
বিশ্বজুড়ে রোগ প্রতিরোধ ও জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নে টিকা আজ সবচেয়ে কার্যকর ও নির্ভরযোগ্য অস্ত্র হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, টিকা কেবল একজন ব্যক্তিকে নয়, পুরো সমাজকে রোগ থেকে রক্ষা করে—বিশেষ করে সেইসব মানুষকে, যারা শারীরিক কারণে টিকা নিতে অক্ষম। টিকা ব্যবহারের ফলে ইতোমধ্যে গুটিবসন্ত এবং পোলিওর মতো প্রাণঘাতী রোগ পৃথিবী থেকে প্রায় নির্মূল হয়েছে। পাশাপাশি, শুধুমাত্র হামের টিকাই ২০০০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রায় ৬ কোটি প্রাণ রক্ষা করেছে।
টিকা কীভাবে কাজ করে?
টিকা মূলত মানবদেহের স্বাভাবিক রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সক্রিয় করে তোলে। এতে থাকে জীবাণুর নিষ্ক্রিয় বা দুর্বল অংশ, যা শরীরে প্রবেশ করে ইমিউন সিস্টেমকে সতর্ক করে। ফলে ভবিষ্যতে যদি সেই জীবাণু দেহে প্রবেশ করে, তখন শরীর দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে।
টিকা গ্রহণের ফলে শরীরে তৈরি হয় 'স্মৃতি কোষ', যারা একই জীবাণুর আক্রমণে দ্রুত অ্যান্টিবডি তৈরি করে রোগ প্রতিরোধ করে। অনেক টিকা একাধিক ডোজে দিতে হয়, যাতে দীর্ঘমেয়াদে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে। শিশুদের ক্ষেত্রে এই সময়মতো টিকাদান অত্যন্ত জরুরি।
হার্ড ইমিউনিটি সম্মিলিত সুরক্ষার শক্তি
সমাজে অনেকেই আছেন যারা টিকা নিতে পারেন না—যেমন ক্যান্সার বা এইচআইভিতে আক্রান্ত রোগী, কিংবা যাদের অ্যালার্জির সমস্যা রয়েছে। তবে আশেপাশের মানুষ যদি টিকাপ্রাপ্ত থাকে, তাহলে জীবাণুর সংক্রমণ ছড়ানোর সুযোগ কমে যায়। এর ফলে ওই অক্ষম ব্যক্তিরাও পরোক্ষভাবে সুরক্ষা পান। এই সম্মিলিত প্রতিরোধ ব্যবস্থাকেই বলা হয় হার্ড ইমিউনিটি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ‘টিকা শুধু ব্যক্তিকে নয়, পুরো জনগোষ্ঠীকেই সুরক্ষা দেয়। তবে এর জন্য চাই সমাজব্যাপী ব্যাপক টিকাদান।’
গুটিবসন্ত থেকে পোলিও নির্মূল
টিকার মাধ্যমে গুটিবসন্ত ইতোমধ্যে সম্পূর্ণ নির্মূল হয়েছে। পোলিও, যা একসময় প্রতিবছর লাখো শিশুকে পঙ্গু করত, সেটিও এখন নিয়ন্ত্রণে। আফ্রিকা মহাদেশ ২০২০ সালে পোলিওমুক্ত ঘোষণা পেয়েছে। কেবল পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে এখনও বন্য পোলিও ভাইরাস রয়েছে।
হামের ক্ষেত্রেও ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। ২০০০-২০২৩ সালের মধ্যে হামের টিকা অন্তত ৬ কোটি প্রাণ রক্ষা করেছে। তবে টিকাদানের হার কম থাকায় এখনও কিছু এলাকায় হামের প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে, যা উদ্বেগের বিষয়।
টিকাদান কেবল স্বাস্থ্য রক্ষায় নয়, সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নেও ভূমিকা রাখে। এটি পরিবার ও স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর চাপ কমায়, চিকিৎসা খরচ হ্রাস করে। শিশুদের শিক্ষা ও প্রাপ্তবয়স্কদের কর্মজীবন সচল রাখতে সাহায্য করে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘যারা টিকা নিতে পারেন, তারা নিজেদের সুরক্ষার পাশাপাশি সমাজের দুর্বল ও অসহায় মানুষদের প্রতিও দায়িত্ব পালন করছেন।’
সূত্র: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা