Image description
 

ভারতের আসাম রাজ্যের গোয়ালপাড়া শহরজুড়ে এখন শুধুই হাহাকার আর ধ্বংসস্তূপ। ভাঙচুরের চিহ্ন ছড়িয়ে আছে শহরের খোলা জমিনে। সেই ধ্বংসস্তূপের পাশেই অস্থায়ীভাবে টিকে আছে প্লাস্টিকের তাবুগুলো, যেগুলোর নিচে আশ্রয় নিয়েছেন শত শত বাস্তুচ্যুত মুসলিম নারী, পুরুষ ও শিশু।

তাদের অভিযোগ, নাগরিকত্বের সমস্ত বৈধ প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও, আসামের বিজেপি সরকার তাদের ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়েছে। উচ্ছেদের নামে তাদের বাংলাদেশের ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে চিহ্নিত করে সীমান্তের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। অথচ বাস্তবে এদের অধিকাংশই বহু প্রজন্ম ধরে আসামের বাসিন্দা এবং ভারতীয় নাগরিক।

সরকারি ভাষ্যে বলা হচ্ছে, এই অভিযান বাংলাদেশের অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে। কিন্তু মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দাবি, এই অভিযানের টার্গেট হচ্ছে জাতিগত বাঙালি মুসলিমরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা বলেন, “ওরা বলে আমরা বাংলাদেশি, কিন্তু কেন? আমাদের কাছে সব প্রমাণ আছে। আমাদের বাবাদের, দাদাদের নাগরিকত্বের কাগজ আছে।”

 

আসামের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্ব শর্মা ২০২১ সালের মে মাসে ক্ষমতায় আসার পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৫ হাজার মানুষকে উচ্ছেদ করেছেন। বিশ্লেষকদের মতে, এদের অধিকাংশই বাঙালি মুসলিম। শুধু গত এক মাসেই আসাম জুড়ে পাঁচটি উচ্ছেদ অভিযানে প্রায় ৩,৪০০ জনের বাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

 

উচ্ছেদের পাশাপাশি চলছে ‘বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়ার’ প্রক্রিয়াও। মানবাধিকার সংগঠনগুলো জানিয়েছে, বহু ভারতীয় মুসলিম নাগরিককে জোর করে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে পাঠানো হচ্ছে। এ নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

সম্প্রতি প্রকাশিত একটি বিস্ফোরক প্রতিবেদনে নিউ ইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (HRW) জানিয়েছে, ভারত সরকার যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই শত শত জাতিগত বাঙালি মুসলিমকে বাংলাদেশে বিতাড়ন করছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই অভিযানের শিকারদের অনেকেই প্রকৃত ভারতীয় নাগরিক এবং সবাই আসামসহ বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় বসবাস করেন।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর দিল্লি-ঢাকার সম্পর্কের অবনতি এবং বিজেপির মুসলিমবিরোধী অবস্থান এই উচ্ছেদ ও বিতাড়নের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যকে স্পষ্ট করে তুলেছে। তাদের মতে, আসন্ন নির্বাচনে ভোট আদায়ের কৌশল হিসেবেই এই পদক্ষেপ নিচ্ছে বিজেপি।

মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই বেআইনি উচ্ছেদ ও বিতাড়ন অবিলম্বে বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে।