
নির্বাচন নিয়ে তোড়জোড় চলছে রাজনৈতিক মহলে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) সে অনুযায়ী প্রস্তুতিও এগিয়ে নিচ্ছে।
ইসি সূত্র জানায়, নির্বাচন ঘনিয়ে এলেও জাতীয় পরিচয়পত্রের মতো একটি জটিল ও শ্রম সাপেক্ষ কাজ সম্পন্ন করতে হয়। এক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ খালি আছে ১০০টির মতো। এনআইডির তদন্ত থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজ তাদের সম্পন্ন করতে হয়।
এ ছাড়া ডাটা এন্ট্রি অপারেটরদের ভূমিকাও অত্যাবশ্যকীয়। কেননা, তাদের ছাড়া করণিক কাজগুলো করা যায় না। কিন্তু এই পদেও লোকবলের অনেক ঘাটতি। ভোটার তালিকা প্রণয়ন, সীমানা পুনর্নির্ধারণ, ভোটকেন্দ্র স্থাপন, রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের তদন্ত- তারাই সম্পন্ন করে থাকেন। ফলে সব কাজেই সময় লেগে যাচ্ছে বেশি। কিন্তু বারবার তাগাদা দিয়েও লোকবল নিয়োগের কাজে অগ্রগতি হচ্ছে না।
জানা গেছে, নিয়োগ, পদোন্নতি সংক্রান্ত কমিটির দায়িত্বে রয়েছেন নির্বাচন কমিশনার তাহমিদা আহমদ। তিনি এ নিয়ে কয়েকটি বৈঠক করলেও আইনি জটিলতাসহ নানা কারণে কাজের অগ্রগতি নেই। বিশেষ করে বিভিন্ন পদে দায়ের করা মামলা নিয়োগের অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন অনেকে। সম্প্রতি জনবল নিয়োগের জন্য যথাযথ ব্যবস্থাও নেওয়ার জন্য জনবল ব্যবস্থাপনা শাখাকে নির্দেশনাও দিয়েছেন তিনি।
সূত্রগুলো জানায়, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের বর্তমান সাংগঠনিক কাঠামোতে রাজস্ব খাতে ০১-২০ তম গ্রেডে সর্বমোট তিন হাজার ৯৬৪টি পদ রয়েছে। আউটসোর্সিং এক হাজার ১৪৮টি পদসহ সর্বমোট পদের সংখ্যা পাঁচ হাজার ১১২টি। বর্তমানে দ্বিতীয় গ্রেডের যুগ্মসচিব বা সমমানের পদে তিনটি পদ শূন্য রয়েছে।
চতুর্থ থেকে ষষ্ঠ গ্রেডের পদে কোনো শূন্য পদ নেই। তবে নবম গ্রেডের ৬২৯টি পদের মধ্যে ৮৭টি পদ এবং দশম গ্রেডের ৫৭৩টি পদের মধ্যে ২০১টি পদ শূন্য রয়েছে। ১১ থেকে ২০তম গ্রেডের বর্তমানে এক হাজার ২৩টি পদ শূন্য। সবমিলিয়ে শূন্য রয়েছে এক হাজার ৭৮২টি পদ।
কর্মকর্তারা বলছেন, ডাটা এন্ট্রি অপারেটরের ৪৬৮টি পদে জনবল নিয়োগের লক্ষ্যে ২০১৯ সালের ২০ মে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির পরিপ্রেক্ষিতে এক লাখ ৩৮ হাজার ৮৯৪ জন প্রার্থী আবেদন করেন। কিন্তু আইডিয়া প্রকল্পের আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে নিয়োগপ্রাপ্ত ডাটা এন্ট্রি অপারেটরদের হাইকোর্ট বিভাগে মামলাজনিত কারণে দীর্ঘদিন ওই নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিষয়ে কার্যক্রম নেওয়া সম্ভব হয়নি।
পরে ২০২৩ সালের ১৬ জুন আবেদনকারীদের নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষা নেওয়া হয় এবং নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষায় ১৮ হাজার ৮১৫ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেন। পরে আদালতের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে আইডিয়া প্রকল্পের আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মরত ডাটা এন্ট্রি অপারেটরদের মধ্যে ৭৪৭ জনকে এবং নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ১৮ হাজার ৮১৫ জনকে সর্বমোট ১৯ হাজার ৫৬২ জনকে লিখিত পরীক্ষার জন্য মনোনীত করা হয়।
এরপর ২০২৪ সালের ১৭ জুন লিখিত পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু উপজেলা পরিষদ নির্বাচন চলমান থাকায় এবং আইডিয়া প্রকল্পের আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মরত ডাটা এন্ট্রি অপারেটরদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ওই পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। সেই পরীক্ষা আর হয়নি।
এদিকে নবম ও দশম গ্রেডের (উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও নির্বাচন কর্মকর্তা) কিছু পদে মামলাজনিত কারণে পদোন্নতি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এই অবস্থায় নির্বাচন সম্পন্ন করা ব্যাপক কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজ বলেন, প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তাদের আমরা পাবলিক সার্ভিস কমিশনে চাহিদা দেওয়ার মাধ্যমে নিয়োগ দিই। তারা নন ক্যাডার থেকে সুপারিশ করে থাকে। এরইমধ্যে আমরা তাদের পত্র দিয়েছি। আশা করি, সংকটের সমাধান হয়ে যাবে।
ইসির সচিব আখতার আহমেদ বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়া একটি সময়সাপেক্ষ বিষয়। আমরা ইতিমধ্যে নিচের গ্রেডের পদগুলো পূরণে উদ্যোগ নিয়েছি। ওপরের পদগুলোও পূরণ করা হবে। তবে মামলাসহ আইনি জটিলতার কারণে কিছু বিষয় ঝুলে আছে।
নির্বাচন কমিশনার তাহমিদা আহমদ বলেন, আমাদের কমিটি এ নিয়ে কাজ করছে। শূন্য পদগুলো দ্রুত পূরণের জন্য এরইমধ্যে কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
নির্বাচন আয়োজন নিয়ে যা জানা যাচ্ছে
অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে বারবারই বলা হচ্ছে, জাতীয় নির্বাচন চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাপান সফরে গিয়ে চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী জুনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, যেকোনো পরিস্থিতিতে আগামী বছরের জুনের মধ্যে বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, যা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গৃহীত সংস্কার কার্যক্রম সামনে এগিয়ে নিতে সহায়ক হবে।
সবশেষ জুনের শুরুতেই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফার আলোচনার পর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, ডিসেম্বর থেকে জুন-যেকোনো সময় ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন হতে পারে।
তিনি বলেন, অধ্যাপক ইউনূস বারবার বিভিন্ন জায়গায় বলেছেন, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। সেটা ডিসেম্বরে হতে পারে, জানুয়ারিতে হতে পারে, ফেব্রুয়ারি, মার্চ, এপ্রিল, মে বা জুনে হতে পারে। তবে ৩০ জুনের পরে হবে না।
গত নভেম্বরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন ও চার নির্বাচন কমিশনার শপথ নেন। রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন সংবিধানের ১১৮ (১) ধারায় সাবেক সচিব এ এম এম নাসির উদ্দিনকে নতুন সিইসি এবং চারজনকে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেন।
বছরের শুরুতেই সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিন জানান, আগামী ডিসেম্বরে যদি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তাহলে অক্টোবরের মধ্যে সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে হবে। ডিসেম্বরে নির্বাচনের জন্য তার দুই মাস আগে তফসিল ঘোষণা করতে হবে। এর অর্থ হলো আইনকানুন এবং বিধিমালাসহ সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করার জন্য অক্টোবর পর্যন্ত সময় আছে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ২২ ধরনের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে সংস্থাটি। ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিভিন্ন অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ, রাজনৈতিক দল ও পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন, আইন-বিধি সংস্কার, ভোটার তালিকা ও ভোটকেন্দ্র স্থাপনসহ ২২টি কর্মপরিকল্পনা নিয়ে কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।