
সাড়ে তিন বছর ধরে চলা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে জোরদার তৎপরতা শুরু হয়েছে। এ ক্ষেত্রে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মোটাদাগে তিনটি শর্ত বেঁধে দিয়েছেন। পূর্ব দোনবাস পুরোপুরি ছেড়ে দেওয়া, ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার পরিকল্পনা বাদ দিয়ে নিরপেক্ষ থাকা এবং পশ্চিমা সেনাদের ইউক্রেনের মাটিতে না রাখা। ক্রেমলিন-ঘনিষ্ঠ তিন রুশ সূত্রের বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
গত ১৫ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কার অ্যাঙ্কোরেজে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তিন ঘণ্টার বৈঠকে মূলত ইউক্রেন নিয়ে আলোচনা করেন পুতিন। এটি ছিল চার বছরের মধ্যে প্রথম রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র শীর্ষ বৈঠক। বৈঠক শেষে ট্রাম্পের পাশে দাঁড়িয়ে পুতিন বলেন, আলোচনা শান্তির পথে এগোনোর সুযোগ তৈরি করেছে। তবে বৈঠকে কী নিয়ে আলোচনা হয়েছিল বা কোনো শর্ত ছিল কিনা, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো কিছু তখন পুতিন বা ট্রাম্প কেউই প্রকাশ করেননি।
সূত্রগুলো জানিয়েছে, পুতিন আগের দাবির তুলনায় কিছুটা ছাড় দিয়েছেন। ২০২৪ সালের জুনে তিনি চারটি প্রদেশ– দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন ও জাপোরিঝিয়া সম্পূর্ণভাবে রাশিয়ার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে ইউক্রেনকে বাধ্য করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু নতুন প্রস্তাবে তিনি শুধু দোনবাস (দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক) থেকে ইউক্রেনের সম্পূর্ণ সরে দাঁড়ানো দাবি করেছেন। এর বিনিময়ে রাশিয়া খেরসন ও জাপোরিঝিয়ায় বর্তমান যুদ্ধরেখা অতিক্রম করবে না।
যুক্তরাষ্ট্রের হিসাব অনুযায়ী, রাশিয়া বর্তমানে দোনবাসের প্রায় ৮৮ শতাংশ, আর খেরসন ও জাপোরিঝিয়ার ৭৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণে রেখেছে। তবে শান্তিচুক্তির অংশ হিসেবে ইউক্রেনের খারকিভ, সুমি ও দনিপ্রোপেত্রভস্ক অঞ্চলের কিছু দখলকৃত এলাকা ছেড়ে দিতেও ইচ্ছুক মস্কো।
তবে পুতিনের পুরোনো দাবিগুলো অপরিবর্তিতই আছে। সেগুলো হলো– ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ দেবে না, পশ্চিমা সামরিক জোট পূর্বদিকে আর বিস্তৃত হবে না এবং ইউক্রেনের সেনাবাহিনী সীমিত থাকবে। এ ছাড়া কোনো পশ্চিমা সেনা শান্তিরক্ষী বাহিনী হিসেবে ইউক্রেনের মাটিতে থাকতে পারবে না বলে দাবি পুতিনের। তবে কিয়েভ জানিয়েছে, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। ন্যাটোতে যোগদানের লক্ষ্যও ইউক্রেনের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত।
বিশ্লেষকরা মনে করেন, দোনবাস থেকে প্রত্যাহারের শর্ত কিয়েভের কাছে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আর পুতিনের সমঝোতার ইঙ্গিত ট্রাম্পের উপস্থিতিতে রাজনৈতিক বার্তা হিসেবেই বেশি প্রতীয়মান। একটি সূত্র বলেছে, পুতিন আপস করতে প্রস্তুত– এই বার্তাই তিনি ট্রাম্পকে দিয়েছেন। তবে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের ভূখণ্ডে রুশ দখলকে স্বীকৃতি দেবে কিনা, আর ইউক্রেন আদৌ দোনবাস ছাড়তে রাজি হবে কিনা– এ প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। ইউক্রেন রাজি না হলে যুদ্ধ চলতে থাকবে।
এদিকে, ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কনজারভেটিভ টক রেডিও অনুষ্ঠান দ্য টড স্টার্নস শোতে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। অনুষ্ঠানে ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা নিয়ে জানতে চাইলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, আমি বলব, দুই সপ্তাহের মধ্যেই আমরা একভাবে বা অন্যভাবে জানতে পারব। এরপর হয়তো অন্য পথ নিতে হবে, তবে খুব শিগগিরই আমরা জানতে পারব।
ইউক্রেনে রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধ করা উত্তর কোরিয়ার সেনাদের বীরত্বের প্রশংসা করেছেন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন। রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম কেসিএনএর বরাতে রয়টার্স এই খবর জানিয়েছে। সেনাদের পদক প্রদান অনুষ্ঠানে কিম বলেন, বিদেশের মাটিতে তাদের যুদ্ধ কার্যক্রম উত্তর কোরিয়ার সামরিক শক্তির প্রমাণ। তিনি বিশেষ করে কুরস্ক পুনর্দখলের লড়াইয়ে তাদের বীরত্বপূর্ণ মানসিকতার প্রশংসা করেন।