
গাজায় যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত ইসরাইলের একটি সাহায্যকেন্দ্রের কাছে প্রাণহানির ঘটনা নিয়ে প্রকাশিত বিবিসি’র প্রতিবেদন বেশ সমালোচনার মুখে পড়ে। হোয়াইট হাউস বিবিসির ওই প্রতিবেদনকে ‘হামাসের কথা’ বলে কটাক্ষ করেছে।তবে যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রায়ত্ত সম্প্রচার সংস্থাটি জোরালোভাবে এর প্রতিবাদ জানিয়েছে।
হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজা সিভিল ডিফেন্স জানায়, রোববার গাজার একটি সাহায্যকেন্দ্রের কাছে ইসরাইলি বাহিনীর গুলিতে অন্তত ৩১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হন।
তবে ইসরাইলি সেনাবাহিনী এ অভিযোগ অস্বীকার করে জানায়, ওই স্থানে তারা বেসামরিক লোকদের ওপর কোনো গুলি চালায়নি। বরং সাহায্যকেন্দ্রটির কর্মকর্তারাও হামাসকে ‘ভুয়া গুজব ছড়ানোর’ অভিযোগে দোষারোপ করেন।
এ নিয়ে হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট সেদিন বলেন, ‘আমরা হামাসের কথা অন্ধভাবে বিশ্বাস করি না, যেমনটা কিছু গণমাধ্যম—বিশেষ করে বিবিসি—করেছে।’
তিনি অভিযোগ করেন, বিবিসি বারবার শিরোনাম বদলেছে এবং পরে তাদের প্রতিবেদন সরিয়ে নিয়েছে। যদিও এর পক্ষে কোনো নির্দিষ্ট প্রমাণ দেননি তিনি।
এর প্রতিক্রিয়ায় একটি আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে বিবিসি জানায়, ‘আমরা কোনো প্রতিবেদন সরাইনি। আমরা আমাদের সাংবাদিকতার পক্ষে আছি। ঘটনাটি একটি চলমান পরিস্থিতি হওয়ায় মৃত্যুর সংখ্যা আপডেট হওয়া স্বাভাবিক।’
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যটি ব্যাখ্যা করে বলেছে, বিভিন্ন সময়ে মেডিকদের তথ্য অনুযায়ী ১৫ জন, হামাসের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অনুসারে ৩১ জন এবং শেষপর্যন্ত রেডক্রস জানায় অন্তত ২১ জন নিহত—এই তিন তথ্যই তাদের প্রতিবেদনে উৎসসহ উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটি (আইসিআরসি) জানায়, তাদের রাফাহ ফিল্ড হাসপাতালে ১৭৯ জন আহত এসেছেন, যাদের মধ্যে ২১ জনকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে।
অন্যদিকে ওয়াশিংটন পোস্ট এ সংক্রান্ত তাদের একটি প্রতিবেদন নির্ভরযোগ্য সূত্রের ঘাটতির কারণে সরিয়ে ফেলে এবং পরে তা আপডেট করে জানায়, ঘটনার জন্য কোন পক্ষ দায়ী—সে বিষয়ে এখনো নির্ভরযোগ্য তথ্য নেই।
বিবিসি এর আগেও ফেব্রুয়ারিতে ‘Gaza: How To Survive A Warzone’ শিরোনামের এক ডকুমেন্টারির কারণে বিতর্কে পড়ে। পরে তারা স্বীকার করে যে, ডকুমেন্টারিতে ১৩ বছর বয়সি বিবরণদাতা একজন হামাস নেতার ছেলে ছিল—যা একটি ‘গুরুতর ত্রুটি’।
সম্প্রতি গাজায় মার্কিন-সমর্থিত ইসরাইলের জিএইচএফ (গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন) পরিচালিত সাহায্যকেন্দ্রগুলোর আশেপাশে তিনদিন ধরেই সহিংসতা চলছে।
হামাস জানায়, এর মধ্যে গত রোববার ইসরাইলি বাহিনীর গুলিতে ৩১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হন।এছাড়া সোমবার ৩ জন নিহত ও ৩৫ জন আহত হন। আর মঙ্গলবার ২৭ জন নিহত ও ৯০ জন আহত হয়েছেন।
এমন প্রেক্ষাপটে নিরাপত্তা পরিস্থিতি পুনর্মূল্যায়নের জন্য জিএইচএফ বুধবার তাদের কার্যক্রম বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে।
অন্যদিকে অবরুদ্ধ ও দুর্ভিক্ষ কবলিত গাজায় তাৎক্ষণিক, নিঃশর্ত ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। তবে বুধবার যুক্তরাষ্ট্র সে প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে। এর ফলে গাজায় যুদ্ধবিরতি ও মানবিক সহায়তা পৌঁছানো আবারও হুমকির মুখে পড়ল।
অন্যদিকে এ সময়ের মধ্যে দখলদার ইসরাইলের টানা হামলায় (গত ২৪ ঘণ্টায়) গাজা উপত্যকায় প্রায় ১০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং অব্যাহত সহায়তা অবরোধের কারণে দুর্ভিক্ষ ও মানবিক সংকট আরও প্রকট হয়েছে।
মূলত এ ঘটনাগুলি ইঙ্গিত দেয় যে, গাজায় মানবিক সহায়তা দেওয়ার পশ্চিমা কাঠামো রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা জটিলতার মধ্যেই পড়ে গেছে।
দখলদার ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র যেখানে জিএইচএফ-এর মাধ্যমে হামাসকে পাশ কাটানোর চেষ্টা করছে, সেখানে ফিলিস্তিনিরা মানবিক সহায়তা নিতে গিয়ে প্রায়শই প্রাণ হারাচ্ছে—এবং এর প্রতিটি ঘটনাই এখন মিডিয়ার ন্যারেটিভ যুদ্ধের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।সূত্র: এএফপি, বিবিসি