
ব্রিটেনে আবারও ফিরছে ইহুদি বিদ্বেষ। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে এই বিদ্বেষ শুধু ব্যক্তিগত স্তরেই সীমাবদ্ধ নেই, বরং তা সাংস্কৃতিক উৎসব, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রাজনীতি, এমনকি গণমাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়েছে। ১৯৩০-৫০-এর দশকের ইউরোপের বিভীষিকাময় ইতিহাস স্মরণ করিয়ে আজ আবারও দেশটিতে ইহুদি বিদ্বেষ দেখা দিয়েছে নতুন মোড়কে। ব্রিটেনে বসবাসরত ইহুদি নাগরিকরা আজ ভয়, উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। সোমবার জেরুজালেম পোস্টের সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, ভয়ে অনেক ইহুদি নাগরিক যুক্তরাজ্য ছেড়ে ইসরাইল বা অন্য কোনো নিরাপদ দেশে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এক সময় ইসরাইলের ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিল যুক্তরাজ্য। কিন্তু গত দশকে এই সম্পর্ক মারাত্মকভাবে খারাপ হতে শুরু করে। একদিকে দেশের রাজনীতিতে জেরেমি করবিনের উত্থান, অন্যদিকে ইসরাইল ও ব্রিটিশ ইহুদিদের প্রতি দেশটির মনোভাবের পরিবর্তন, সব মিলিয়ে ইহুদি বিদ্বেষ বেড়েই চলেছে দেশটিতে।
যুক্তরাজ্যের অন্যতম বড় সংগীত ও সংস্কৃতি উৎসব গ্লাস্টনবেরি ফেস্টিভ্যালে এ বছর সংগীতের বদলে ইহুদিদের প্রতি ঘৃণার প্রকাশ বেশি দেখা গেছে। উৎসবের মঞ্চে প্রকাশ্যে ইসরাইলবিরোধী এবং ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) বিরুদ্ধে হিংসাত্মক স্লোগান দেওয়ায় দেশজুড়ে শুরু হয়েছে তীব্র প্রতিক্রিয়া। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশটিতে ইহুদি সম্প্রদায়ের মধ্যে বাড়ছে উদ্বেগ ও নিরাপত্তাহীনতা। ফেস্টিভ্যালে অংশ নেওয়া ব্রিটিশ র্যাপার বব ভাইলান তার পারফরম্যান্সের সময় একাধিকবার স্লোগান দিচ্ছিলেন, ‘ডেথ টু দ্য আইডিএফ’ (আইডিএফ নিপাত যাক)। তার সঙ্গে হাজার হাজার দর্শকও এক কণ্ঠে একই স্লোগানে গলা মেলান। ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর বিষয়টি তদন্তে নেমেছে ব্রিটিশ পুলিশ।
এরই মধ্যে জাতিগত বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগে বিবিসির বিরুদ্ধে মামলা করেছে ব্রিটিশ ইহুদি আইনজীবীদের সংগঠন ইউকে লয়ার ফর ইসরাইল। তারা বলেছেন, বিবিসি এমন একটি অনুষ্ঠান সম্প্রচার করেছে, যা ব্রিটিশ আইন অনুযায়ী ‘জাতিগত বিদ্বেষ উসকে দেওয়ার মতো। অনেক বিশ্লেষক এবং ব্রিটিশ ইহুদি নেতারা এই ঘটনাকে শুধু ‘ইসরাইল বিরোধিতা’ নয়, বরং স্পষ্ট ইহুদি বিদ্বেষ হিসাবে দেখছেন। কমিউনিটি সিকিউরিটি ট্রাস্টের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে যুক্তরাজ্যে ইহুদি বিদ্বেষমূলক ঘটনার সংখ্যা আকাশচুম্বী হয়েছে। ২০২৪ সালে ব্রিটেনে যত ইহুদি বিদ্বেষমূলক হামলা হয়েছে, অতীতে কোনো বছরেই এত হয়নি। উপাসনালয় ভাঙচুর, স্কুলে শিশুদের হয়রানি, ইহুদি এমপিদের টার্গেট করা, বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘জায়োনিস্ট’ অপবাদ দিয়ে ইহুদি শিক্ষার্থীদের বিতাড়ন- সব মিলিয়ে পরিস্থিতি এখন ভীতিকর।
উল্লেখ্য, ১৯৩০ থেকে ১৯৫০ পর্যন্ত ব্রিটেনে ইহুদি বিদ্বেষ ছিল বহুমাত্রিক- রাজনৈতিক দল, মিডিয়া, সমাজ এবং শরণার্থী নীতির ভেতরেও তা প্রতিফলিত হয়েছিল। ১৯৩০-৪০-এর দশকে কিছু ব্রিটিশ পত্রিকা ও প্রকাশনা ইহুদিদের ‘লোভী’, ‘ষড়যন্ত্রকারী’ এমনকি ‘বিদেশি দখলদার’ হিসেবে অভিহিত করত।