Image description

রাশিয়া বৃহস্পতিবার ভোররাতে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে বড় ধরনের বিমান হামলা চালিয়েছে যা যুদ্ধ শুরুর তিন বছরেরও বেশি সময় পর ধারাবাহিকভাবে দ্বিতীয় রাতের মতো ভয়াবহ হামলা। কিয়েভের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই হামলায় অন্তত দুই জন মারা গেছে এবং এক ডজনের বেশি মানুষ আহত হয়েছে। হামলায় বহু ড্রোন ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে।

সিএনএনের কর্মীরা ধারণ করা ভিডিওতে কিয়েভ শহরে বড় বড় আগুনের বিস্ফোরণ দেখা গেছে। শহরের কেন্দ্র এলাকায় ধোঁয়ায় ঢেকে গেছে চারদিক এবং আগুনের ধোঁয়ার গন্ধে বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে।

এই হামলার আগের রাতেই রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর থেকে সবচেয়ে বড় ড্রোন হামলা চালায়। ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের ভাষ্যমতে, ওই হামলায় ৭২৮টি ড্রোন ও ১৩টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়, যাতে অন্তত একজন নিহত হন।

বৃহস্পতিবার সকালের হামলায় কিয়েভ শহরের ক্ষয়ক্ষতি ছিল ব্যাপক। শহরজুড়ে আবাসিক ভবন, গাড়ি, গুদাম, অফিসসহ নানা স্থাপনায় আগুন লেগে যায়। কিয়েভের সামরিক প্রশাসনের প্রধান তিমুর তকাচেঙ্কো এসব তথ্য জানান। তিনি বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন এবং জানালা ও বারান্দা থেকে দূরে থাকতে বলেছেন। তিনি বলেন, সম্পদ পুনরুদ্ধার করা সম্ভব, কিন্তু প্রাণ একবার গেলে আর ফেরে না।

সম্প্রতি রাশিয়া ইউক্রেনে একের পর এক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে। প্রায় প্রতিরাতেই এমন হামলা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার সকালেও মানুষকে কিয়েভের পাতালরেল স্টেশনগুলোতে আশ্রয় নিতে দেখা গেছে।

শান্তি প্রতিষ্ঠার আলোচনা এই অবস্থার মধ্যেই থেমে গেছে। মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক বৈঠকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের ওপর অনেক বাজে কথা ছুড়ে দেন পুতিন। উনি সবসময় হাসিমুখে কথা বলেন, কিন্তু তা অর্থহীন হয়ে দাঁড়ায়।

ট্রাম্প প্রশাসন আবারও কিয়েভকে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যা তাদের নীতির পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। এই অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে সহায়তা নিয়ে নতুন করে চিন্তা শুরু করেছে।

মস্কো ট্রাম্পের বক্তব্য নিয়ে বুধবার শান্ত সুরে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, ট্রাম্প সাধারণত কঠিন ভাষায় কথা বলেন, আমরা তা মাথায় রেখেই প্রতিক্রিয়া দিচ্ছি। তিনি আরও বলেন, আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সংলাপ অব্যাহত রাখতে চাই।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বৃহস্পতিবার মালয়েশিয়ায় আসিয়ানের সম্মেলনের ফাঁকে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গে দেখা করার কথা রয়েছে।

বুধবারের হামলার পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, শান্তির চেষ্টা অনেকবার হয়েছে কিন্তু রাশিয়া সব প্রত্যাখ্যান করেছে।

এই হামলার এক দিন আগেই ইউরোপের শীর্ষ মানবাধিকার আদালত রাশিয়ার বিরুদ্ধে বড় ধরনের আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের রায় দিয়েছে। ইউরোপিয়ান কোর্ট অব হিউম্যান রাইটস ২০২২ সালের পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন এবং ২০১৪ সালে শুরু হওয়া পূর্ব ইউক্রেনের সংঘাত সংক্রান্ত চারটি মামলার রায় দেয়।

আদালত জানায়, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে রাশিয়া ইউক্রেনে মানবাধিকারের ধারাবাহিক লঙ্ঘন করেছে এবং ২০১৪ সালে মালয়েশিয়া এয়ারলাইন্সের এমএইচ-১৭ বিমানের পতনের জন্য রাশিয়া দায়ী। যদিও মস্কো বারবার এই দায় অস্বীকার করেছে। এই বিমানের পতনে ২৯৮ জন মারা যায়।