, ‘চাপ বা এ রকম কিছু নিয়ে আমরা কথা বলতে চাই না। আমরা আমাদের কাজ করছি। আজও (গতকাল) প্রার্থিতা বিষয়ে আবেদন করেছেন ৩৪ জন। আমরা সেসব নিয়ে কাজ করছি। যথাসময়ে আমরা নির্বাচন আয়োজন করব।’
এদিকে ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি জানান, আসন্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (ডাকসু) নির্বাচন ঘিরে প্রত্যাশা ও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম। তিনি বলেছেন, বর্তমান পরিবেশকে চমৎকার এবং গণতান্ত্রিক বলে মনে হলেও কিছু ছাত্রসংগঠনের কর্মকাণ্ড শঙ্কা তৈরি করছে।
গতকাল শনিবার দুপুরে ঠাকুরগাঁও শহর শাখার আয়োজনে মির্জা রহুল আমিন মিলনায়তনে এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষায় জিপিএ ৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।