
সাম্প্রতিক সময়ে টঙ্গী গাজীপুর মহানগর বিএনপির নিজ দলের নেতাকর্মীদের চাঁদাবাজি, ঝুট ব্যবসার দখল, ককটেল বিস্ফোরণে আহত ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ৪৮ ঘন্টার ব্যবধানে ৫ বিএনপি নেতাকে দল থেকে বহিষ্কারের ঘটনায় দলীয় গ্রুপিংয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে বহিষ্কার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। কার তদবিরে কে না আবার কোন সময় দল থেকে বহিষ্কার হয়ে যান এমন আতংকে সময় পার করছেন স্হানীয় অনেক নেতা!
৬ জুলাই গাজীপুর মহানগর বিএনপি'র সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক রাকিব উদ্দিন সরকার পাপ্পু, গাজীপুর মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আব্দুল হালিম মোল্লা, গাজীপুর মহানগর বিএনপি'র সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হাসান জিএস স্বপন এবং টঙ্গী পূর্ব থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব সিরাজুল ইসলাম সাথীকে বিএনপির প্রাথমিক সদস্যসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কারের লিখিত নোটিশ জারি করে বিএনপির কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতৃত্ব।
এদিকে টঙ্গী পূর্ব থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব সিরাজুল ইসলাম সাথীকে বিএনপির প্রাথমিক সদস্যসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে বহিষ্কারের ৪৮ ঘন্টার মধ্যে তাকে আটক করে পূর্বাচল র্যাবের একটি দল। সাথীর বিরুদ্ধে থানায় কোন মামলা না থাকায় টঙ্গী পশ্চিম থানা পুলিশ একটি বিস্ফোরক মামলায় তাকে গ্রেপ্ততার দেখিয়ে জেল হাজতে প্রেরন করে।
বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হাসান স্বপন ওরফে জিএস স্বপনকে চাঁদাবাজির মামলায় টঙ্গী পূর্ব থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করার ৪ ঘণ্টার মাথায় গাজীপুর বিএনপির স্থানীয় ৪ নেতাকে বহিষ্কারে নোটিশ জারি করে দলটির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-দপ্তর সম্পাদক এ্যাডভোকেট তাইফুল ইসলাম টিপুর স্বাক্ষরিত চিঠিতে।
৫ আগষ্টের পর গাজীপুর মহানগর বিএনপি মূলত ৫/৬ টি ভাগে বিভক্ত হয়ে স্হানীয় নানা নেতার গ্রুপের নেতৃত্বে বিভক্ত হয়ে পড়েন। অপরদিকে স্হানীয় নেতৃত্বের নেতারাও কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতৃত্বের কেউ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার, কেউ তারেক রহমানের, কেউবা মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের, আবার কেউবা নজরুল ইসলাম খানের আশীর্বাদ পুষ্ট হয়ে নানা গ্রুপিংয়ে গাজীপুর মহানগর বিএনপির রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন।
শীর্ষ নেতৃত্বের গ্রুপিংয়ের কবলে পড়ে বহিষ্কারের শিকার হন গাজীপুর মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক রাকিব উদ্দিন সরকার পাপ্পু। গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক বিএনপির প্রভাবশালী নেতা রাকিব উদ্দিন সরকার পাপ্পু গাজীপুর-২ আসন থেকে এমপি ইলেকশন করার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে যখন প্রতিদিন ক্যাম্পেইন মিটিং মিছিল করছেন ঠিক তখনই তার বিরোধী পক্ষ শীর্ষ নেতৃত্বকে ভুল বুঝিয়ে তার বিরুদ্ধে বহিষ্কারাদেশের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে দলের স্হানীয় নেতাকর্মীরা দাবি করছেন।
চাঁদাবাজির ঘটনায় জড়িত না থাকা সত্বেও বিএনপির এমপি মনোনয়ন অন্যরা নিজেদের কব্জায় নিতে পাপ্পু সরকারের স্হানীয় প্রতিপক্ষরা তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির ঘটনা সামনে এনে দল থেকে বহিষ্কারের আয়োজন সম্পন্ন করে। পাপ্পু সরকারের বিএনপি থেকে বহিষ্কারের ঘটনায় পুরো গাজীপুরে তীব্র ক্ষোভের ঝড় বইছে। কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে পড়েছেন শুভাকাঙ্ক্ষীসহ সকল স্তরের নেতাকর্মীরা। স্হানীয় নেতৃত্ব ও নেতাকর্মীরা পাপ্পু সরকারের বহিষ্কারাদেশে হতবাক। তারা বলছেন পাপ্পু সরকার স্হানীয় দলীয় কোন্দল ও গ্রুপিংয়ে ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে বহিষ্কার হয়েছেন। নেতাকর্মীরা রাকিব উদ্দিন সরকার পাপ্পুর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বলেছেন, বিগত আওয়ামী ফ্যাসিষ্ট সরকার শেখ হাসিনার শাসনকে চ্যালেন্জ করে রাজপথে মোকাবেলা করতে গিয়ে সামনের কাতারে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি।
টঙ্গী গাজীপুরে এমন দলীয় কোন্দলে জর্জরিত থাকা দলটি নানা গ্রুপে বিভক্ত হয়ে নিজেদের আধিপত্য দেখাতে গিয়ে গত ১১ মাসে নানা ঘটনার জন্ম দিয়ে ব্যাপক আলোচনায় আসে গাজীপুর মহানগর বিএনপি। টঙ্গী গাজীপুরের গার্মেন্টস কলকারখানার ঝুটের ব্যবসা ও সুযোগ সুবিধা বাগিয়ে নিতে গিয়ে নিজেদের মধ্যে দলীয় কোন্দল ও গ্রুপিংয়ে বারবার এক গ্রুপ আরেক গ্রুপের উপর হামলা, সংঘর্ষ, ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে বহু আহতের ঘটনাও ঘটে। পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হত্যাকান্ড মামলার আসামি করার ভয় দেখিয়ে এক নেতার চাঁদা আদায়, না দিলে হত্যা মামলার আসামি করা এমন সব কার্যকলাপে বিএনপির হাইকমান্ড গাজীপুর মহানগর বিএনপির উপর চরম ক্ষুব্ধ ও ত্যাক্তবিরক্তে পরিস্থিতি সামাল দিতে বহিষ্কারের পথ বেছে নেয়।
চাঁদাবাজি ও ঝুট ব্যবসার দখলের ঘটনায় বহিষ্কারের তালিকায় এমন আরো অনেক নেতার ফেঁসে যাওয়ার আশংকায় আতংকে সময় পার করছেন টঙ্গী গাজীপুর বিএনপির অনেক নেতা। স্হানীয় নেতৃত্ব, শীর্ষ নেতৃত্বের নানা গ্রুপিংয়ে বিভক্ত থাকায় চাঁদাবাজির দোষে দুষিত না হয়েও অনেকে ঢালাও বহিষ্কারের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন।
গত বছর ৫ আগষ্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী সরকার শেখ হাসিনার পতন হলে টঙ্গী গাজীপুর শিল্প এলাকার গার্মেন্টস ও কলকারখানার ঝুট ব্যবসা এবং চাঁদাবাজি, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দখল থেকে বিএনপির নানা গ্রুপের দখলে চলে যায়। ঝুটের দখল ও চাঁদাবাজিতে কেউ কাউকে ছাড় না দেয়ায় স্হানীয় বিএনপির নানা গ্রুপের মধ্যে প্রায়ই ঘটে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা। এতে আহতের ঘটনাও ঘটে। টঙ্গী গাজীপুরে পর পর এমন কয়েকটি ঘটনায় খুবই ত্যাক্তবিরক্ত হন বিএনপির হাইকমান্ড। সিদ্ধান্ত নেন এমনসব কাজে যে সকল নেতা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্হা নেওয়ার।
যারা বিএনপির দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে চাঁদাবাজি, ঝুটের ব্যবসার দখল নিয়ে মারামারি সংঘর্ষ ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে জনমনে আতংক সৃষ্টি করেছিলেন এখন তারা আতংকিত হয়ে আত্মগোপন চলে গেছেন। মহানগর বিএনপির টঙ্গী গাজীপুরে আপাতত পরিস্থিতি শান্ত।
প্রথমে টঙ্গীর বিএনপির ৪ নেতাকে দল থেকে বহিষ্কারের পর ৪৮ ঘন্টা পার না হতেই গাজীপুর মহানগর বিএনপির বাসন থানার সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন মনিরকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ দেখিয়ে বহিষ্কারের নোটিশ জারি করা হয় বিএনপির ওই দুই শীর্ষ নেতৃত্বের স্বাক্ষরে। এমন অবস্থায় বহিষ্কার আতংক ছড়িয়ে পড়েছে স্হানীয় বিএনপি নেতাদের মাঝে।
টঙ্গী গাজীপুর মহানগর বিএনপিতে বহিষ্কার আতঙ্কে এখন সবাই সতর্ক অবস্থানে থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন কে রয়েছেন পরবর্তী বহিষ্কারের তালিকায়?