Image description
 

ইরান ও ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি হামলা পঞ্চম দিনে গড়িয়েছে। এই যুদ্ধ যেখানে চলছে, সেটি বিশ্বের অন্যতম প্রধান তেল ও গ্যাস উৎপাদনকারী এলাকা। সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কায় বিশ্ব অর্থনীতিতে তৈরি হচ্ছে অস্থিরতা। গত শুক্রবার ইরানে ইসরায়েলের হামলার পর বিশ্বের বড় পুঁজিবাজারগুলোতে ধস নামে। তবে পরিস্থিতি এখন কিছুটা স্থিতিশীল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলমান সংঘাত পুরোদস্তুর যুদ্ধে রূপ নিলে ভয়াবহ হতে পারে পরিস্থিতি।

সংঘাতের খবরে বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়তে শুরু করেছে। গত সোমবার ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ৭৪ দশমিক ৬০ ডলারে পৌঁছায়, যা ইসরায়েলি হামলার আগের দিনের তুলনায় প্রায় ৭ শতাংশ বেশি। বিশ্বের বেশির ভাগ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসে মধ্যপ্রাচ্যের হরমুজ প্রণালির মতো ব্যস্ত সমুদ্রপথ দিয়ে পরিবাহিত হয়। জাহাজ দিয়ে বিশ্বের যত তেল পরিবহন হয়, এর এক-তৃতীয়াংশ বা ২১ মিলিয়ন ব্যারেল যায় এই প্রণালি দিয়ে। প্রণালিটির সবচেয়ে সংকীর্ণ অংশের প্রস্থ মাত্র ৩৩ কিলোমিটার, যা একে হামলার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। তেহরান এই গুরুত্বপূর্ণ জলপথ বন্ধ করে দিতে পারে কিনা– সেই পুরোনো প্রশ্ন আবারও সামনে এসেছে। 

 
 

ইরানের সংবাদ সংস্থা ইরনা দেশটির এক প্রভাবশালী আইনপ্রণেতা ইসমাইল কোসারির বরাত দিয়ে জানিয়েছে, তেহরান প্রণালিটি বন্ধের কথা ভাবছে।

বৈশ্বিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান স্যাকসের মতে, হরমুজ প্রণালি বন্ধ হলে তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। তবে আশার কথা, ১৯৮০ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত ইরান-ইরাক যুদ্ধের সময়ও হরমুজ প্রণালি পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। এ ছাড়া, প্রণালিটি বন্ধ করলে চীনের মতো দেশে ইরানের নিজস্ব রপ্তানিও বাধাগ্রস্ত হবে, যা তাদের আয়ের পথ বন্ধ করে দেবে।

টিএস লম্বার্ড নামে একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক বিশ্লেষক হামজেহ আল গাওদ বলেন, প্রণালিটি বন্ধ করার পরিণতি তেহরানের জন্যও মারাত্মক হবে।

তেলের দাম বাড়লে উৎপাদন খরচও বেড়ে যায়। এর প্রভাব শেষ পর্যন্ত ভোক্তাদের ওপর পড়ে। বিশেষ করে খাদ্য, পোশাক ও রাসায়নিকের মতো পণ্যের দাম বেড়ে যায়। সংঘাত দীর্ঘস্থায়ী হলে বিশ্বজুড়ে তেল আমদানিকারক দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি বাড়তে পারে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধীর হয়ে যেতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর হস্তক্ষেপের সুযোগ কমে আসবে।

আল-জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হামজেহ আল গাওদ বলেন, জি৭ দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংকাররা বর্তমানে সুদের হার কমানোর পথে হাঁটছেন। তাই জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় তারা উদ্বিগ্ন থাকবেন।

ইরান-ইসরায়েলের সংঘাতের প্রভাব বিশ্বের পুঁজিবাজারগুলোতে পড়েছে। শুক্রবার এসঅ্যান্ডপি ৫০০ এবং নাসডাক কম্পোজিট সূচক যথাক্রমে ১ দশমিক ১ ও ১ দশমিক ৩ শতাংশ কমেছে। এর আঁচ লেগেছে মধ্যপ্রাচ্যেও।