
মহাদেশের চেয়েও বড় রাশিয়া। সেই বিশাল ভূখণ্ডের শক্তিশালী নেতৃত্বে আছেন ভ্লাদিমির পুতিন। ইউক্রেন যুদ্ধের শুরু থেকেই পুতিনের সেনাবাহিনীকে রুখতে পশ্চিমা বিশ্বের নেতৃত্বে গঠিত ন্যাটো জোট—যার সদস্য সংখ্যা বর্তমানে ৩২টি—সবরকম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এখনও পর্যন্ত লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হয়েছে ন্যাটো। যেন এক বিশাল রাশিয়াকে ঘিরে ধরেছে একঝাঁক শেয়ালের দল, কিন্তু দমন করতে পারছে না।
সম্প্রতি রাশিয়ার সামরিক সক্ষমতা নিয়ে সামনে এসেছে এমন কিছু তথ্য যা চোখ কপালে তোলার মতো। নিউইয়র্ক টাইমস-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ন্যাটোর মহাসচিব মার্ক রুট জানান, “যেখানে পুরো ন্যাটো এক বছরে যত গোলাবারুদ উৎপাদন করে, রাশিয়া তার কয়েক গুণ বেশি গোলাবারুদ মাত্র তিন মাসেই তৈরি করছে।”
মার্ক রুট আরও বলেন, “রাশিয়া যে দ্রুত গতিতে নিজেদের সামরিক শক্তিকে পুনর্গঠন করেছে, সাম্প্রতিক ইতিহাসে তার কোনো তুলনা নেই। এটি এখন পশ্চিমাদের জন্য এক বিরাট ভূরাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ।”
তিনি জানান, হেগে অনুষ্ঠিত ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনে ২০৩৫ সালের মধ্যে প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির ৫ শতাংশে উন্নীত করার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ এবং জরুরি। তা না হলে, রসিকতার ছলে তিনি বলেন, “আমাদের রুশ ভাষা শিখতে হতে পারে!”
৪ বছরের মধ্যে হামলার আশঙ্কা, হুঁশিয়ারি জার্মান প্রতিরক্ষা প্রধানের
নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের আশঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে। জার্মান প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান জেনারেল কারস্টেন ব্রয়ার সম্প্রতি বিবিসি-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সতর্ক করে বলেন, “রাশিয়া আগামী চার বছরের মধ্যে ন্যাটো সদস্য দেশগুলোতে সরাসরি হামলা চালাতে পারে। এই সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে এখন থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি।”
তিনি আরও জানান, রাশিয়া প্রতিবছর শত শত যুদ্ধ ট্যাংক তৈরি করছে এবং এগুলোর অনেকটাই ২০২৯ সালের মধ্যে বাল্টিক অঞ্চলে ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে। যার লক্ষ্য হতে পারে লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া ও এস্তোনিয়ার মতো ন্যাটো সদস্য দেশগুলো।
ন্যাটোর ভূমিকায় পরিবর্তন
ইউক্রেন যুদ্ধের শুরু থেকেই ভলদিমির জেলেনস্কিকে সহায়তা করে আসছে ন্যাটো। যদিও সরাসরি যুদ্ধের ময়দানে জড়ায়নি, তবে অস্ত্র, রসদ ও সামরিক সরঞ্জাম দিয়ে ইউক্রেনের পাশে ছিল। ২০২৩ সালের শেষ দিকে পশ্চিমা সামরিক সহায়তা সমন্বয়ের দায়িত্বও নেয় ন্যাটো।
বিশ্বে সামরিক ব্যয়ে শীর্ষে রাশিয়া
রাশিয়ার সামরিক সক্ষমতা সব সময়ই পশ্চিমাদের মাথাব্যথার কারণ। ২০২৪ সালে বিশ্বের সামরিক খাতে সবচেয়ে বেশি ব্যয় করা দেশগুলোর মধ্যে রাশিয়ার অবস্থান তৃতীয়।
-
সামরিক খাতে ব্যয়: ১৪ হাজার ৯০০ কোটি মার্কিন ডলার
-
বিশ্বের সামরিক ব্যয়ের ৫.৫ শতাংশ
-
বাজেটের বড় অংশ গেছে অস্ত্রখাতে, বিশেষ করে ইউক্রেন যুদ্ধ চালিয়ে নিতে।
বিশ্ব রাজনীতির বর্তমান প্রেক্ষাপটে রাশিয়ার বিপরীতে গোটা পশ্চিমা জোট—তবুও সামরিক সক্ষমতায় অনেকখানিই এগিয়ে রয়েছে মস্কো। পুতিন নেতৃত্বাধীন রাশিয়া পশ্চিমাদের জন্য কেবল একটি যুদ্ধক্ষেত্রের প্রতিপক্ষ নয়, বরং এক ভূরাজনৈতিক শক্তি হিসেবেই দাঁড়িয়ে গেছে। সামনে কী ঘটবে, তা সময়ই বলে দেবে।