
তুরস্ক আবারও যুক্তরাষ্ট্রের এফ-৩৫ জয়েন্ট স্ট্রাইক ফাইটার প্রোগ্রামে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। আর এজন্য সম্ভবত রাশিয়ার এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে তারা বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
গত সপ্তাহে হেগে অনুষ্ঠিত ন্যাটো সম্মেলনে আঙ্কারা জানায়, তারা আবারও এফ-৩৫ জেট প্রকল্পে যোগ দিতে ইচ্ছুক এবং যুক্তরাষ্ট্র এ ঘোষণায় ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। সম্মেলনে তুরস্ক তাদের বহুস্তরবিশিষ্ট আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘স্টিল ডোম’ সম্প্রসারণের ঘোষণা দিয়েছে যেখান থে কে বাদ পড়তে যাছে রাশিয়ান এস-৪০০ সিস্টেম।
সম্মেলন শেষে বিমানযাত্রায় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বলেন, ‘স্টিল ডোম’ একটি একক ব্যবস্থা নয়, বরং এটি একটি বহুস্তরবিশিষ্ট প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যা ক্ষেপণাস্ত্র হুমকি মোকাবেলায় কার্যকর প্রতিরক্ষা দেবে।
যদিও ‘স্টিল ডোম’ বেশ কিছুদিন ধরেই পরিকল্পনায় রয়েছে, কিন্তু সম্প্রতি মে মাসে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ এবং ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ আবারও দেখিয়ে দিয়েছে, একটি শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা একটি দেশের নিরাপত্তার জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
তুরস্কের 'স্টিল ডোম' আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-নির্ভর, সম্পূর্ণ একীভূত নেটওয়ার্ক, যা দেশীয় অস্ত্র ও সেন্সরগুলোর মধ্যে তাৎক্ষণিক তথ্য আদান-প্রদান নিশ্চিত করবে। তবে ২০১৯ সালে কেনা রাশিয়ান এস-৪০০ মিসাইল সিস্টেমটি এই ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়নি। বিশ্লেষকদের মতে, এস-৪০০ একটি বিদেশি প্রযুক্তি হওয়ায় এটি স্টিল ডোমের তথ্য বিনিময় প্রক্রিয়ায় অন্তরায় হতে পারে।
তবে তুরস্কের নতুন ‘স্টিল ডোম’ আকাশ প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্ক থেকে ২.৫ বিলিয়ন ডলারের রুশ নির্মিত এস-৪০০ মিসাইল সিস্টেমকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তটিকে অনেকেই যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন এফ-৩৫ ফাইটার জেট প্রোগ্রামে পুনরায় যুক্ত হওয়ার একটি কৌশলগত পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।
হেগে অনুষ্ঠিত ন্যাটো সম্মেলনের পর তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান জানিয়েছেন, তুরস্ক এখনো এফ-৩৫ প্রকল্পে ফেরার আগ্রহ হারায়নি এবং এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রযুক্তিগত পর্যায়ের আলোচনা শুরু হয়েছে। তিনি আরও জানান, সম্মেলনের ফাঁকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গেও এই বিষয়ে ব্যক্তিগতভাবে আলোচনা হয়েছে।
২০১৯ সালে এফ-৩৫ প্রোগ্রাম থেকে তুরস্কের বহিষ্কারের পাঁচ বছর পরেও, তুরস্কের এ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ (টুসাস) এখনও সংবেদনশীল এফ-৩৫ উৎপাদন সরঞ্জাম সংরক্ষণ করছে। বহিষ্কারের আগে, টুসাস এফ-৩৫ ফাইটারের ফিউজেলাজ বা মাঝের অংশ তৈরি করত, যার উৎপাদন ২০২২ পর্যন্ত চালু ছিল। ২০২৩ সালে, এফ-৩৫ ফাইটারের মূল প্রতিষ্ঠান নর্থরপ গ্রুম্যান জার্মানির রেইনমেটাল কোম্পানির সঙ্গে অংশীদারিত্ব করে জার্মানির উইজে শহরে একটি নতুন অ্যাসেম্বলি লাইন স্থাপন করছে যা ২০২৫ সালের মাঝামাঝি চালু হওয়ার কথা। তুরস্কের কোম্পানিগুলো আগে এফ-৩৫ এর ১,০০০-এর বেশি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান সরবরাহ করত।
এদিকে, মার্কিন রাষ্ট্রদূত টম ব্যারাক ২৯ জুন জানান, এস-৪০০ কেনার কারণে তুরস্কের প্রতিরক্ষা খাতে যুক্তরাষ্ট্র যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল তা ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ তুলে নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানেরা তাদের শীর্ষ কূটনীতিকদের বিষয়টি সমাধানের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
সব কিছু বিবেচনায় দেখা যাচ্ছে তুরস্ক বছরের শেষ নাগাদ আবারও এফ-৩৫ প্রোগ্রামে যুক্ত হতে পারে, আর এস-৪০০ হয়তো কোনো তৃতীয় দেশকে বিক্রি করে দেওয়া হবে অথবা চিরতরে নিষ্ক্রিয় অবস্থায় তুরস্কে পড়ে থাকবে।
তুরস্কের সাবেক প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হুলুসি আকার নিশ্চিত করেছেন, এস-৪০০ এখনো সক্রিয় নয় এবং একটি অজ্ঞাত স্থানে সংরক্ষিত রয়েছে। সাবেক মন্ত্রী চাভিত চাগলার এই এস-৪০০ বিক্রি করে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, যেখানে পাকিস্তান বা ভারতকে সম্ভাব্য ক্রেতা হিসেবে উল্লেখ করেন, যদিও এ বিষয়ে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
সবমিলিয়ে আঙ্কারা এখন নিজস্ব প্রযুক্তিনির্ভর, বহুস্তরবিশিষ্ট আকাশ প্রতিরক্ষা কৌশল বাস্তবায়নের পথে এগোচ্ছে, যেখানে এস-৪০০ এর ব্যবহার হচ্ছে না বলেই আভাস পাওয়া যাচ্ছে।
সূত্র: ইউরেশিয়া টাইমস