অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি (আপ), নরেন্দ্র মোদির বিজেপি না কি রাহুল গান্ধীর কংগ্রেস, দিল্লি-শাসন করার দায়িত্ব কাকে দেবেন ভোটাররা তা জানা যাবে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি। এর আগে দিল্লি কার দখলে থাকবে তা ঠিক করতে ৫ ফেব্রুয়ারি ভোট দেবেন রাজধানীর ভোটাররা।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার দিল্লি বিধানসভার ভোটের দিন ঘোষণা করে জানিয়েছেন, এক কোটি ৫৫ লাখেরও বেশি মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। তার মধ্যে দুই লাখের বেশি ভোটদাতা এই প্রথমবার ভোট দেয়ার অধিকার পাবেন।
রাজীব কুমারের দাবি, ইভিএম হ্যাক করা সম্ভব নয়। এটা ফুলপ্রুফ ব্যবস্থা। এ বিষয়ে প্রতিটি অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হয়েছে। কিন্তু সেই অভিযোগের কোনো সারবত্তা ছিল না।
কেজরিওয়াল কি পারবেন?
আম আদমি পার্টির নেতা কেজরিওয়াল তিনবার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। ২০১৩ সালে কংগ্রেসের সমর্থনে, তারপর ২০১৫ সালে তিনি বিপুলভাবে জেতেন। ৭০টির মধ্যে ৬৭টি আসন পায় আপ। কংগ্রেস একটিও আসন পায়নি। ২০২০ সালে কেজরিওয়াল আবার ৬২টি আসনে জিতে মুখ্যমন্ত্রী হন। কিন্তু এর মধ্যে মদের লাইসেন্স কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত সাবেক উপ-মুখ্যমন্ত্রী মনীশ সিসোদিয়া প্রথমে জেলে যান। পরে মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন কেজরিওয়ালকেও জেলে যেতে হয়।
২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনের প্রচারণার জন্য কেজরিওয়াল সাময়িকভাবে ছাড়া পান। পরে আবার তাকে জেলে যেতে হয়। এরপর তিনি জামিন পান এবং মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেন। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হন আপের আতিশি। এর মধ্যে লোকসভা নির্বাচনে আপ একটাও আসনে জেতেনি। কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করেও তারা জিততে পারেনি। দিল্লির সাতটি আসনই বিজেপি জিতেছে। বিধানসভা নির্বাচনে কেজরিওয়াল আর কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করেননি। একাই লড়ছেন।
কিন্তু প্রশ্ন হলো দীর্ঘকাল জেলে বন্দি থাকা, দুর্নীতির অভিযোগ, লোকসভায় খারাপ ফলের ধাক্কা কাটিয়ে আপ কি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে? কেজরিওয়াল কি আবার দলকে জেতাতে পারবেন?
ইতিহাস বলছে, দিল্লির ভোটে কেজরিওয়ালের একের পর এক সাফল্যের পেছনে আছে জনমোহিনী সিদ্ধান্ত। তিনি প্রথমে স্লোগান দেন ‘বিজলি হাফ, পানি মাফ’ অর্থাৎ বিদ্যুতের মাসুল অর্ধেক করা হবে ও পানির মাসুল কার্যত দিতে হবে না, বিশেষ করে গরিবদের। পরে ক্ষমতায় এসে তিনি প্রতিশ্রুতি পালন করেন। এরপর তিনি মেয়েদের সরকারি বাসে যাতায়াত ফ্রি করে দেন। বিভিন্ন জায়গায় মহল্লা ক্লিনিক করে বিনা পয়সায় চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। সরকারি স্কুলের হাল ফেরাবার ব্যবস্থা করা হয়।
এবার কেজরিওয়ালের হাতিয়ার এমনই একটি ঘোষণা, আপ ক্ষমতায় এলে মেয়েদের মাসে দুই হাজার একশ রুপি করে দেয়া হবে। পশ্চিমবঙ্গে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, মধ্যপ্রদেশে লাডলি বহনা, মহারাষ্ট্রে, কর্ণাটকে এ ধরনের প্রকল্প তৃণমূল, বিজেপি, কংগ্রেসকে ক্ষমতায় আসতে সাহায্য করেছে। দিল্লিতে কি কেজরিওয়ালও এই প্রকল্পের জোরে ক্ষমতায় আসতে পারবেন?
আপ ইতিমধ্যে দলীয় স্তরে এই প্রকল্পের জন্য মেয়েদের নাম নথিভুক্ত করেছে। লাখ লাখ নারী তাদের নাম নথিভুক্ত করেছেন। বাঙালিপ্রধান চিত্তরঞ্জন পার্ক এলাকায় ১২০০ নারী তাদের নাম নথিভুক্ত করিয়ে নিয়েছেন।
বিজেপির ভরসা মোদি
বিজেপি এখন পর্যন্ত দিল্লির জন্য কোনো মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি। তারা প্রধানমন্ত্রী মোদির নামেই ভোট চাইবে। গত কয়েকদিনে প্রধানমন্ত্রী দিল্লির জন্য বেশ কয়েকটি প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছেন। বিজেপি চাইছে, লোকসভা ভোটের সাফল্য ধরে রাখতে। তবে লোকসভা ভোট ছিল মোদি বনাম রাহুল গান্ধীর লড়াই। সেখানে কেজরিওয়ালের ভূমিকা ছিল খুবই কম। কিন্তু এবার কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে বিজেপিকে লড়তে হবে।
কংগ্রেসের অবস্থা
দীর্ঘদিন ধরে দিল্লি শাসন করলেও গত দুইটি বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস একটিও আসনে জিততে পারেনি। এবার কি তারা পারবে? কংগ্রেস দিল্লিতে সরকার বানাবে তা দলের অতি বড় সমর্থকও মনে করেন না। তবে তারা দাবি করছেন, দল এবার কয়েকটি আসনে জিতবে। তাদের ভোটের হার বাড়বে। এমনকি যদি কোনো দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পায় এবং কংগ্রেস কয়েকটি আসনে জিততে পারে, তা হলে তাদের গুরুত্ব অনেকটাই বাড়বে।