Image description
 

ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে যোগ দেওয়ার বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের কেন্দ্রবিন্দুতে যে বিষয়টি রয়েছে তা হলো, ইরান কতটা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কাছাকাছি পৌঁছেছে। এ বিষয়টি নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তাঁর শীর্ষ উপদেষ্টাদের একজনের মধ্যে স্পষ্ট দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। এতে কয়েক দশক আগে মধ্যপ্রাচ্যের আরেকটি সংকটের সময় হোয়াইট হাউসের আরেক রিপাবলিকান প্রতিনিধির প্রতিফলন দেখা গেছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিবিসির প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে। এতে বলা হয়, কানাডায় জি৭ শীর্ষ সম্মেলন থেকে হঠাৎ দেশে ফেরার সময় এয়ারফোর্স ওয়ানে ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করা হয়– তিনি কি তাঁর জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ডের মার্চে দেওয়া বক্তব্যের সঙ্গে একমত? গ্যাবার্ড বলেছিলেন, ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরি করছে না। জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘তিনি (গ্যাবার্ড) কী বললেন, তাতে আমার কিছু যায় আসে না। আমি বিশ্বাস করি, ইরান বোমা তৈরির খুব কাছাকাছি রয়েছে।’

 
 

মার্কিন কংগ্রেসে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় গ্যাবার্ড বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো অনুসন্ধান করে জেনেছে, ইরান ২০০৩ সালে স্থগিত পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি আবার শুরু করেনি, যদিও দেশটির সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুত সর্বকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে ছিল। 

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর অতীত কর্মকাণ্ডের সমালোচনা, ক্ষমতাচ্যুত সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের মতো মার্কিন প্রতিপক্ষের সঙ্গে সাক্ষাতের আগ্রহ ও হস্তক্ষেপবিরোধী পররাষ্ট্রনীতির প্রতি তাঁর স্পষ্টভাষী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে গ্যাবার্ডকে জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালকের জন্য বিতর্কিত পছন্দ হিসেবে দেখা হয়। এই তুলসী গ্যাবার্ড ছিলেন সাবেক ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী, যিনি একবার হোয়াইট হাউসের মনোনয়নে সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্সকে সমর্থন জানিয়েছিলেন। ২০২২ সালে তিনি ডেমোক্রেটিক পার্টির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন এবং গত বছর ট্রাম্পকে সমর্থন করেন।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কার্যত তাঁর গোয়েন্দাপ্রধানের বক্তব্যকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স গ্যাবার্ডকে সমর্থন করলেও তিনি ইরানে ট্রাম্প যা করতে চান, তার প্রতি সমর্থনের ইঙ্গিত দিয়েছেন। মঙ্গলবার এক্সে ভ্যান্স বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, প্রেসিডেন্ট এ বিষয়ে কিছুটা আস্থা অর্জন করেছেন। আমি আপনাকে আশ্বস্ত করতে পারি, তিনি কেবল জনগণের লক্ষ্য অর্জনের জন্য মার্কিন সেনাবাহিনী ব্যবহার করতে আগ্রহী।’

ট্রাম্প-গ্যাবার্ডের স্পষ্ট মতবিরোধ ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে, যা ইরান-ইসরায়েলের সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবেশের পথে বাধা।
তবে রক্ষণশীল ভাষ্যকার টাকার কার্লসন ও কংগ্রেসওম্যান মার্জোরি টেলর গ্রিনের মতো মার্কিন অ-হস্তক্ষেপের সমর্থকদের যুক্তি–  ইরানে সরকার পরিবর্তন ও সামরিক অভিযানকে ন্যায্যতা দিতেই বোমার কথা অতিরঞ্জন করে প্রকাশ করা হচ্ছে। গত সপ্তাহে এক এক্স পোস্টে টাকার বলেন, আসল বিভাজন ইসরায়েলকে সমর্থনকারী ও ইরান বা ফিলিস্তিনিদের সমর্থনকারীদের মধ্যে নয়। বিভাজন হলো, তাদের মধ্যে যারা সহিংসতাকে উৎসাহিত করে। 

তারা ২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন আক্রমণের দিকেও ইঙ্গিত করেন। তখন জর্জ ডব্লিউ বুশ প্রশাসন ইরাকে গণবিধ্বংসী অস্ত্র রয়েছে দাবি করে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ভয়াবহ হুমকির সতর্কবার্তা দিয়ে আক্রমণকে ন্যায্যতা দেন। যদিও গোয়েন্দা তথ্য ছিল ভিন্ন। পরবর্তী সময়ে ইরাকে কোনো গণবিধ্বংসী অস্ত্র মেলেনি।

বুশ প্রশাসনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কলিন পাওয়েলকে জাতিসংঘে পাঠানো হয়, যেখানে তিনি একটি ছোট শিশি তুলে ধরে বলেন, এটি ইরাকিদের কাছে অস্ত্রযুক্ত অ্যানথ্রাক্স ব্যাকটেরিয়ার একটি ক্ষুদ্র অংশের প্রতিনিধিত্ব করে। পাওয়েল বলেছিলেন, ‘এগুলো দাবি নয়। আমরা আপনাকে যা দিচ্ছি তা হলো, দৃঢ় গোয়েন্দা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে, এটা সিদ্ধান্ত।’ পরে ইরাকে রক্তাক্ত মার্কিন দখলদারিত্ব শুরু হয়, যেখানে গণবিধ্বংসী অস্ত্রের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। পরের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটরা বড় সুবিধা পান ও রিপাবলিকানদের অভ্যন্তরীণ অসন্তোষ বাড়ে।

বলা বাহুল্য, খোদ ট্রাম্পই ইরাক ‍যুদ্ধ নিয়ে বুশ প্রশাসন ও কলিন পাওয়েলের সমালোচনা করেছিলেন। কিন্তু এখন তিনিও একই ফাঁদে পা দিচ্ছেন।