
অন্যদিকে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সরাসরি এ দাবি অস্বীকার বা স্বীকার না করলেও তিনি ফক্স নিউজকে বলেন, চলমান সামরিক অভিযানের ফলে ইরানে ‘সরকার পরিবর্তন’ হতে পারে। যদিও তিনি একে সরকারিভাবে ঘোষিত কোনো লক্ষ্য হিসেবে মেনে নেননি।
ট্রাম্পের ভেটো: কী বলা হচ্ছে?
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স ছাড়াও এপিএ, অ্যাক্সিওস ও ইসরাইলের চ্যানেল ১৩-এর খবরে বলা হয়েছে, ইসরাইল সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনকে জানিয়েছিল যে, তারা খামেনিকে হত্যার জন্য একটি ‘বিশ্বস্ত পরিকল্পনা’ তৈরি করেছে।
হোয়াইট হাউস সূত্র জানায়, ব্রিফিংয়ের পর ট্রাম্প সেই পরিকল্পনার বিরোধিতা করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা ইসরাইলিদের জানিয়ে দিয়েছি যে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এ ধরনের হত্যার পক্ষে নন। ইরান এখনো কোনো মার্কিন নাগরিককে হত্যা করেনি। তাই রাজনৈতিক নেতাদের হত্যা আলোচনার টেবিলে থাকা উচিত নয়’।
তবে ইসরাইলের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা টাসি হানেগবি এবং প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখপাত্র ওমের ডস্তরি এসব প্রতিবেদনকে ‘ভুয়া সংবাদ’ বলে অভিহিত করেছেন।
কোথায় খামেনি?
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইরান ইন্টারন্যাশনাল দাবি করেছে, ইসরাইলি অভিযানের প্রথম রাতেই খামেনিকে তেহরানের উত্তর-পূর্বে লাভিজানের একটি ভূগর্ভস্থ বাঙ্কারে সরিয়ে নেওয়া হয়। তিনি এখন যেখানেই পরিবারের সঙ্গে অবস্থান করছেন।
এছাড়াও ইসরাইলের পক্ষ থেকে ইরানের মাশহাদ শহরে একটি রিফুয়েলিং প্লেন ধ্বংস করা হয়। যা খামেনির প্রতি ইসরাইলের বার্তা—‘ইরানের কোনো অঞ্চলই নিরাপদ নয়’।
‘যা প্রয়োজন তা-ই করবো’
এদিকে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘আমাদের যা যা করতে হবে সবই করবো। যুক্তরাষ্ট্রও জানে তাদের জন্য কী ভালো’।
তিনি জানান, যদি ইরান ট্রাম্পের শর্তে পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ করতে সম্মত হয়, তাহলে ইসরাইল সামরিক অভিযান বন্ধ করতে রাজি। তা না হলে, তার ভাষায়, ‘এ অভিযান শেষ হবে যখন আমরা তাদের পরমাণু সক্ষমতা ধ্বংস করতে পারবো—আমরা তা করবোই’।
‘চুক্তি সম্ভব, হয়তো যুদ্ধও লাগবে’
এদিকে ট্রাম্প নিজেই ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে শান্তিচুক্তি হবে, শিগগিরই!’ তবে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘কখনো কখনো যুদ্ধ করে মীমাংসা করতে হয়। কিন্তু আশা করছি চুক্তি হবে’।
ট্রাম্প উল্লেখ করেন, ইরান যদি নিজে থেকেই পরমাণু কর্মসূচি ‘ভদ্রভাবে’ ধ্বংস না করে, তাহলে ‘যুক্তরাষ্ট্র তা হিংস্রভাবে ধ্বংস করবে’।
‘খামেনি অফ-লিমিট নয়’
ইসরাইলি রাষ্ট্রদূত ইয়েচিয়েল লেইটার বলেন, ‘যে-ই ইসরাইল ধ্বংসের হুমকি দেবে, তাকেই টার্গেট করা হতে পারে’।
ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম চ্যানেল ১২ ও মার্কিন গণমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের খবরে বলা হয়েছে, ‘খামেনিকে হত্যা ইসরাইলের বিবেচনার বাইরে নয়’ এবং যুদ্ধ তখনই শেষ হবে যখন ইরান পারমাণবিক কর্মসূচি পুরোপুরি বন্ধ করবে—স্বেচ্ছায় অথবা বলপ্রয়োগে।
এমন পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে, একদিকে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কূটনৈতিক সমঝোতার সম্ভাবনা থাকলেও, অন্যদিকে যুদ্ধের সম্ভাবনাও অগ্রাহ্য করা যাচ্ছে না। খামেনিকে হত্যাচেষ্টার বিতর্ক ইসরাইল-ইরান উত্তেজনার একটি নতুন স্তরে নিয়ে গেছে।