Image description

বিশ্বের যে কোনো প্রান্তের ঘটনা, জনগণের অধিকার বিঘ্নিত হওয়ার খবর কিংবা অর্থনীতি ও বাণিজ্যের ওঠানামা—সবই মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয় সংবাদপত্র। একসময় বাণিজ্যকে কেন্দ্র করেই এর সূচনা হয়েছিল। বর্তমানে ডিজিটাল ও সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে খবর পৌঁছে যায় মুহূর্তেই। তবুও ছাপা কাগজের গৌরব বা জনপ্রিয়তা কমেনি।

দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক কিংবা ত্রৈমাসিক—কত ধরনেরই না সংবাদপত্র বা ম্যাগাজিন দেখা যায়। তবে কখনো কি এমন সংবাদপত্র দেখেছে, যা চার বছরে একবার প্রকাশিত হয়? বিষয়টা এ-কথা শুনে ভ্রু-কুঞ্চিত হলেও সত্য। এটি ফরাসি ভাষায় প্রকাশিত একটি বিশেষ সংবাদপত্র, যা শুধু ২৯ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত হয়। অবাক হচ্ছেন?

এটি মূলত লিপ ডে বা লিপ ইয়ার ছাড়া এর কোনো সংখ্যা বের হয় না। ১৯৮০ সালে প্যারিস থেকে এটি প্রথম যাত্রা শুরু করে। এরপর কেটে গেছে ৪৩ বছর, আর এতদিনে প্রকাশিত হয়েছে মাত্র ১২টি সংখ্যা। এখন প্রশ্ন জাগতেই পারে, কেন চার বছর ছাড়া প্রকাশিত হয় না এই সংবাদপত্র?

এই উত্তরে জন্য যেতে হবে সত্তরের দশকের শেষদিক। ফ্রান্সের দুই বন্ধু—পলিটেকনিশিয়ান জ্যাক ডি বুইসন ও প্রেস বিশেষজ্ঞ ক্রিশ্চিয়ান বেলির উদ্যোগে শুরু হয় ‘লা বুগি ডু সাপার’-এর যাত্রা। ইংরেজিতে যার অর্থ ‘দ্য সাপার’স ক্যান্ডেল’। নামটি নেওয়া হয়েছে উনিশ শতকের ফরাসি কার্টুনিস্ট সাপার বা স্যাপার ক্যামেম্বারের নাম থেকে।

২০ পৃষ্ঠার এই সংবাদপত্রে বৈশিষ্ট্য হলো, এর নতুন সংখ্যা প্রকাশ করা হয় কেবল ২৯ ফেব্রুয়ারি। ৪.৯০ ইউরো বা ৪.২০ ডলার দামের ট্যাবলয়েডটির প্রচার সংখ্যা এখন ২ লাখ।

‘লা বুজি দি স্যাপর’-এর সম্পাদক জিন ডি ইন্ডি জানান, প্রথম সংখ্যা প্রকাশের পর মাত্র দুই দিনেই সব কপি বিক্রি হয়ে যায়। হকাররা তখন আরও কপি চাইলে তিনি বলেন—‘ঠিক আছে, কিন্তু মাত্র চার বছর লাগবে!’

রম্যধর্মী পত্রিকা হলেও সাধারণ সংবাদপত্রের মতোই সাজানো হয়েছে ‘লা বুজি দি স্যাপর’। এতে রাজনীতি, খেলাধুলা, আন্তর্জাতিক ঘটনা, শিল্প-সংস্কৃতি, ধাঁধা এমনকি তারকাদের আলাপচারিতাও জায়গা পায়। তবে প্রতিটি প্রতিবেদনই উপস্থাপিত হয় রসিক ভঙ্গিতে। সম্পাদকের ভাষায়, এই পত্রিকা আসলে ‘অ্যান্টি-পলিটিক্যালি কারেক্ট’।

২০২৪ সালের সংখ্যার প্রথম পাতার মূল প্রতিবেদনের শিরোনাম—‘সকলেই আমরা বুদ্ধিমান হবো’। পরীক্ষা আর মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক পরিমাপের বিষয়গুলো এআইর কারণে কীভাবে বাতিল হয়ে যাচ্ছে, তা নিয়েই এ প্রতিবেদন।

দ্বিতীয় প্রধান প্রতিবেদনের শিরোনাম—‘নারী হওয়ার আগে পুরুষের যা জানা দরকার’। পুরুষ থেকে রূপান্তরিত নারীরা যে চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করেন, সে প্রসঙ্গ তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে।

ফরাসি এই রম্য পত্রিকা অন্য কোনো ভাষায় অনূদিত হয় না উল্লেখ করে সম্পাদক ডি ইন্ডি জানান, ‘আমরা বোকা সাজার চেষ্টা করি, কিন্তু রূঢ় হই না। মূলত আমরা মজা করি, কিন্তু সেটা কারও প্রতি নিষ্ঠুর না হয়ে।’

এই বিশেষ পত্রিকা অনলাইনে প্রকাশিত হয় না। কেবল ফ্রান্সের নিউজ এজেন্ট, হকার ও পত্রিকা বিক্রির বুথগুলোতেই এটি পাওয়া যায়।

সূত্র : বিবিসি