Image description
 

গাজায় যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসের রাজি হওয়া যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পর্যালোচনা করছে ইসরায়েল। মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) দুই ইসরায়েলি কর্মকর্তা বলেছেন, প্রস্তাবিত চুক্তিতে ৬০ দিনের জন্য যুদ্ধবিরতি এবং গাজায় আটক অর্ধেক ইসরায়েলি জিম্মি মুক্তির শর্ত রয়েছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

মার্কিন সমর্থিত এ প্রস্তাব মেনে নিলে ২০০ ফিলিস্তিনি বন্দি, নারী ও অপ্রাপ্তবয়স্কদের মুক্তি দেবে ইসরায়েল। এর বিনিময়ে হামাস ১০ জন জীবিত ও ১৮ জন নিহত ইসরায়েলিকে ফেরত দেবে। হামাসের একজন কর্মকর্তা জানান, তারা গাজা থেকে আটক শত শত ব্যক্তির মুক্তিও দাবি করেছে।

গাজায় ইসরায়েলের নতুন করে আক্রমণের ঘোষণার পর গত সপ্তাহ থেকে যুদ্ধবিরতির প্রচেষ্টা নতুন করে গতি পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় কাতার ও মিসর দুই পক্ষের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনা পুনরায় শুরু করার চেষ্টা চালাচ্ছে।

হামাসের একজন কর্মকর্তার মতে, এই প্রস্তাবের অধীনে গাজায় হামাসের হাতে থাকা ১০ জন জীবিত এবং ১৮ জন মৃত জিম্মির বিনিময়ে ইসরায়েলের জেল থেকে ২০০ ফিলিস্তিনি বন্দি এবং অনির্দিষ্ট সংখ্যক নারী ও নাবালককে মুক্তি দেওয়া হবে। দুই মিসরীয় গোয়েন্দা সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করে জানিয়েছে যে, হামাস তাদের হাতে থাকা শত শত গাজাবাসীকেও মুক্তি দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছে।

এই প্রস্তাবে ইসরায়েলি বাহিনীর আংশিক প্রত্যাহার এবং গাজায় মানবিক ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। বর্তমানে গাজার ৭৫ শতাংশ এলাকা ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং সেখানকার প্রায় ২২ লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে।

দুই পক্ষের মধ্যে সর্বশেষ আলোচনা জুলাই মাসে কোনও ফলাফল ছাড়াই শেষ হয়েছিল। দুই পক্ষই এই অচলাবস্থার জন্য একে অপরকে দোষারোপ করেছিল। যদিও ইসরায়েল প্রাথমিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের প্রস্তাবিত চুক্তির রূপরেখা মেনে নিয়েছিল। কিন্তু বিস্তারিত শর্ত নিয়ে আলোচনায় তা ভেস্তে যায়।

গাজা শহরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য ইসরায়েলের পরিকল্পনার কারণে আন্তর্জাতিক মহল এবং সেখানকার প্রায় দশ লাখ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলেছেন, ইসরায়েলের গোলাবর্ষণ, ট্যাংক হামলা এবং বিমান হামলায় কমপক্ষে ২০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই গোলাবর্ষণের কারণে অনেক মানুষ নিজেদের বাড়িতে আটকে পড়েছেন।

যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গত রবিবার হাজার হাজার ইসরায়েলি যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মিদের মুক্তির দাবিতে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ করে। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু শিগগিরই এই যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করার কথা রয়েছে। তবে, তার কট্টর ডানপন্থি জোটের অংশীদার বেজালেল স্মোট্রিচ এবং ইতামার বেন-গভির হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির বিরোধিতা করে আসছেন। তারা হামাসকে পুরোপুরি পরাজিত না করা পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার এবং গাজাকে ইসরায়েলের সঙ্গে যুক্ত করার পক্ষে।

যুদ্ধবিরতির বিষয়ে হামাসের কর্মকর্তা ইজ্জাত এল-রেশিক বলেন, এটি একটি অন্তর্বর্তী চুক্তি যা ভবিষ্যতে যুদ্ধ শেষ করার জন্য আলোচনার পথ খুলে দেবে। অপর এক সূত্র জানিয়েছে, হামাস এবার কোনও অতিরিক্ত শর্ত ছাড়াই প্রস্তাবটি গ্রহণ করেছে।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসের যোদ্ধারা ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যা করে এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে। এর জবাবে গাজায় ইসরায়েলের অভিযানে এখন পর্যন্ত ৬১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং গাজায় মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে।