দেশের আলোচিত দুই ব্যক্তি হলেন- সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, ড. ফখরুদ্দীন আহমদ এবং সাবেক সেনাপ্রধান অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল মঈন ইউ আহমেদ।
দেশের ব্যাপক রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে ২০০৭ সালের ১১ই জানুয়ারি যে সরকার গঠিত হয়েছিলো, সেই সরকারের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা ছিলেন এই দুই ব্যক্তি।
ক্ষমতার পালা বদলের সেই ক্ষণ, বাংলাদেশের মানুষের কাছে এখনো পরিচিত ওয়ান ইলেভেন নামে। বিরাজনীতিকরণ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয় সেই সময়।
দেশের প্রধান দুই দলের দুই নেত্রী, বেগম খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনাকে কারবন্দী করেন ফখরুদ্দীন-মঈন উদ্দিনের সরকার। এছাড়া শতশত রাজনীতিক, ব্যবসায়ী ও আমলাদেরও বন্দী করা হয়।
তখন পরিস্থিতি এমনই ছিলো যে- ড. ফখরুদ্দীন আহমদ ও জেনারেল মঈন ইউ আহমেদের সামনে, বাঘে-মহিষে এক ঘাটে জল খাওয়ার দশা। তবে তা খুব বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। নানা ঘটনার পর ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে বিদায় নেয় ওয়ান ইলেভেনের সরকার।
আর এরপর, ধীরে ধীরে দৃশ্যপট থেকে একেবারেই উধাও হয়ে যান এক সময়ের দোর্দণ্ড প্রতাপশালী ফখরুদ্দীন আহমদ ও মঈন ইউ আহমেদ। দেশের নানা ঘটনার মধ্যেও, তাদের আর পাওয়া যায়নি কখনো। গত এক দশকে তারা দেশে ফিরেছেন- এমন কথাও শোনা যায়নি। তবে দেশের রাজনীতিতে এখনো তাঁদের নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই। তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে যে, কেনো দেশে ফেরেন না ফখরুদ্দীন ও মঈন উদ্দিন?
বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসের আলোচিত এই দুই ব্যক্তি স্থায়ীভাবে বসবাস করেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে বসবাস করা আরেকজন প্রভাবশালী বাংলাদেশী ঢাকা টাইমসকে নিশ্চিত করেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড স্টেটের বেথেসডায় নিজের বাড়িতে স্ত্রীকে নিয়ে অবসর জীবন যাপন করছেন ফখরুদ্দীন আহমদ। আর সাবেক সাবেক সেনাপ্রধান মঈন উ আহমেদ থাকেন ফ্লোরিডার পামবিচে।
ওয়ান ইলেভেনের জন্য ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছিলেন ফখরুদ্দীন আহমদ ও মঈন ইউ আহমেদ, বিশেষ করে বিরাজনীতিকরণের অভিপ্রায়ের জন্য।
তাই ক্ষমতার পালাবদলের পর এই দুই ব্যক্তিই ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন। এমনকি চির প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি ও আওয়ামী লীগ যৌথভাবে আক্রমণাত্মক বাক্য বাণে জর্জরিত করেছেন তাদের।
শুধু তাই নয়, ২০০৭ সালে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত সেনা-ছাত্র সংঘর্ষ ও নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত থাকার দায়ে, ড. ফখরুদ্দীন আহমদ ও মঈন ইউ আহমেদসহ ছয় জনকে, প্রচলিত আইনে বিচারের মুখোমুখি করার একটি সুপারিশ সম্বলিত প্রতিবেদন উত্থাপন করা হয় সংসদে।
কয়েক বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম সেন্টারে একটি মসজিদে বিএনপির নেতাকর্মীদের ক্ষোভের মুখে পড়েন জেনারেল মঈন উদ্দিন। এরপর একেবারেই নিভৃতে ছিলেন তিনি। গত পাঁচ আগস্ট শেখ হাসিনার পট পরিবর্তনের পর, পিলখানা হত্যাকাণ্ড নিয়ে ইউটিউবে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেন মঈন ইউ। ২০০৯ সালে পিলখানার ঘটনার সময় তিনি ছিলেন সেনাপ্রধান।
প্রায় দশ বছর আগে মঈন ইউ আহমেদ একবার দেশে এসেছিলেন বলে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়। কিন্তু দেশ দশক আগে দেশ ছাড়ার পর ফখরুদ্দীন আহমেদ দেশে এসেছেন, এমন কোনো প্রকাশ্য তথ্য পাওয়া যায় না।
এক সময়, দেশের অত্যন্ত প্রভাবশালী এই দুই ব্যক্তি, কেনো আর দেশে আসেন না, জনমনে তা এক বিরাট রহস্য।