
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) জানিয়েছে, গাজায় অপুষ্টি এমন এক “ভয়াবহ পর্যায়ে” পৌঁছেছে যা এখন “চরম ঝুঁকিপূর্ণ পথে” রয়েছে। এই সতর্কবার্তার মধ্যে নতুন করে গাজা উপত্যকায় মানবিক সহায়তা পাঠানোর জন্য বিমান থেকে খাদ্য ফেলার (airdrops) কার্যক্রম আবারও শুরু হয়েছে।
জর্ডান সরকার জানায়, সংযুক্ত আরব আমিরাতের সহায়তায় তারা রবিবার গাজায় ২৫ টন খাদ্য ও চিকিৎসা সামগ্রী পাঠিয়েছে। ইসরায়েল ১০ ঘণ্টার জন্য সাময়িক যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেওয়ার পর এই সহায়তা ফেলা হয়।
ইসরায়েলের দাবি, তারা প্রতিদিন ১০ ঘণ্টার জন্য গাজায় কিছু অংশে সামরিক অভিযান বন্ধ রাখবে এবং জাতিসংঘের সহায়তা কনভয়ের জন্য নিরাপদ করিডোর চালু করবে, যাতে "ইচ্ছাকৃতভাবে মানুষকে অনাহারে রাখার মিথ্যা অভিযোগকে মিথ্যা প্রমাণ করা যায়"।
হামাস এই উদ্যোগকে "চেহারা রক্ষার চেষ্টা" বলে নিন্দা জানিয়েছে।
জাতিসংঘের ত্রাণ প্রধান টম ফ্লেচার জানান, ইসরায়েল কিছু চলাচলের সীমাবদ্ধতা শিথিল করেছে।
রয়টার্সে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ফ্লেচার বলেন, “এটি অগ্রগতি, তবে দুর্ভিক্ষ ও স্বাস্থ্য সংকট এড়াতে বিপুল পরিমাণ ত্রাণ প্রয়োজন।”
বোমা পড়ে সাময়িক বিরতিতেও মৃত্যু
ইসরায়েলি বাহিনী দাবি করেছে, তারা রবিবার সাতটি প্যাকেজ বিমান থেকে ফেলেছে, যাতে ছিল ময়দা, চিনি ও টিনজাত খাবার।
তবে একইদিনে মধ্য গাজায় সহায়তা নেওয়ার সময় ইসরায়েলি গুলিতে নয়জন নিহত এবং ৫৪ জন আহত হয়েছে বলে স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীরা জানিয়েছেন।
বিবিসিকে স্থানীয় সূত্র জানায়, সালাহ আল-দিন সড়কের নেটজারিম করিডোরে জাতিসংঘের কনভয়ের জন্য অপেক্ষারত জনতার দিকে গুলি চালানো হয়।
ইসরায়েলি বাহিনী দাবি করেছে, তারা "সন্দেহভাজনদের একটি সমাবেশে সতর্কতামূলক গুলি চালায়", এবং তারা কোনো হতাহতের তথ্য জানে না।
বিবিসি ভেরিফাইয়ের তথ্য অনুযায়ী, শনিবার যুদ্ধবিরতি ঘোষণার এক ঘণ্টা পর গাজার পশ্চিমাঞ্চলের আল-রিমাল এলাকায় একটি আবাসিক ভবনে বিমান হামলার ঘটনা ঘটেছে।জরুরি সহায়তা না পৌঁছালে বিশৃঙ্খলা
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (WFP) জানিয়েছে, গাজার দুই মিলিয়ন মানুষের এক-তৃতীয়াংশ কয়েকদিন পর্যন্ত কিছুই খেতে পাচ্ছে না, আর প্রতি চারজনের একজন দুর্ভিক্ষসদৃশ পরিস্থিতিতে দিন কাটাচ্ছে।
হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সাম্প্রতিক কয়েকদিনে শতাধিক মানুষ অপুষ্টিতে মারা গেছে।
তারা আরও বলেছে, গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (GHF)-এর খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রে খাবার সংগ্রহ করতে গিয়ে শত শত মানুষ গুলিতে নিহত হয়েছেন। ইসরায়েল এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
জর্ডান রোববার গাজার বিভিন্ন অংশে এয়ারড্রপ শুরু করেছে। তবে স্থানীয় সাংবাদিক ইমাদ কুদায়া বলেন, “বেশিরভাগ খাদ্যপ্যাকেজ এমন এলাকায় পড়েছে যেগুলো সামরিক নিয়ন্ত্রণে, সেখান থেকে খাবার আনতে গেলে জীবন ঝুঁকিতে পড়বে।”
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও রাজনৈতিক অবস্থান
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি গাজায় আরও সহায়তা পাঠাবেন, তবে এটিকে তিনি “আন্তর্জাতিক সমস্যা” হিসেবে দেখছেন, “যুক্তরাষ্ট্রের একার সমস্যা নয়”।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেন, “যদিও এয়ারড্রপ ক্ষুধা লাঘবে কিছুটা সাহায্য করতে পারে, তবে স্থায়ী সমাধানের জন্য স্থলপথই একমাত্র কার্যকর পথ।”
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, “আমরা আমাদের যুদ্ধের সব লক্ষ্য অর্জন না করা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাব।”
হামাস নেতা খলিল আল-হায়্যা বলেন, “ব্লকেড ও অনাহার চলতে থাকলে কোনো যুদ্ধবিরতি আলোচনা অর্থহীন।”
ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা এখন গাজার তিনটি জনবহুল এলাকায় প্রতিদিন ১০ ঘণ্টা করে যুদ্ধবিরতি দেবে এবং মানবিক সহায়তা পরিবহনের জন্য নিরাপদ রুট খোলা থাকবে।
সূত্রঃ বিবিসি