Image description

কাশ্মীরের পহেলগাঁও হামলা এবং ভারতের প্রতিশোধমূলক অভিযান ‘অপারেশন সিদুঁর’ নামকরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বলিউডের প্রবীণ অভিনেত্রী ও এমপি জয়া বচ্চন। ভারতীয় সমাজবাদী পার্টির সংসদ সদস্য বুধবার (৩০ জুলাই) রাজ্যসভায় রিতিমত ক্ষোভ উগরে দেন। 

তিনি বলেন, ‘যখন এত নারী বিধবা হলেন, তাদের মাথার সিদুঁর মুছে গেল, তখনই কেন সামরিক অভিযানের নাম রাখা হলো অপারেশন সিদুঁর?’

এদিন পহেলগাঁও হামলা ও ‘অপারেশন সিদুঁর’-এর ওপর অনুষ্ঠিত রাজ্যসভা বিতর্কে জয়া বচ্চন বলেন, ‘সবকিছু যেন কল্পকাহিনির মতো লাগছে। কিছু মানুষ এলো, এতগুলো মানুষকে মেরে গেল, আর কিছুই হলো না! এটা বাস্তব বলে বিশ্বাস করাই কঠিন’।

জয়া বচ্চন বলেন, ‘আপনারা বড় বড় লেখক নিয়োগ করেন, যারা মার্জিত, বাহারি নাম দেন। তাই বলে ‘সিদুঁর’ কেন? যারা নিহত হয়েছেন, তাদের স্ত্রীদের সিদুঁর তো মুছে গেছে... তারা তো সব হারিয়েছেন!’

‘৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিজি বলেছিলেন, সন্ত্রাস শেষ—কিন্তু তা হলো কই?’ 

 

মোদি সরকারকে কটাক্ষ করে প্রবীণ এই অভিনেত্রী বলেন, ‘পর্যটকরা বিশ্বাস করেই সেখানে গিয়েছিলেন। কারণ আপনারা অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিল করে বুক চাপড়ে বলেছিলেন, সন্ত্রাসবাদ শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু হলো কী? মানুষের আস্থা, বিশ্বাস—সব ধ্বংস করে দিলেন। সেই পরিবারগুলো আপনাদের কোনোদিন ক্ষমা করবে না’।

জয়া বচ্চন স্পষ্টভাবে মোদি সরকারের সমালোচনা করে বলেন, ‘ক্ষমতায় নম্রতা থাকা খুব জরুরি। আপনি যতই বোমা তৈরি করুন, যতই অস্ত্র বানান—যখন আপনি ২৫-২৬ জন মানুষের জীবনও রক্ষা করতে পারেন না, তখন এসবের কোনো মানে হয় না। মানুষের প্রতি দায়িত্ববোধই আসল মানবতা’।

‘ক্ষমা চাইতে জানাটা শক্তি, দুর্বলতা নয়’ উল্লেখ করে সমাজবাদী পার্টির এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘আপনারা যাদের প্রতিনিধিত্ব করছেন, তাদের প্রতি সুরক্ষা, দয়া, সম্মান থাকা উচিত। ক্ষমা চাইতে শিখুন—এটা দুর্বলতা নয়, এটা নম্রতার চিহ্ন’। 

 

টিএমসি নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন-এর একটি বক্তব্য উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, ‘ডেরেক ভালো বলেছিলেন—যার যুক্তি দুর্বল, তার শরীরী ভাষা আরও আক্রমণাত্মক হয়’।

বিষয়টি নিয়ে রাজ্যসভায় বিতর্ক চলাকালে জয়া বচ্চন নিজ দলের বাইরে বসা এমপিদের হস্তক্ষেপে ক্ষুব্ধ হন এবং রাজ্যসভার চেয়ার থেকে তাকে উপেক্ষা করতে বলা হলে, তিনি জবাব দেন, ‘আমার কানে খুব স্পষ্ট শোনা যায়’।

এ সময় তিনি পাশে বসা শিবসেনা (উদ্ধব) এমপি প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদী-কে বলেন, ‘ডোন্ট কন্ট্রোল মি’।

জয়া বচ্চনের এই বক্তব্যে একদিকে যেমন মানবিক ক্ষোভ দেখা গেছে, অন্যদিকে সরকারি প্রচার-নীতির প্রতি অবিশ্বাস। তিনি শুধু আক্রমণের পর প্রতিক্রিয়ার ধরনের সমালোচনা করেননি, বরং সামরিক অভিযানের নাম নিয়েও প্রশ্ন করেছেন—কেন সরকার এমন নাম বেছে নিল, যা নিহতদের পরিবারের দুঃখ-যন্ত্রণাকে আরও বাড়িয়ে তোলে।

তিনি বলেন, ‘নারীরা তাদের স্বামী হারিয়েছে, সংসার হারিয়েছে, অথচ আপনি নাম রেখেছেন ‘সিন্দূর’? কেমন শ্রদ্ধা এটা?’ সূত্র: এনডিটিভি