
জনগণের ক্ষোভ এতটাই বেড়ে যায় যে, বিরোধী দলগুলো তার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার হুমকি দেয়। আর তার পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রী পদত্যাগ করেন।চালের দাম নিয়ে এক বিতর্কিত ঠাট্টায় জড়িয়ে পড়ে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন জাপানের কৃষিমন্ত্রী তাকু এতো। গত কয়েক দশকের মধ্যে দেশটি যখন জীবনযাত্রার সবচেয়ে বড় ব্যয়সংকটে পড়েছে এবং সেই সংকটের কেন্দ্রে আছে জাতীয় খাদ্য চাল—তখন এই রকম মন্তব্য রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুতর বলেই বিবেচিত হয়েছে। খবর বিবিসি।
একটি স্থানীয় তহবিল গঠন অনুষ্ঠানে এতো বলেন, ‘আমি কখনো চাল কিনি না। সমর্থকরাই অনেক চাল উপহার দেন।‘ হালকা হাস্যরস ছড়াতে চাওয়া মন্তব্যটি উল্টো বিতর্ক ডেকে আনে। জনগণের ক্ষোভ এতটাই বেড়ে যায় যে, বিরোধী দলগুলো তার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনার হুমকি দেয়। আর তার পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রী পদত্যাগ করেন। এতে প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার সংখ্যালঘু সরকারের ওপর নতুন করে চাপ তৈরি হয়েছে— যে সরকার এরইমধ্যে জনপ্রিয়তা হারাচ্ছিল।
চালের দাম নিয়ে জাপানে অতীতেও রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। ১৯১৮ সালে চালের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ছড়িয়ে পড়ে দাঙ্গা এবং তৎকালীন সরকারের পতন হয়। ফলে ইশিবা সরকারের ক্রমহ্রাসমান গ্রহণযোগ্যতায় এই চাল ইস্যুটিরও একটি বড় ভূমিকা রয়েছে।
ইয়োকোহামার ৩১ বছর বয়সী মা মেমোরি হিগুচি বলেন, ‘রাজনীতিকরা নিজেরা বাজারে যান না, তাই বোঝেন না।‘ তিনি বলেন, তার শিশু সন্তান এখন কঠিন খাবার খাওয়া শুরু করবে এবং পরিবারের পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিত করা দরকার। কিন্তু চালের দামের কারণে হয়তো তারা নিজেদের খাবার কমাতেই বাধ্য হবেন।
ইবারাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতিবিদ কুনিও নিশিকাওয়ার মতে, সরকার চালের চাহিদা ভুলভাবে অনুমান করেছিল। ২০২৩ ও ২০২৪ সালে সরকার চাহিদা নির্ধারণ করেছিল ৬ দশমিক ৮ মিলিয়ন টন, কিন্তু প্রকৃত চাহিদা ছিল ৭ দশমিক ০৫ মিলিয়ন টন। অন্যদিকে, উৎপাদন হয়েছিল মাত্র ৬ দশমিক ৬১ মিলিয়ন টন।
এর কারণ হিসেবে উঠে এসেছে মহামারির পর বাইরে খাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যাওয়া, পর্যটকের সংখ্যা বৃদ্ধি, অন্যান্য খাবারের তুলনায় চাল তুলনামূলক সস্তা থাকা, প্রচণ্ড গরমে ফলন কম হওয়া এবং চালের মান খারাপ হওয়া।
অনেক বছর ধরে ধান চাষে লাভ হচ্ছিল না বলে জানান নিগাতা অঞ্চলের কৃষক কোসুকে কাসাহারা। তার হিসাব অনুযায়ী, ৬০ কেজি চাল উৎপাদনে খরচ হয় প্রায় ১৮,৫০০ ইয়েন, যেখানে চাষিরা পাচ্ছিলেন মাত্র ১৯,০০০ ইয়েন। আগে সরকার উৎসাহ দিত চাল চাষ কমিয়ে গম বা সয়াবিন চাষে যেতে।
জাপানে বাজারের বাস্তবতা বদলেছে। এখন ৬০ কেজি চালের দাম ৪০,০০০ থেকে ৫০,০০০ ইয়েন। এটা কৃষকদের জন্য সুখবর হলেও ভোক্তারা কষ্টে পড়েছেন। সরকার মার্চ মাসে জরুরি মজুদ থেকে চাল ছেড়েছিল—যা সাধারণত শুধু দুর্যোগের সময় করা হয়। তবু দাম কমেনি।
চালের দাম এতটাই বেড়েছে যে, জাপান ২৫ বছর পর প্রথমবার দক্ষিণ কোরিয়া থেকে চাল আমদানি করছে। প্রধানমন্ত্রী ইশিবা ইঙ্গিত দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকেও চাল আনার বিষয়ে আলোচনা চলছে।
জাপানে সামনে জাতীয় নির্বাচন। প্রবীণ ভোক্তা ও কৃষকরাই ভোটের বড় শক্তি। তাই সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ—কীভাবে চালের দাম স্থিতিশীল রাখা যায়, কৃষককে বাঁচানো যায়, আবার ভোক্তার ক্ষোভও প্রশমিত হয়।
সে সঙ্গে, তাকু এতোর বিতর্কিত ঠাট্টার ঘটনা দেখিয়ে দিল, চাল এখন শুধু খাদ্য নয়, এটি জাপানের রাজনৈতিক ভাগ্য নির্ধারণেও ভূমিকা রাখছে।