Image description

‘অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি’তে রাজি হয়েছে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া। সীমান্তে ৫ দিনের যুদ্ধে উভয় দেশে মোট ৩৩ জন মানুষ নিহত ও হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হওয়ার পর দুই দেশ এই যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম এই ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, সোমবার মধ্যরাত থেকে কার্যকর হচ্ছে শত্রুতা।

থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে তিনি বলেন, উত্তেজনা প্রশমন, শান্তি ও নিরাপত্তা পুনঃপ্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এটা হলো প্রথম পদক্ষেপ। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। এতে বলা হয়, প্রথমে যুদ্ধবিরতির জন্য মধ্যস্থতার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে থাইল্যান্ড। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প এক্ষেত্রে তাদেরকে হুমকি দেন। তিনি বলেন ‘যুদ্ধ বন্ধ’ না হওয়া পর্যন্ত শুল্ক নিয়ে কোনো আলোচনা করবেন না তিনি। এরপরই থাইল্যান্ড মধ্যস্থতার ভিত্তিতে আলোচনায় রাজি হয়।

উল্লেখ্য, মে মাসে সংঘর্ষের পর একজন কম্বোডিয়ান সেনাসদস্য নিহত হন বিতর্কিত সীমান্তে। তারপরই এক শতাব্দী ধরে চলমান সীমান্ত বিরোধ নিয়ে উত্তেজনার পারদ চড়তে থাকে। এর ফল হিসেবে স্থলভাগ দিয়ে নিজ দেশের নাগরিক ও পর্যটকদের কম্বোডিয়া যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে থাইল্যান্ড। অন্যদিকে ফল, বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সহ বিভিন্ন জিনিস থাইল্যান্ড থেকে আমদানি নিষিদ্ধ করে কম্বোডিয়া। কম্বোডিয়ার স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো রিপোর্টে জানায়, মে মাসের পর থাইল্যান্ড থেকে কয়েক লাখ শ্রমিক দেশে ফিরে গিয়েছেন। গত সপ্তাহে স্থলবোমা বিস্ফোরণে একজন থাই সেনাসদস্য পা হারান। এরপর থেকেই পরিস্থিতি  উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। কম্বোডিয়ার সঙ্গে স্থল সীমান্তের বেশ কয়েকটি বন্ধ করে দেয় থাইল্যান্ড। বহিষ্কার করে কম্বোডিয়ার রাষ্ট্রদূতকে। একই সঙ্গে কম্বোডিয়ায় নিয়োজিত নিজেদের রাষ্ট্রদূতকে দেশে তলব করে। উভয় পক্ষই গত বৃহস্পতিবার থেকে  গোলাগুলি শুরু করে আসছে। এক্ষেত্রে একপক্ষ অন্যপক্ষকে দায়ী করছে। এতে কমপক্ষে ৩৩ জন মানুষ নিহত হয়েছেন। থাইল্যান্ডে যারা মারা গেছেন তার মধ্যে বেশির ভাগই গ্রামে বসবাসকারী বেসামরিক লোকজন। রকেট হামলায় তারা মারা গেছেন বলে জানিয়েছে থাইল্যান্ডের সেনাবাহিনী।

অন্যদিকে কম্বোডিয়া বলেছে, তাদের দেশে নিহত হয়েছেন ১৩ জন। এর মধ্যে আটজন বেসামরিক। ওদিকে শান্তি আলোচনা চলার মধ্যেও দুই দেশই গোলা ও রকেট নিক্ষেপ করছিল। যুদ্ধবিরতি পরিস্থিতি নজরদারিতে মালয়েশিয়া ও আসিয়ানের অন্য সদস্যরা সহায়তা করবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন আনোয়ার ইব্রাহিম। শান্তি আলোচনার পর অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ হবে বলে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে তাকে খুবই চমৎকার বলে অভিহিত করেছেন কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত। শুক্রবার থেকে তার দেশ যুদ্ধবিরতি চাইছিল বলে জানানো হয়। কিন্তু সেক্ষেত্রে থাই সেনারা সহযোগিতা করছিল না। ওদিকে যুদ্ধবিরতিকে সম্মান করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন থাইল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ওয়েচাইয়াচাই। আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের যেসব প্রতিনিধি যুক্ত হয়েছিলেন তাদেরকে ধন্যবাদ জানান উভয় দেশের নেতারা। উল্লেখ্য, ওয়াশিংটনের সঙ্গে বাণিজ্য নিয়ে একটি চুক্তি করার চেষ্টা করছে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া। এক্ষেত্রে প্রভাবশালী বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে রয়ে গেছে চীন। গত ৫ দিন ধরে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, প্রাণহানি হয়েছে- তাতে যে আবেগ উত্তেজনা কাজ করেছে তা প্রশমনে দুই দেশেরই বেশ কিছুদিন সময় লাগবে। এমনকি সেনা প্রত্যাহারেও সময় লাগবে। ১৯৮০’র দশকে কম্বোডিয়ার গৃহযুদ্ধের সময় থেকে থাই সীমান্তে বোমা হামলার মুখে যেসব মানুষ বসবাস করেন এবং সরিয়ে নেয়া হয়েছে, তারা বলেছেন, এ কয়েকদিনে তারা সবচেয়ে বাজে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন।

রোববার থাই সেনাবাহিনী জানিয়েছে, সীমান্ত থেকে নিরাপদে সরিয়ে আনা প্রায় এক লাখ ৪০ হাজার বেসামরিক মানুষকে সাতটি প্রদেশে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে রাখা হয়েছে। অন্যদিকে কম্বোডিয়ায় মিডিয়া মারাত্মকভাবে বিধিনিষেধের জালে আবদ্ধ। সেখানকার রাষ্ট্রপন্থি খেমার টাইমস প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্রকে উদ্ধৃত করে বলেছে, প্রায় এক লাখ ৩৫ হাজার মানুষকে তারা নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়েছে। সীমান্ত থেকে উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে ৭৫ বছর বয়সী কম্বোডিয়ার এক নারীকে। তিনি সোমবার বলেছেন, এখনো তিনি নিরাপদ মনে করছেন না। কারণ, তার তাঁবুর উপর দিয়ে তখনো উড়ছিল থাই ড্রোন। তার আশা রাতের মধ্যে যুদ্ধ বন্ধ হোক।