Image description
ভারতের প্রতিরক্ষা সচিব ও কর্মকর্তারা ২৩ জুলাই ২০২৪, মঙ্গলবার নয়াদিল্লিতে ইসরায়েলের উপ-সেনাপ্রধান আমির বারামের (বাঁয়ে) সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছেন। ছবি: পিআইবি

ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েল আরোপিত দুর্ভিক্ষের ছবি যখন বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করছে, তখন ভারত ও ইসরায়েলের সামরিক কর্মকর্তারা সম্পর্ক আরও গভীর ও জোরদার করার অঙ্গীকার করেছেন। গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের ফলে ৫৯ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও অনেক আন্তর্জাতিক অধিকার সংস্থা ও বিশেষজ্ঞ ইসরায়েলি আগ্রাসনকে গণহত্যা হিসেবে চিহ্নিত করছে।

বিশ্বব্যাপী নিন্দা এবং ইসরায়েলের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান বাড়ার পরও, গত বুধবার ভারতের প্রতিরক্ষাসচিব এবং ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক নয়াদিল্লিতে বৈঠক করেছেন এবং ‘দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দ্বিপক্ষীয় প্রতিরক্ষা সহযোগিতা আরও জোরদার করতে সম্মত হয়েছেন।’

ভারতের প্রতিরক্ষাসচিব রাজেশ কুমার সিং ও ইসরায়েলের উপ-সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল আমির বারামের এই বৈঠক আবারও দিল্লির এই উদ্দেশ্যকে তুলে ধরেছে যে, ইসরায়েল কিছু কট্টর মিত্রের সমর্থন হারালেও ভারত কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে ইসরায়েলকে সমর্থন করে যাবে।

গত বুধবার ভারতীয় সংবাদ সংস্থা প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো প্রকাশিত বিবৃতিতে দিল্লি জানিয়েছে, ভারতীয় প্রতিরক্ষাসচিব ‘সন্ত্রাসবাদের প্রতি ভারতের শূন্য সহনশীলতার নীতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন এবং ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের ইসরায়েলে (হামাসের তথাকথিত) সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং সব জিম্মিকে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।’ এতে ‘ভারতের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে’ ইসরায়েলের সমর্থনের জানিয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের উপ-সেনাপ্রধানের এই সফর ‘ভারত-ইসরায়েল প্রতিরক্ষা সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ এবং উভয় পক্ষের কৌশলগত অংশীদারত্ব বাড়ানোর প্রতিশ্রুতিকে শক্তিশালী করে।’

এই বৈঠক গত কয়েক সপ্তাহে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক আদান-প্রদানের একটি ধারাবাহিকতার অংশ। গত বুধবার দিল্লির মেয়র রাজা ইকবাল সিং রাজধানীতে ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত রুভেন আজারের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে সিং ‘এই কঠিন সময়ে’ ইসরায়েলের পাশে থাকার দেশের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।

গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, সিং আরও বলেছেন—উভয় দেশের মধ্যে ‘বন্ধুত্ব, সহযোগিতা এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধার ভিত্তিতে একটি শক্তিশালী সম্পর্ক’ রয়েছে। প্রতিবেদন অনুসারে, তারা দিল্লিতে স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, পার্ক এবং কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নতিতে ইসরায়েলি দক্ষতা ব্যবহারের বিষয়ে আলোচনা করেছেন।

দিল্লির কমিশনার অশ্বিনী কুমার বলেছেন, ‘ইসরায়েল প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত দেশ হওয়ায়, এই ধরনের ধারণা ও অভিজ্ঞতার আদান-প্রদান করপোরেশনের কার্যকারিতাকে আরও শক্তিশালী করবে।’ মেয়রের এই মন্তব্যের নিন্দা করেছেন দিল্লির ভারতীয় কর্মীরা।

এই বৈঠকগুলো এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হলো যার দুই সপ্তাহ আগে ইসরায়েল সরকার বলেছিল, তারা ভারতের সঙ্গে একটি বিনিয়োগ সুরক্ষা চুক্তি (আইপিএ) চূড়ান্ত করছে। এর উদ্দেশ্য হলো ক্রমবর্ধমান অস্থিরতার সময়ে একে অপরের দেশে বিনিয়োগের ঝুঁকি মোকাবিলা করা।

তবে, নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বিজেপি সরকার ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলেও গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার বিষয়ে দেশটি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো অবস্থান নেয়নি। ভারত সরকারের এই নীরবতাকে আক্রমণ করেছেন বিরোধী দলীয় নেতারা। কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী ইসরায়েলকে আক্রমণ করে বলেন, দেশটির কাছে মানবতার কোনো মূল্য নেই।

এর আগে, তিনি ভারত সরকারের নীরবতার প্রতিবাদ জানাতে দেশটির পার্লামেন্টে ‘প্যালেস্টাইন’ লেখা ব্যাগ নিয়ে হাজির হয়েছিলেন। গত মাসেও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বলেছিলেন, গাজা ইস্যুতে ভারতের নীরবতা ‘লজ্জাজনক।’ এছাড়া, কিছুদিন আগে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুতে লেখা এক নিবন্ধে কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী গাজা ইস্যুতে ভারতের নীরবতার প্রতিবাদ করে এক নিবন্ধ লিখেছিলেন। সেখানে তিনি বলেছিলেন, ভারতের এই নিশ্চুপ অবস্থান দেশটির ঐতিহাসিক মূল্যবোধের সঙ্গে যায় না।

তথ্যসূত্র: মিডল ইস্ট আই