Image description
 

চলতি বছর করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির খবর পাওয়া বেশ কয়েকটি দেশের মধ্যে ভারতই সবশেষ। ভাইরাসটিকে বিশ্বব্যাপী মহামারি ঘোষণা করার পাঁচ বছরের বেশি সময় পরও, এর নতুন নতুন ভেরিয়েন্টের আবির্ভাব অব্যাহত রয়েছে। 

 

 

ভারতে বর্তমানে কতজন কোভিড আক্রান্ত রোগী আছেন?

 

ভারতের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার (৫ জুন) পর্যন্ত দেশটিতে ৫ হাজার ৩৬৪ জন সক্রিয় রোগী রয়েছেন। 
 
এছাড়া ১ জানুয়ারি থেকে ভারতে ৪ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি কোভিড থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছেন এবং ৫৫ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
 

 

কোন ভেরিয়েন্টে নতুন রোগী বাড়ছে?

 

বর্তমানে করোনাভাইরাসের প্রধান রূপটি যা এই রোগের নতুন বিস্তার ঘটাচ্ছে সেটি NB.1.8.1 নামে পরিচিত। এর কারণে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ড, চীন এবং হংকংসহ অন্যান্য দেশে আক্রান্তের খবর পাওয়া গেছে। 
 
বিশেষ করে এই NB.1.8.1 এখন চীন এবং হংকংয়ে উদ্বেগের মূল কারণ। তবে ভারতে কিছু ক্ষেত্রে LF.7 নামে দ্বিতীয় আরেকটি ভেরিয়েন্টও দায়ী। 
  
 
অন্যদিকে ইংল্যান্ডে NB.1.8.1 ভ্যারিয়েন্টের ১৩টি কেস রেকর্ড করার কথা জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য সুরক্ষা সংস্থা।
 
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, এপ্রিলের শেষ দিকে বিশ্বব্যাপী জমা দেয়া সিকোয়েন্সের প্রায় ১০.৭ শতাংশ ছিল NB.1.8.1। যদিও, তার এক মাস আগে এটি ছিল মাত্র ২.৫ শতাংশ।
 

 

NB.1.8.1 ভেরিয়েন্ট সম্পর্কে যা জানা যায়

 

করোনার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট NB.1.8.1 প্রথম শনাক্ত হয় এই বছরের জানুয়ারিতে। 
 
এটি একটি ‘রিকম্বিন্যান্ট’ ভেরিয়েন্ট, যার অর্থ এটি দুটি বা ততোধিক বিদ্যমান ভেরিয়েন্টের জেনেটিক মিশ্রণ থেকে উদ্ভূত হয়েছে। ২০২৫ সালের ২৩ মে NB.1.8.1 ভেরিয়েন্টকে ‘পর্যবেক্ষণাধীন ধরণ (ভিইউএম)’ ঘোষণা করে ডব্লিউএইচও।
 
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০২৩ সালের সংজ্ঞা অনুসারে, ভিইউএম হলো এমন একটি ভেরিয়েন্ট যার জিনগত পরিবর্তন হয়েছে, যা করোনাভাইরাসের আচরণকে প্রভাবিত করতে পারে বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা। প্রাথমিক তথ্য থেকে জানা যায়, এই ভেরিয়েন্টটি অন্যদের তুলনায় দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে বা আরও সহজে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তবে এটি এখনো নিশ্চিত করা হয়নি।
 
এছাড়া স্বাস্থ্য, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা সংক্রমণের ওপর করোনার এই ভেরিয়েন্টের প্রভাবের প্রমাণ এখনও স্পষ্ট নয়।
 

 

আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে কেন?

 

লারা হেরেরো নামে একজন ভাইরোলজিস্ট গত ২৮ মে দ্য কনভারসেশনে লেখেন, এখনো গবেষণার অধীনে থাকলেও এ পর্যন্ত প্রাপ্ত প্রমাণ থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, NB.1.8.1 ভেরিয়েন্টটি সহজে ছড়িয়ে পড়তে পারে। 
 
 
 
হেরেরো লিখেছেন, ‘ল্যাব-ভিত্তিক মডেল ব্যবহার করে গবেষকরা দেখেছেন যে পরীক্ষিত বেশ কয়েকটি ভেরিয়েন্টের মধ্যে, নতুন ভেরিয়েন্টটির মানব কোষের রিসেপ্টরগুলোর সাথে আবদ্ধ হওয়ার ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি। এর থেকে বোঝা যায় এটি পূর্ববর্তী ভেরিয়েন্টগুলোর তুলনায় কোষগুলোকে আরও দক্ষতার সাথে সংক্রমিত করতে পারে।’
 
রেনো স্কুল অব মেডিসিনের নেভাদা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি এবং ইমিউনোলজির অধ্যাপক সুভাষ ভার্মা সিবিএস নিউজকে বলেছেন, ‘এটি আরও বেশি সংক্রমণযোগ্য’।
 

 

লক্ষণগুলো কী কী?

 

NB.1.8.1 ভেরিয়েন্টের সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে গলা ব্যথা, কাশি, পেশী ব্যথা, জ্বর এবং নাক বন্ধ থাকা। এটি বমি বমি ভাব এবং ডায়রিয়ার মতো গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল লক্ষণগুলোর কারণও হতে পারে।
 

 

নতুন ভেরিয়েন্টের বিরুদ্ধে কি কোভিড ভ্যাকসিন কার্যকর?

 

চিকিৎসকরা বলছেন, কোভিড সংক্রমণ, এ সংক্রান্ত গুরুতর অসুস্থতা এবং আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু ঠেকাতে টিকা একটি শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। 
 
তবে ভাইরোলজিস্ট হেরেরো’র মতে, সহজে ছড়িয়ে পড়ার পাশাপাশি NB.1.8.1 টিকা বা পূর্ববর্তী সংক্রমণ থেকে অর্জিত রোগ প্রতিরোধ সক্ষমতা ‘আংশিকভাবে এড়িয়ে যেতে পারে’।
 
স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বলছে, বর্তমান কোভিড টিকাগুলো করোনার এই ভেরিয়েন্টের বিরুদ্ধে ‘আপাতত’ কার্যকর হবে এবং মানুষকে গুরুতর অসুস্থতা থেকে রক্ষা করবে বলে আশা করা হচ্ছে। 
 
 

 

উদ্বেগ কতটা? 

 

বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাসের নতুন ভেরিয়েন্টটি আগের যেকোনো ভেরিয়েন্টের চেয়ে বেশি মারাত্মক বা প্রাণঘাতী- এমন কোনো প্রমাণ মেলেনি। তবে, এটি আরও সহজে ছড়িয়ে পড়ে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
 
সূত্র: আল জাজিরা