
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও শক্তিশালী সামরিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে টানাপোড়েনের সূচনা কোথা থেকে শুরু হয়েছিল—এই প্রশ্নের জবাবে এখন একাধিক সূত্র একই দিকে আঙুল তুলছে: ফার্স্টলেডি বুশরা বিবিকে ঘিরে দুর্নীতির অভিযোগ।
সোমবার (২ জুন) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে দ্য নিউজ ডটকমডটপিকে।
প্রতিবেদনটিতে দাবি করা হয়েছে, সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া তখনকার প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের হাতে একটি ফোল্ডার তুলে দেন, যেখানে বুশরা বিবি ও তার ঘনিষ্ঠজনদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ধরা হয়। কিন্তু ইমরান খান স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন—‘বুশরা বিবি আমার রেড লাইন’।
একাধিকবার সতর্কবার্তা, একাধিকবার প্রত্যাখ্যান
সূত্র জানায়, ফোল্ডারের তথ্যকে ‘একপাক্ষিক’ বলে উড়িয়ে দেন ইমরান খান। জেনারেল বাজওয়া তাকে যখন ফারাহ গোগি, উসমান বুজদারসহ বুশরা বিবির ঘনিষ্ঠদের আর্থিক লেনদেন খতিয়ে দেখার পরামর্শ দেন, তখনও ইমরান খান অনড় অবস্থান নেন।
পরবর্তী ধাপে আইএসআই প্রধান লে. জেনারেল আসিম মুনির (বর্তমানে ফিল্ড মার্শাল) খানকে এ বিষয়ে গোয়েন্দা রিপোর্টে অবহিত করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এর ফলে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেন ইমরান এবং মাত্র একদিনের মধ্যে বাজওয়াকে ফোন করে মুনিরকে সরানোর নির্দেশ দেন।
তখন ইমরান সরাসরি জেনারেল ফয়েজ হামিদকে আইএসআই প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার প্রস্তাব দেন—যদিও ফয়েজের নাম সরকারি প্যানেলেই ছিল না। প্রথাগত ‘বিদায়ী চা-চক্রে’ আসিম মুনিরকে আমন্ত্রণ জানানোর প্রস্তাবও তিনি প্রত্যাখ্যান করেন।
পরবর্তীতে ভিন্ন বার্তা, বিপরীত দাবি
সম্প্রতি নিজের ‘এক্স’ অ্যাকাউন্টে (সাবেক টুইটার) ইমরান খান স্বীকার করেন যে, তিনি জেনারেল আসিম মুনিরকে বরখাস্ত করেছিলেন। সেই সঙ্গে দাবি করেন, পরে তিনি বুশরা বিবির সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু তিনি কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। তবে এই ‘মধ্যস্থতাকারী’র পরিচয় কখনো প্রকাশ করেননি, এমনকি কোনো স্বাধীন সূত্র থেকেও এই দাবি নিশ্চিত করা যায়নি।
এই বক্তব্য ইমরানের আগের অবস্থানের সম্পূর্ণ বিপরীত। ২০২৩ সালের মে মাসে ব্রিটিশ সংবাদপত্র দ্য টেলিগ্রাফে-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছিল, বুশরা বিবির সংশ্লিষ্ট দুর্নীতির তদন্ত করতে চাওয়াতেই আসিম মুনিরকে অপসারণ করা হয়েছিল। সেসময় ইমরান টুইট করে একে সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে দাবি করেন।
অবশেষে যার বিরোধিতা, তাকেই সমর্থন?
বিরোধের শুরুর চার বছর পর, ২০২২ সালের নভেম্বরে, ইমরান খান জেনারেল আসিম মুনিরের সেনাপ্রধান পদে নিয়োগকে প্রকাশ্যে সমর্থন করেন। অথচ তার কিছুদিন আগেই পিটিআই নেতৃত্বাধীন ‘লং মার্চ’—যার মূল লক্ষ্য ছিল সেই নিয়োগ প্রতিহত করা।
যদিও আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে সেনাপ্রধান নিয়োগ প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ারে, তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ড. আরিফ আলভি লাহোরে গিয়ে ইমরান খানের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং তার সম্মতির সংকেত দেন।
বিশ্লেষকদের মতে, বুশরা বিবিকে ঘিরে এই অনমনীয় অবস্থান কেবল ইমরান খানের রাজনৈতিক কৌশলই নয়, বরং সামরিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্কের একটা বড় ধরনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। যার রেশ পরে দেখা গেছে রাজনৈতিক চিত্রনাট্যের প্রতিটি দৃশ্যে—কারাগার, আদালত, এমনকি সেনা সদর দফতরেও।