
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মালদহের সাজনু পারভীন কাজ করতেন দিল্লিতে। সেখানে এ মুসলিম নারীকে ‘জয় শ্রীরাম’ বলতে চাপ দেয় পুলিশ। তিনি ‘জয় শ্রীরাম’ না বলায় তার কাছে ২৫ হাজার রুপি দাবি করা হয়। আজ বুধবার কলকাতায় পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস আয়োজিত সংবাদ সম্মেলেন এসব কথা বলেন ভুক্তভোগী।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারের খবরে বলা হয়, দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে বাঙালি শ্রমিক পরিবারের ওপর অত্যাচারের অভিযোগ তুলেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দিল্লি পুলিশ উল্টো মমতার বক্তব্যকে খণ্ডন করতে মাঠে নেমেছিল। এমন পরিস্থিতিতে আজ বুধবার নির্যাতিত পরিবারকে কলকাতায় এনে এ সংবাদ সম্মেলন করল তৃণমূল কংগ্রেস।
সংবাদ সম্মেলনে সাজনু পারভীন বলেন, দিল্লি পুলিশের সদস্যরা তাকে ‘জয় শ্রীরাম’ বলতে বলেছিল। তিনি মুসলিম হওয়ায় ‘জয় শ্রীরাম’ বলতে অস্বীকার করেন। এরপর তার কাছে ২৫ হাজার রুপি চাওয়া হয়। ‘জয় শ্রীরাম’ না বলায় ও অর্থ না দেওয়া তাকে এবং তার শিশুসন্তানকে মারধর করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
গত রবিবার মমতা বন্দোপাধ্যায় তার এক্স হ্যান্ডলে একটি শিশুর ভিডিও পোস্ট করে দাবি জানিয়েছিলেন, বাংলা মাতৃভাষা হওয়ায় দিল্লি পুলিশ শিশুকেও বাদ দেয়নি। তাকেও আঘাত করা হয়েছে।
তবে পরের দিন সোমবার দিল্লি পুলিশ পাল্টা দাবি করে, ওই ভিডিও ভুয়া। মালদহের চাঁচলের স্থানীয় এক নেতার কথায় পাণ্ডবনগরে বসবাসকারী পরিবার ওই ভিডিও তৈরি করেছিল।
তবে আজ সাজনু বলেন, ওই ভিডিও বানোয়াট নয়। দিল্লি পুলিশ যে সিসিটিভি ফুটেজ দেখাচ্ছে, তা আংশিক। যেখানে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সেখানকার কোনো ফুটেজ নেই।
তিনি বলেন, একদিন চারজন তার বাড়িতে আসেন। নিজেদের ‘পুলিশ’ বলে পরিচয় দিয়ে আধার কার্ড দেখতে চান তারা। তারা তার স্বামী মোক্তার খানের খোঁজ করেন। আধার কার্ড দেখানো সত্ত্বেও ওই চার জন সাজনুকে ‘বাংলাদেশি’ বলে চিহ্নিত করেন। তারা যাতে এলাকা না ছাড়েন, সেই নির্দেশও দেওয়া হয়।
সাজনু বলেন, পরের দিন ফের চারজন আসেন তার বাড়িতে। সেই সময় তাদের সঙ্গে ছিলেন দুই নারীও। তারাই সাজনু ও তাঁর সন্তানকে অন্য এক জায়গায় নিয়ে যান।
তিনি বলেন, ‘সেখানেই আমাকে বলা হয় ‘‘জয় শ্রীরাম’’ বলতে। আমি বলি, আমি মুসলিম। আমি ওটা বলতে পারব না। তার পর আমার থেকে ২৫ হাজার রুপি চাওয়া হয়।’’ সেখানেই তাকে ও তার সন্তানকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ করেছেন সাজনু।
দিল্লি থেকে চাঁচলের পরিবারটিকে কলকাতায় ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে ভূমিকা নিয়েছেন তৃণমূলের দুই রাজ্যসভার সংসদ সদস্য সামিরুল ইসলাম ও মৌসম বেনজির নূর। আজ বুধবার দুই সংসদ সদস্যের সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ও তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ।