Image description

ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে চলমান ভূ-রাজনৈতিক সংঘাত ভারতের আদানি গ্রুপের জন্য বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইসরাইলে আদানির পাহাড়সম বিনিয়োগ এখন গুরুতর ঝুঁকির মুখে পড়েছে বলে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। বিশেষ করে, ইসরাইলের হাইফা বন্দর এবং প্রতিরক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে আদানি গ্রুপের অংশগ্রহণ এই সংঘাতের সরাসরি প্রভাবের আওতায় এসেছে।

গত শনিবার বন্দর নগরী হাইফাকে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। ধারণা করা হচ্ছে সেখানে কয়েক ডজন মিসাইল ছুড়েছে তেহরান। যার মধ্যে বেশ কয়েকটি বিকট শব্দে সরাসরি হাইফাতে আঘাত হানে।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম চ্যানেল-১৩ জানিয়েছে, প্রাথমিক তথ্যে তারা জানতে পেরেছে উপকূলীয় শহর হাইফা এবং এটির পাশের শহর তামরায় মিসাইল আঘাত হেনেছে।

এই হামলার ঘটনার পর রীতিমতো মাথায় হাত পড়েছে আদানির। কেননা, গত বছরই আদানি পোর্টস ১.১৮ বিলিয়ন ডলার দিয়ে ইসরাইলের হাইফা বন্দরের নিয়ন্ত্রণ কিনে নেয়। এটি ছিল আদানির বৈশ্বিক পোর্ট সাম্রাজ্য বিস্তারের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই বন্দরটি ইসরাইলের দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং ভূমধ্যসাগরে একটি কৌশলগত প্রবেশদ্বার হিসেবে বিবেচিত।

অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ইরান-ইসরাইল সংঘাতের ফলে হাইফা বন্দরের কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। যদি সংঘাত আরও তীব্র হয় এবং নৌপথ অবরোধ বা সামরিক হামলার ঘটনা ঘটে, তবে আদানির এই বিনিয়োগের ওপর সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এর ফলে বন্দরের রাজস্ব আয় কমে যেতে পারে, এমনকি অবকাঠামোগত ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

এছাড়াও আদানি এন্টারপ্রাইজ ২০১৮ সালে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠান এলবিট সিস্টেমসের সঙ্গে যৌথভাবে হায়দরাবাদে ড্রোন কারখানা স্থাপন করে। এই কারখানায় তৈরি হার্মিস ৯০০ ড্রোন বর্তমানে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর (আইডিএফ) একটি প্রধান অস্ত্র। এটি ইসরাইলের বাইরে একমাত্র নির্মাণকেন্দ্র। যুদ্ধ বেড়ে গেলে এই ড্রোনের চাহিদা বাড়ার সম্ভাবনা থাকলেও এতে আদানি গ্রুপকে নতুন রাজনৈতিক ও নৈতিক প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হতে পারে।

সেমিকন্ডাক্টর প্রকল্প স্থগিত

আদানি গ্রুপ ইসরাইলের টাওয়ার সেমিকন্ডাক্টরের সঙ্গে যৌথভাবে ১০ বিলিয়ন (এক হাজার কোটি) ডলারের একটি সেমিকন্ডাক্টর প্রকল্পের পরিকল্পনা করেছিল। তবে এপ্রিল মাসে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, প্রকল্পটি আপাতত স্থগিত রয়েছে। বলা হচ্ছে, এর পেছনে বাজারের অনিশ্চয়তা ও ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা কাজ করছে।

এছাড়াও, মধ্যপ্রাচ্যে আদানির অন্যান্য বিনিয়োগ এবং সরবরাহ শৃঙ্খলাও এই অস্থিরতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। জ্বালানি, লজিস্টিকস এবং অবকাঠামো খাতে আদানির উপস্থিতি এই অঞ্চলে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। সংঘাতের ফলে তেলের দাম বৃদ্ধি, শিপিং খরচ বৃদ্ধি এবং সামগ্রিক আঞ্চলিক বাণিজ্যের মন্দা আদানির ব্যবসার উপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে।

আদানি গ্রুপের পক্ষ থেকে এখনো এই বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে, বাজারের বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ভূ-রাজনৈতিক ঝুঁকি আদানি গ্রুপের শেয়ারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে এবং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের রিপোর্টের পর আদানি গ্রুপকে এমনিতেই নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছে। এখন ইরান-ইসরাইল সংঘাত সেই চ্যালেঞ্জকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আদানির মতো বড় বিনিয়োগকারীদের জন্য ভূ-রাজনৈতিক ঝুঁকি মোকাবিলা করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। দ্রুত পরিবর্তনশীল মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি আদানির ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ পরিকল্পনা এবং তাদের বৈশ্বিক পোর্ট নেটওয়ার্কের স্থিতিশীলতাকে প্রভাবিত করতে পারে। সময়ই বলে দেবে, আদানি গ্রুপ এই ভূ-রাজনৈতিক ঝড় কিভাবে মোকাবিলা করে।