
আহসান মোহাম্মদ
ড. ইউনূসের সাথে তারেক রহমানের লন্ডনে বৈঠকের দিকে দেশবাসী গভীর আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে ছিল। অনেকেই নামাজ পড়ে এই বৈঠকের সাফল্যের বিষয়ে দোয়া করেছেন। কিন্তু, বৈঠকের পর পরই একটি অস্বস্থিকর ঘটনা ঘটে। প্রধান উপদেষ্টা এবং বিএনপির পক্ষ থেকে যৌথ সংবাদ সম্মেলন করা হয় এবং নির্বাচনের তারিখে এগিয়ে আনার ঘোষণা দেয়া হয়। প্রশ্ন ওঠে, একটি মাত্র দলকে নিয়ে যৌথ সংবাদ সম্মেলন করা হলো কেন? এই প্রশ্ন আরো জোরালো হয়, যখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে যে নির্বাচনের পরও রাষ্ট্র পরিচালনায় ড. ইউনূসের অংশগ্রহণের প্রস্তাব দিয়েছে বিএনপি। বলা হয় ড. ইউনূস তারেক রহমানকে ভবিষ্যতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
প্রশ্ন হচ্ছে, নির্বাচন পরবর্তী রাষ্ট্র পরিচালনায় ড. ইউনূসের অংশগ্রহণের বিষয়টি আলোচিত হতে পারে কিনা এবং হয়ে থাকলে তাতে ড. ইউনূস আগ্রহী হবেন কিনা? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে ড. ইউনূসকে গভীর ভাবে বোঝার চেষ্টা করতে হবে। এ কথা অস্বীকার করা যাবে না যে, তিনি শাহাবুদ্দিন আহমেদের মত রাষ্ট্র পরিচালনায় অনাগ্রহী নন। বরং এ বিষয়ে তাঁর প্রবল আগ্রহের কারণে তিনি ইতিপূর্বে সেনা শাসনের সহযোগীতায় রাজনৈতিক দলও খুলেছিলেন। হয়তো তিনি গতানুগতিক ক্ষমতালোভী নন। বরং, তিনি মনে করেন বাংলাদেশকে একটি সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে পরিণত করার ক্ষমতা তাঁর আছে। এই ক্ষমতা তিনি প্রয়োগ করতে চান। এই ধরণের কথা তিনি প্রকাশ্যে বলেছেনও। দেশকে উন্নত করার ক্ষেত্রে অবদান রাখতে নির্বাচন ও রাষ্ট্র কাঠামোর সংস্কারের চেয়ে তিনি অনেক বেশী ফোকাস করেছেন বিনিয়োগ আনার মত অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকে। ফলে, বিএনপি যদি তাকে নির্বাচিত সরকারে ভূমিকা রাখার প্রস্তাব দিয়ে থাকে, তাহলে তাঁর সানন্দে রাজি হওয়ারই কথা।
এখানেই জামায়াত ও অন্য দলগুলোর শঙ্কা। নির্বাচিত সরকারে ভূমিকা রাখার অফার পাওয়ার পর নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান তাঁর জন্য কঠিন হতে পারে। বিশেষ করে, এমন এক পরিস্থিতিতে যখন সারাদেশ বিএনপির পেশীশক্তির অধীনে এবং ড. ইউনূস আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়ন, অসামরিক ও সামরিক প্রশাসনকে নিউট্রিলাইজ করা – ইত্যাদিতে তেমন কোন আগ্রহ দেখাননি। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন হলে সত্তরের মত নির্বাচনই হবে। ইতিমধ্যে জোর প্রচারণা চলছে যে আগামী নির্বাচনে বিএনপি ২৯০টি আসন পাবে।
এই পরিস্থিতিকে কীভাবে নিবে ধর্মীয় দলগুলো? ধর্মীয় দলগুলোর জোট হওয়ার কথা হচ্ছিল। অনেকে ভাবছিলেন, এই জোট অভাবনীয় ভালো করতে পারে। সত্তরের মত নির্বাচন হলে সে সম্ভাবনা সুদূর পরাহত হয়ে যাবে। বিএনপি অভাবনীয় রকমের নিরঙ্কুশ বিজয় নিয়ে এসে অকল্পনীয় রকমের অরাজকতা কায়েম করবে এবং আগামী কয়েক বছরের মধ্যে আবার আওয়ামী লীগ ফিরে আসবে।
এই পরিস্থিতিতে ধর্মীয় দলগুলোকে ধৈর্য্য ও প্রজ্ঞার চরম পরকাষ্ঠা প্রদর্শন করতে হবে। তাদের মনে রাখতে হবে, আগামী নির্বাচনে তারা যদি ক্ষমতায় আসে, তাহলে ভারত ও পশ্চিমা বিশ্ব তাদেরকে কোনভাবেই মেনে নেবে না। তাদের জন্য পরিণতি মুরসীর মত হতে পারে। তারা চোখে পড়ার মত বিজয় অর্জন করলেও তার ফলে তাদেরকে আবারো অত্যাচার নির্যাতনের গহ্বরে নিক্ষিপ্ত হতে হবে।
বরং আগামী নির্বাচনে মোটামুটি সম্মানজনক ফলাফল তাদের জন্য উপকারী। বড় বিজয় নয়, তাদের প্রয়োজন নি:শ্বাস নেয়ার মত কিছুটা অবকাশ। তারপর আল্লাহ যখন ভালো মনে করবেন, তখন তাদেরকে বিজয় দিবেন। ফিলিস্তিন যেমন একটি জায়নবাদী দেশ দ্বারা পরিবেষ্টিত, বাংলাদেশকেও তেমনি ঘিরে আছে আরেকটি বর্ণবাদী দেশ। ছোটখোটো ভুল সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশের অবস্থা ফিলিস্তিনের মত হতে সময় লাগবে না।