
গাজায় দীর্ঘ সময় ধরে চলা যুদ্ধে ইসরাইলি সেনাবাহিনী এক চরম যান্ত্রিক ও রসদ সংকটে পড়েছে। তাদের ট্যাংক, সাঁজোয়া যান এবং বিভিন্ন অস্ত্র ব্যবস্থায় গুরুতর প্রযুক্তিগত সমস্যা দেখা দিয়েছে। এই সংকটের ফলে সামরিক অভিযান পরিচালনা কঠিন হয়ে পড়েছে এবং সেনাবাহিনী বলছে, অনেক সরঞ্জাম এখন ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
গত দুই বছর ধরে গাজা, লেবানন ও সিরিয়ায় বিভিন্ন মিশনে অংশগ্রহণের কারণে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর যন্ত্রপাতির স্থায়িত্ব কমে গেছে। বিশেষ করে ৭ম সাঁজোয়া ব্রিগেডের ট্যাংকগুলোর ইঞ্জিন, ট্র্যাক ও কন্ট্রোল সিস্টেমের মতো গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশের সংকট গুরুতর রূপ নিয়েছে। এই যান্ত্রিক সংকটের পেছনে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ ও নিয়মিত ব্যবহারের ফলে ক্ষয়িষ্ণু হয়ে পড়া সরঞ্জামের ভূমিকা রয়েছে।
ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম মা’আরিভের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় মোতায়েন সেনা, কোম্পানি ও ব্যাটালিয়নের কমান্ডার এবং জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে, সেনাবাহিনীর অনেক সরঞ্জাম এখন ব্যবহার-অযোগ্য এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশের ঘাটতি প্রকট। ৭ম ব্রিগেড ছাড়াও সেনাবাহিনীর অন্যান্য ইউনিটেও যেমন সাঁজোয়া বাহিনী, কামান ও পদাতিক বাহিনীতে এই সমস্যা দেখা দিয়েছে।
একটি সাম্প্রতিক ঘটনার উল্লেখও করা হয়েছে যেখানে গাজার জাবালিয়া এলাকায় গিভাতি ব্রিগেডের একটি ট্যাংকের কামান অতিরিক্ত গরম হয়ে আগুন ধরে যায়। দমকল বাহিনী ঘটনাস্থলে গেলে হামাসের পুঁতে রাখা আইইডি বিস্ফোরণের শিকার হয়, যার ফলে তিন সেনা নিহত ও দুইজন গুরুতর আহত হন।
একজন ঊর্ধ্বতন ইসরাইলি কর্মকর্তা জানান, যুদ্ধজাহাজ ও সরঞ্জামের রক্ষণাবেক্ষণ, যন্ত্রাংশ প্রতিস্থাপন ও সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মারাত্মক অভাব চলছে। এই সংকট সামরিক কার্যক্রমকে প্রভাবিত করছে এবং সেনাবাহিনীর যুদ্ধ সক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া গাজা সামরিক অভিযানে এ পর্যন্ত প্রায় ৫৪,৭০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু। জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থাগুলো সতর্ক করেছেন যে, গাজার ২২ লাখেরও বেশি বাসিন্দা এখন দুর্ভিক্ষের মুখে।
মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে ২০২৪ সালের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। একই সঙ্গে ইসরাইল আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) গণহত্যার অভিযোগে বিচারাধীন রয়েছে।
গাজার এই দীর্ঘস্থায়ী সংকট ও যুদ্ধ পরিস্থিতি শুধু সামরিক দিক থেকে নয়, মানবিক ও নৈতিক দিক থেকেও বিশ্বের নজর কেড়েছে। যুদ্ধের এই দীর্ঘপ্রতীক্ষিত প্রভাবের মধ্যেও ইসরাইলি সেনাবাহিনীর যান্ত্রিক ও রসদ সংকট তাদের সামরিক অভিযানকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে, যা সামনের দিনগুলোতে অঞ্চলের স্থিতিশীলতার ওপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে।