Image description

মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা পরিবারের সাথে কাটাতে বাড়ির দিকে ফিরেছে হাজার হাজার শিক্ষার্থী। দীর্ঘদিন ক্যাম্পাসে কাটানোর পর বাড়ি ফিরে যাওয়ার আনন্দ যেন ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। তাই তো দল বেধে তারা ছুটে গেছে শেকড়ের টানে। যেকোনো উৎসবে ক্যাম্পাস বন্ধ থাকলে এমন চিত্র সহজেই ধরা পড়ে। তবে এই চিত্রের আড়ালে আরেকটা ভিন্ন চিত্র আছে। নিজের স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়  ক্যাম্পাসেই ঈদ উদযাপন করছেন কয়েক শত শিক্ষার্থী। ক্যাম্পাসে ঈদ উদযাপনের একেক জনের কারণ একেক রকম হলেও, প্রধান কারণ হলো চাকরি বা একাডেমিক পরীক্ষা। জীবনযুদ্ধে নিজেকে একটু এগিয়ে রাখতেই পরিবারের সাথে ঈদের আনন্দ উপভোগ করা থেকে বঞ্চিত হয়ে ক্যাম্পাসেই ঈদ কাটাবেন তারা। 

এ বছর ঈদুল আজহা উপলক্ষে ৪ জুন থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত ১১ দিনের ছুটি ঘোষণা করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এই ছুটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ টি হলের সব মিলিয়ে কয়েকশত শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসেই ঈদ উদযাপন করবেন। কেউবা চাকরির পড়াশোনা, কেউবা একাডেমিক পরীক্ষা আবার কেউবা অন্যান্য প্রতিবন্ধকতার জন্য পরিবারের সাথে ঈদ উদযাপন করতে পারবে না।

হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, পরিবারের সাথে ঈদ কাটানোর মতো আনন্দ আর কোন কিছুই হতে পারে না। কিন্তু এইবার ঈদটা একটু ভিন্ন। বাড়ি থেকে অনেক দূরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে পরিবার ছাড়াই কাটবে এই ঈদ। পড়াশোনার ব্যস্ততা, পরীক্ষা আর টিকিট না পাওয়ার কারণে বাড়ি ফেরা হয়নি। প্রথমে মনে হচ্ছিল, ঈদ বোধহয় এবারে একা, নির্জন আর মলিন হবে। কিন্তু ক্যাম্পাস যেন নতুন এক পরিবার । ইদ উপলক্ষে হল প্রশাসন সকাল ও দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করেছে। তাছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনগুলো দেখলাম ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে একসাথে কুরবানী, খাওয়া দাওয়া সহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। আশা করছি এক পরিবার ছেড়ে দ্বিতীয় পরিবারের সাথে এবারের ঈদ খুব বেশি খারাপ কাটবে না।

বঙ্গবন্ধু হলের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, সবেমাত্র ৩ জুন অনার্স সপ্তম সেমিস্টার ফাইনাল শেষ হলো। এ মাসের মাঝামাঝিতেই অষ্টম সেমিস্টার শুরু হবে। দীর্ঘদিনের পড়াশোনার না করা,অন্য সমস্যার কারণে পড়াশোনার প্রতি একটা বিশাল অনীহা সৃষ্টি করেছে। মনে হচ্ছে এখন একটু নিজেকে ক্যারিয়ারের দিকে ধাবিত করা উচিত। সবমিলে এবছর হয়তো বাড়িতে ইদ করা হচ্ছে না এবং ক্যাম্পাসে আমার প্রথম ইদ। এই অতি আকাঙ্ক্ষিত,পবিত্র ও উৎসবমুখর দিনে পরিবারের বাইরে ইদ কাটানো সত্যিই বেশ কষ্টকর। বন্ধু,সহপাঠি ও প্রতিবেশিদেরও দারুণভাবে মিস করছি। তবে ইনশাআল্লাহ পরেরবার অবশ্যই পরিবারের সাথে ইদ করবো।

সাদিকুর রহমান নামে আরেক চাকরিপ্রত্যাশী বলেন, পরিবারের সাথে ঈদ উদযাপন করতে কার না মন চায়। কিন্তু জীবনে কিছু পেতে হলে অবশ্যই তো কিছু ছাড় দিতে হবে। আমার অনার্সের রেজাল্ট তেমন আশানুরূপ হয় নি। মাস্টার্স‌ও শেষ হতে চললো। কিন্তু বর্তমানে চাকরি বাজারের যে অবস্থা, এখানে ভালো প্রস্তুতির কোন বিকল্প নেই। ঈদের পর পর‌ই আবার একটা চাকরির পরীক্ষা আছে। আর ঈদের সময় যোগাযোগ ব্যবস্থার যে অবস্থা, তাই ঠিক করেছি এবারের ঈদ ক্যাম্পাসে‌ই কাটাবো। এটাই আমার প্রথম পরিবার ছাড়া ঈদ। সবাইকে অনেক মিস করবো।

এমন সাদিকুর রহমানের মতো কয়েকশত শিক্ষার্থী এ বছর ঢাবি ক্যাম্পাসেই ঈদ উদযাপন করবেন। ক্যাম্পাসে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের ঈদের দিন সকালের নাশতা ও দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেই সাথে এবার ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন ও নেতৃবৃন্দ নানা কর্মসূচি গ্ৰহণ করেছে।

 বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের উদ্যোগে ক্যাম্পাস অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে গরু কুরবানী করবে।  বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা এবারের ঈদ-উল-আজহায় আয়োজন করছে আত ত্বাকওয়া কুরবানী ফেস্ট যা ঢাবি ছাত্রশিবিরের ছাত্রকল্যাণমূলক প্রজেক্ট INSAF (Initiative for Safe and Assured Future) এর ব্যবস্থাপনায় আয়োজন হবে । 'কমল মেডি এইড' এর উদ্যোগে ঈদের দিন ক্যাম্পাসে অবস্থানরতদের জন্য রাতের খাবারের আয়োজন করা হয়েছে।

বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন ও নেতৃবৃন্দের এসব কার্যক্রম নিয়ে ক্যাম্পাসে ঈদে অবস্থান করবে এমন একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নেতৃবৃন্দের এসব উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। একটা সময় দেখা যেতো ছাত্রলীগের কর্তৃত্বের জন্য অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো শিক্ষার্থীবান্ধব কোন কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারতো না। কিন্তু ৫ আগস্ট পরবর্তীতে আমরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ভালো কাজের প্রতিযোগিতা দেখতে পাচ্ছি। আশা করি ভবিষ্যতে‌ও তাদের এমন কার্যক্রম চালু থাকবে।