
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে হুমকি নয়, বরং সম্মানের ভিত্তিতে বাণিজ্য সম্পর্ক অব্যাহত রাখতে চায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ইইউ-এর পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ মার্কিন শুল্ক আরোপের হুমকির জবাবে এ কথা বলেন ইইউ বাণিজ্য প্রধান ম্যারোস সেফকোভিচ।
সেফকোভিচ বলেছেন, ইইউ এমন একটি বাণিজ্য চুক্তি চায়, যা উভয় পক্ষের জন্যই সুবিধাজনক হবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য সম্পর্কের কোনও তুলনা নেই। তবে এই সম্পর্ক অবশ্যই হুমকির ওপর নয়, বরং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের ভিত্তিতে অগ্রসর হতে হবে।
এর আগে, চলমান ইইউ-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য আলোচনার অগ্রগতি নিয়ে অধৈর্য হয়ে ট্রাম্প জানান, জুনের ১ তারিখ শুল্ক বৃদ্ধির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তিনি নিয়ে ফেলেছেন।
পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি কোনও চুক্তি চাচ্ছি না। আমরা চুক্তি নির্ধারণ করে দিয়েছি। যদিও সঙ্গে সঙ্গেই তিনি ইঙ্গিত দেন, কোনও ইউরোপীয় কোম্পানির বড় বিনিয়োগ এলে তিনি শুল্ক আরোপে দেরি করতে পারেন।
যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বড় বাণিজ্যিক অংশীদার হচ্ছে ইইউ। মার্কিন সরকারের তথ্য অনুযায়ী, দুপক্ষের মধ্যে প্রায় হাজার বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ৬০০ বিলিয়ন ডলার মূল্যমানের পণ্য ইইউ থেকে আমদানি করেছে এবং ইইউ প্রায় ৩৭০ বিলিয়ন ডলার অর্থমূল্যের পণ্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করেছে।
স্বাভাবিকভাবেই, এত বড় বাণিজ্যে বাড়তি শুল্কারোপ কারও জন্যই ভালো ফল বয়ে আনবে না। সে কথাই স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন ইউরোপীয় নেতারা।
আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মিশেল মার্টিন বলেন, আমাদের এই পথে (শুল্ক আরোপ) যাওয়ার প্রয়োজন নেই। আলোচনার মাধ্যমেই টেকসই সমাধান সম্ভব।
ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লরাঁ সাঁ-মার্তিন বলেন, যে কোনও উত্তেজনা প্রশমনের পক্ষে আমাদের অবস্থান অপরিবর্তিত আছে। তবে প্রয়োজনে জবাব দিতে আমরা প্রস্তুত।
জার্মান অর্থমন্ত্রী ক্যাথেরিনা রেইশ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বোঝাপড়ায় পৌঁছাতে আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে।
চলতি বছরের এপ্রিলে ইইউসহ বেশ কয়েকটি দেশের ওপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন ট্রাম্প। অধিকাংশ ইউরোপীয় পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়।
পরে ৮ জুলাই পর্যন্ত তিন মাসের জন্য এই বাড়তি শুল্ক স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিলেও, ১০ শতাংশের প্রাথমিক শুল্ক বহাল রাখে মার্কিন প্রশাসন।
চীনা পণ্যের ওপরও শুল্ক বহাল থাকে, যদিও তা অনেকটাই কমানো হয়।
ইইউ’র ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর ২৫ শতাংশ মার্কিন শুল্ক এখনও বহাল রয়েছে।
ইইউ পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিলেও তা আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। স্থগিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২০ বিলিয়ন ডলার অর্থমূল্যের মার্কিন পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা ছিল।
উল্লেখ্য, ইউরোপের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতির বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছেন ট্রাম্প। তার দাবি, ইইউ যুক্তরাষ্ট্রে যতটা রফতানি করে, ততটা আমদানি করে না এবং কৃষিপণ্য ও গাড়ির নীতিমালায় ইউরোপীয় নীতিগুলো মার্কিন কোম্পানিগুলোর জন্য ভিন্ন।