
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানকে ‘আর গ্রহণযোগ্য নয়’ বলে আখ্যা দিয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎস।
মঙ্গলবার (২৬ মে) ফিনল্যান্ডের তুরকু শহরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, হামাসবিরোধী যুদ্ধের কথা বলে গাজায় যে বোমাবর্ষণ চলছে, তা আর কোনো যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না। খবর রয়টার্স
ম্যার্ৎসের এই মন্তব্যকে জার্মান রাজনৈতিক নেতৃত্বের অন্যতম কঠিন অবস্থান হিসেবে দেখা হচ্ছে। ২০২৩ সালের অক্টোবরের পর এটাই সবচেয়ে স্পষ্ট বার্তা, যখন হামাসের হামলার পর ইসরায়েল ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখায়। ঐতিহাসিকভাবে নাৎসি যুগের পাপের দায় থেকে ইসরায়েলের প্রতি ‘বিশেষ দায়বদ্ধতা’ মেনে চলা জার্মানির জন্য এ এক নজিরবিহীন অবস্থান।
ম্যার্ৎস বলেন, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলা আর সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের লক্ষ্য পূরণে কাজ করছে বলে মনে হচ্ছে না। এই মুহূর্তে যা ঘটছে, তা আমি খুব সমালোচনামূলকভাবে দেখছি। এখন সময় এসেছে যখন আমাকে এটা প্রকাশ্যে বলতে হচ্ছে—এই হামলা আর যুক্তিসঙ্গত নয়।
বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো—ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনে জয়ের পর ম্যার্ৎস ঘোষণা দিয়েছিলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকলেও তিনি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে বার্লিনে স্বাগত জানাবেন। এমনকি তার কার্যালয়ে এখনও ঝুলছে ইসরায়েলের জিকিম সমুদ্রসৈকতের ছবি, যেখানে ২০২৩ সালে হামাসের হামলা হয়েছিল।
ম্যার্ৎসের কণ্ঠে এই পরিবর্তনের প্রতিধ্বনি পাওয়া যায় আরও স্পষ্টভাবে, যখন তিনি জানান, চলতি সপ্তাহেই নেতানিয়াহুর সঙ্গে তার কথা হবে—যদিও ইসরায়েলে অস্ত্র রপ্তানি নিয়ে কোনো মন্তব্য তিনি করেননি।
চ্যান্সেলরের কড়া সমালোচনার পরপরই জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়োহান ভাডেফুলও একই সুরে বক্তব্য রাখেন। সরকারের শরিক সমাজতান্ত্রিক ডেমোক্র্যাটদের (এসপিডি) পক্ষ থেকে ইসরায়েলে অস্ত্র রফতানি বন্ধের দাবিও তোলা হয়েছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত ‘সিভি জরিপ’ বলছে, ৫১ শতাংশ জার্মান নাগরিক ইসরায়েলে অস্ত্র রফতানির বিপক্ষে। ২০২১ সালে যেখানে ৪৬ শতাংশ জার্মান ইসরায়েলের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করতেন, ২০২৫ সালের মে মাসে বার্টেলসমান ফাউন্ডেশনের জরিপে সেই সংখ্যা নেমে এসেছে ৩৬ শতাংশে।
জার্মানির ইহুদি বিদ্বেষবিষয়ক কমিশনার ফেলিক্স ক্লেইন বলেন, হোলোকাস্টের কারণে যে সমর্থন ইসরায়েল পায়, তা সব কিছু মেনে নেওয়ার বৈধতা নয়।
ইসরায়েলি ইতিহাসবিদ মোশে জিমারম্যানের মতে, সাধারণ জার্মানদের মধ্যে আজ যে মনোভাব, তা বিশ্বের অন্য জনগোষ্ঠীর মতোই। তবে রাজনৈতিক অভিজাতরা এখনও নাৎসি যুগের অতীত থেকেই তাদের অবস্থান নির্ধারণ করে থাকেন।
ইসরায়েলের বার্লিন দূতাবাস ম্যার্ৎসের বক্তব্যকে হালকাভাবে নেয়নি। প্রতিক্রিয়ায় তারা জানিয়েছে, ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎস আমাদের বন্ধু। তিনি যখন এমন সমালোচনা করেন, আমরা মনোযোগ দিয়ে শুনি।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভ্যন্তরে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থনের ভূমিকায় বড় পরিবর্তন আসছে। কানাডা, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য ইতিমধ্যে গাজায় চলমান মানবিক সংকট নিয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের হুমকি দিয়েছে। এখন সেই কণ্ঠে যোগ দিলো জার্মানি, যাদের সমর্থন এতদিন ধরে তেল আবিবের জন্য সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বলে বিবেচিত ছিল।