যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন পারমাণবিক আলোচনার আগে ইরানকে ‘শূন্য ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ’ চুক্তিতে রাজি হতে বলেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এমনটাই জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওস। তবে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্রশ্নে কোনও ছাড় দেবে না তেহরান।
অ্যাক্সিওস শনিবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, সম্প্রতি পুতিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইরানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপে এই ‘শূন্য সমৃদ্ধকরণ’ চুক্তির পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। এক ইউরোপীয় কর্মকর্তা বলেছেন, পুতিন এই প্রস্তাবটি ইরানিদের উৎসাহ দিয়ে উপস্থাপন করেছিলেন, কিন্তু ইরানিরা তা স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে।
রুশ পররাষ্ট্রনীতিতে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিতে প্রকাশ্যে সমর্থন থাকলেও, ইসরায়েল-ইরানের সাম্প্রতিক ১২ দিনের যুদ্ধের পর মস্কো নেপথ্যে কঠোর অবস্থানে চলে গেছে বলে দাবি করছে অ্যাক্সিওস।
তবে এই প্রতিবেদন প্রকাশের পরপরই ইরানের বিপ্লবী গার্ডস-সংশ্লিষ্ট বার্তা সংস্থা তাসনিম এটিকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে উড়িয়ে দেয়। এরপর শনিবার তেহরানে বিদেশি কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেছেন, আমরা সবসময়ই পারমাণবিক ইস্যুতে আলোচনার জন্য প্রস্তুত। তবে কোনও চুক্তি সমৃদ্ধকরণ বাদ দিয়ে হবে না।
তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য কোনও পক্ষ যাতে আলোচনাকে যুদ্ধের অজুহাত বানাতে না পারে, তা নিশ্চিত করেই আমরা আলোচনা করব।
আরাঘচি স্পষ্ট করে বলেছেন, ইরানের সামরিক ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা আলোচনার বিষয় নয়। তিনি বলেন, আমাদের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে সম্প্রতি মার্কিন-ইসরায়েলি হামলায় ক্ষতি হয়েছে ঠিকই, কিন্তু বড় আঘাত লেগেছে বিশ্বের পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ ব্যবস্থাকেই।
এছাড়া আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ)-র সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলেও জানান আরাঘচি। তবে তা এখন থেকে ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের তত্ত্বাবধানে ‘কেস-বাই-কেস’ ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে।
রাশিয়ার পক্ষ থেকে নাকি প্রস্তাব এসেছে যে, চুক্তি হলে তারা ইরানের উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম সরিয়ে নিতে রাজি এবং পরিবর্তে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য ৩.৬৭ শতাংশ ইউরেনিয়াম এবং গবেষণার জন্য সীমিত ২০ শতাংশ ইউরেনিয়াম সরবরাহ করবে। তবে তেহরান সে প্রস্তাবেও ইতিবাচক সাড়া দেয়নি।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যকার সম্ভাব্য পারমাণবিক আলোচনা নরওয়ের ওসলো শহরে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও, উভয় পক্ষের আগ্রহ কমে যাওয়ায় সেটি আপাতত স্থগিত করা হয়েছে, বিকল্প ভেন্যু খোঁজা হচ্ছে বলে জানিয়েছে অ্যাক্সিওস।
এদিকে ইসরায়েলের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট এক খোলা চিঠিতে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, জুনের হামলাগুলো ইরানের পারমাণবিক কাঠামোকে ভেঙে দিয়েছে। খামেনি যদি পারমাণবিক স্বপ্ন না ছাড়েন, তাহলে আরও বড় হামলা আসবে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুও বলেছেন, ইরান যদি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ এবং ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি বন্ধ না করে, তবে কোনও কূটনৈতিক প্রক্রিয়া সম্ভব নয়।
