Image description

যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ভর্তিতে ট্রাম্প প্রশাসনের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা সাময়িকভাবে স্থগিত করেছেন দেশটির বোস্টন জেলা আদালতের এক বিচারক। 

বৃহস্পতিবার (৫ জুন) স্থানীয় সময় দেওয়া এই আদেশে হার্ভার্ডের পক্ষে রায় দেন বিচারক অ্যালিসন বারো। এ সময় বিচারক জানায়, প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞাটি আইনগতভাবে সঠিক নয়।

ট্রাম্প প্রশাসনের এই নিষেধাজ্ঞা অনুযায়ী, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের আর ‘এফ’ বা ‘জে’ ক্যাটাগরির শিক্ষার্থী ভিসায় ভর্তি করাতে পারবে না। এমনকি যেসব শিক্ষার্থী ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন, তাদের ভিসাও বাতিল করা হতে পারে বলে জানানো হয়েছিল। তবে হার্ভার্ড আদালতে এই নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করে জানায়, প্রশাসন কোনো ধরনের বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ উপস্থাপন না করেই জাতীয় নিরাপত্তার কথা বলে শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে বাধা দিচ্ছে— এটি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আইন লঙ্ঘনের শামিল।

 

আদালতে দাখিল করা নথিতে হার্ভার্ড জানায়, এই আদেশ হাজার হাজার শিক্ষার্থীর স্বপ্ন ধ্বংস করছে। তাদের শিক্ষার অধিকার হরণ করা হচ্ছে, আর হার্ভার্ডকে তার শিক্ষাদানের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ছাড়া হার্ভার্ড, হার্ভার্ডই নয়।

বিশ্ববিদ্যালয়টির পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, যদি ওই শিক্ষার্থীরা সত্যিই জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতেন, তাহলে শুধুমাত্র হার্ভার্ড নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রেই তাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হতো। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, শুধু হার্ভার্ডে ভর্তির সুযোগ থেকে তাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। এতে প্রমাণ হয় যে, সিদ্ধান্তটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং প্রতিহিংসাপরায়ণ।

ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, হার্ভার্ড বিদেশি রাষ্ট্র, বিশেষ করে চীনের সঙ্গে বিপজ্জনক সম্পর্ক বজায় রাখছে। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র এক বিবৃতিতে বলেন, হার্ভার্ড এখন হয়ে উঠেছে এক ধরনের উগ্রপন্থী, আমেরিকা-বিরোধী এবং সন্ত্রাসবাদ সমর্থনকারীদের ঘাঁটি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়টি বারবার এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

 

এর আগে, প্রশাসনের তরফ থেকে হার্ভার্ডের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে ভর্তির সুযোগ দেওয়া ‘স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিজিটর প্রোগ্রাম’ সার্টিফিকেশন বাতিলের ঘোষণাও দেওয়া হয়েছিল। ওই পদক্ষেপের পরপরই হার্ভার্ড আদালতের দ্বারস্থ হয় এবং বিচারক বারো তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি স্থগিত করেন।

এই নিষেধাজ্ঞা প্রথমে ছয় মাসের জন্য প্রযোজ্য ছিল, তবে প্রয়োজন হলে সময়সীমা বাড়ানো যেত। ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে এমনকি হার্ভার্ডে ইতোমধ্যে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিলের বিষয়েও নির্দেশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়টির করমুক্ত সুবিধা বাতিল, সরকারি অনুদান বন্ধ এবং একাধিক আইনি চাপ সৃষ্টি করা হয়।

হার্ভার্ড বলছে, এসব পদক্ষেপ মূলত একটি প্রতিশোধমূলক প্রচেষ্টা—কারণ তারা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাঠ্যক্রম, নীতিমালা ও মতাদর্শগত নিয়ন্ত্রণের দাবি মানতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান