Image description
বাংলাদেশ সচিবালয় বহুমুখী সমবায় সমিতি-শেষ পর্ব । ১৩ লাখ টাকার এফডিআর থেকে কোনো আয় নেই ।

বাংলাদেশ সচিবালয় বহুমুখী সমবায় সমিতিতে অনিয়মই পরিণত হয়েছে নিয়মে। ক্যান্টিনসহ বিভিন্ন দোকান ও স্টলের জন্য কেনা ৯০ লাখ টাকার বাজারের হিসাবে সাধারণ সম্পাদকের অনুমোদন নেওয়া হয়নি। ব্যাংক লেনদেনের হিসাবে ৪ লাখ ৩০ হাজার ৬৪১ টাকার গরমিল ধারা পড়েছে সমবায় অধিদপ্তরের তদন্তে। সমিতির ১৩ লাখ টাকার এফডিআর একাধিকবার ভাঙানোর ঘটনা ঘটেছে। বিগত ২০ বছরে এফডিআর থেকে এক টাকাও পায়নি সমিতি। বিগত সরকারের সময় ঢাকা জেলা পরিষদ থেকে সমিতির অফিসে ব্যবহারের জন্য একটি কম্পিউটার, ২টি প্রজেক্টর, একটি এলইডি টিভি, ৪৮টি ছোট চেয়ার, সভাপতি ও সম্পাদকের দুইটি বড় টেবিল ও চেয়ার ক্রয় বাবদ ৮ লাখ টাকা অনুদান দেওয়া হয়। তবে সমিতির অফিস এই মালামালের একটিও বুঝে পায়নি। পণ্যগুলো শুধু কাগজে-কলমে দেখানো হলেও বাস্তবে কোনো মালামাল কেনা হয়নি।

ভুয়া এজিএম (বার্ষিক সাধারণ সভা) দেখিয়ে সমবায় অধিদপ্তরকে বিভ্রান্ত করার অভিযোগ রয়েছে বর্তমান কমিটির বিরুদ্ধে। কমিটির সাধারণ সম্পাদক, সহসভাপতি, কোষাধ্যক্ষ ও ম্যানেজার একে অপরকে দোষারোপ করছেন। সমবায় অধিদপ্তরের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, সচিবালয় বহুমুখী সমবায় সমিতির আয় ও ব্যয়ের কোনো স্বচ্ছতা নেই। আয় ও ব্যয়ের লেজার বা রেজিস্টার সংরক্ষণ করা হয় না। তদন্তকালে আয়-ব্যয়ের হিসাব চাওয়া হলে তা দেখাতে পারিনি ব্যবস্থাপনা কমিটি।

সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, পরিচালক মো. মহিবুল আলম সরকার ৯০ লাখ টাকার বাজার করে এর কোনো হিসাব জমা দেননি। তিনি বলেন, হিসাব চাওয়ার কারণে তিনি আমাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছেন। ম্যানেজার রুহুল আমীন বলেন, মহিবুল আলম সরকার ৯০ লাখ টাকার বাজার করেছেন; কিন্তু কোনো হিসাব দেননি। সাধারণ সম্পাদকের অনুমোদনও নেননি। তিনি আরও বলেন, মহিবুল আলম সরকার ও সহসভাপতি মো. আব্দুস ছালাম সমিতির হিসাব থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা নিয়েছেন; কিন্তু দিচ্ছেন না। কর্মচারীর বেতনও বকেয়া রয়েছে তিন লাখ টাকা।

এ বিষয়ে পরিচালক মহিবুল আলম সরকার যুগান্তরকে বলেন, আমি কোনো বাজার করিনি। এসব মিথ্যা অভিযোগ। সাধারণ সম্পাদক যেন সমিতির হিসাব প্রকাশ করেন এবং দৈনিক বাজারের হিসাব দেন, এজন্য আবেদন করেছি। কিন্তু কোনো হিসাব পাওয়া যায়নি। সহসভাপতি আব্দুস সালাম যুগান্তরকে বলেন, মহিবুল কোনো বাজার করেননি। বরং মুজিবুর এবং ম্যানেজার টাকা মেরেছেন। ম্যানেজার আমার কাছে কোনো টাকা পাবেন না। আমি টাকা নিয়েছে-এমন কোনো প্রমাণও তিনি দেখাতে পারবেন না।

সিটি ব্যাংকে সমিতির ১৩ লাখ টাকার এফডিআর একাধিকবার ভেঙে ক্যান্টিনের বাজার করেছে ব্যবস্থাপনা কমিটি। সমবায় অধিদপ্তরের তদন্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ব্যাংকে সমিতির ১৩ লাখ টাকা এফডিআর ছিল, তা একাধিকবার ভাঙা হয়েছে। ২০১১ সালে ব্যবস্থাপনা কমিটি এফডিআর ভেঙে সমিতির ফান্ডে ৫ লাখ টাকা রেখে বাকি ৮ লাখ টাকা ফের এফডিআর করে। সমিতির ফান্ডে রাখা টাকায় তৎকালীন ব্যবস্থাপনা কমিটি ক্যান্টিনের বাজার করেছেন। আবার ৮ লাখ টাকার এফডিআর ভেঙে ৩ লাখ টাকা সমিতির ফান্ডে জমা করে বাকি ৫ লাখ টাকা এফডিআর করেন। সমিতির ফান্ডে রাখা এই টাকায়ও তারা ক্যান্টিনের বাজার করেন। ২০১৮ সালের দিকে সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমীন কয়েক ভাগে ১৩ লাখ টাকা আবার এফডিআর করেন। সিটি ব্যাংক বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ শাখায় সমিতির একটি এফডিআর-এ ৮ লাখ টাকাসহ আরও একাধিক ব্যাংকে ৫ লাখ টাকার এফডিআর রয়েছে।

সমবায় অধিদপ্তরের তদন্তে সমিতির ব্যাংক লেনদেনে ৪ লাখ ৩০ হাজার ৬৪১ টাকার গরমিল ধরা পড়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, এ সংক্রান্ত অন্যান্য রেকর্ড যাচাইয়ের জন্য চাওয়া হলে ব্যবস্থাপনা কমিটি তা সরবরাহ করতে পারেনি। বিষয়টি অধিক তদন্তের দাবি রাখে। তদন্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত ডিসেম্বরে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনের কয়েকটি ফ্লোরে আগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সচিবালয়ের প্রবেশে বেশ কড়াকড়ি আরোপ করে সরকার। সেসময় তদন্ত কমিটি সচিবালয়ে প্রবেশ করতে পারেনি। ব্যবস্থাপনা কমিটির কাছে রেকর্ডপত্র চাওয়া হলেও তারা তা ইচ্ছা করে সরবরাহ করেনি। তদন্ত কমিটির সদস্যরা যুগান্তরকে জানান, সমিতির ব্যবস্থাপনা কমিটি তদন্তে মোটেই সহযোগিতা করেনি।

সমবায় সমিতির ম্যানেজার মো. রুহুল আমীন যুগান্তরকে বলেন, সমিতির ব্যবস্থাপনা কমিটির পরিচালক রবিউল ইসলাম কিছুদিন ক্যান্টিনের বাজার করেছেন।

তখন বাজারের হিসাব যথাযথভাবে সংরক্ষণ কথা হতো। এতে বেশকিছু দিন ক্যান্টিনে ভালো লাভ হয়েছে। এরপর তাকে সরিয়ে দিয়ে সাধারণ সম্পাদকের পছন্দের লোকদের দিয়ে বাজার শুরু করলে সব লাভ লোকসানে পরিণত হয়। সমিতির মধ্যে একাধিক গ্রুপ হয়ে সাধারণ সদস্য এবং কর্মচারীর প্রতি অবিচার করছে ব্যবস্থাপনা কমিটি। সমিতির কোষাধ্যক্ষ মো. ওসমান গনি যুগান্তরকে বলেন, সমবায় আইন অনুসারে সমিতির টাকাপয়সা, আয়-ব্যয়ের সব দায়দায়িত্ব সাধারণ সম্পাদকের। আমাকে একদিনের জন্যও কোনো হিসাবনিকাশ দেখানো হয়নি।