
বিটকয়েনের দাম এত বাড়ার কারণ কী?
যুক্তরাষ্ট্রে অনুকূল ক্রিপ্টো নীতিমালা
যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে ক্রিপ্টোকারেন্সি, বিশেষ করে স্টেবলকয়েন নিয়ন্ত্রণে আনতে সম্প্রতি ‘জিনিয়াস অ্যাক্ট’ (GENIUS Act- Guiding and Establishing National Innovation for U.S. Stablecoins Act) নামে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিল পাস হয়েছে। এই আইনটি স্টেবলকয়েন ইস্যুকারীদের জন্য একটি সুস্পষ্ট ও কঠোর নিয়ন্ত্রক কাঠামো তৈরি করবে; যা মার্কিন ক্রিপ্টো বাজারে স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
মার্কিন সিনেটে ৬৬-৩২ ভোটে বিলটি পাস হয়েছে। আইনটি কার্যকর হতে হলে হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস ও প্রেসিডেন্টের অনুমোদন লাগবে।
বিশ্লেষকদের মতে, ‘জিনিয়াস অ্যাক্ট’ পাস হলে স্টেবলকয়েন বাজার ২০৩০ সালের মধ্যে ২ থেকে ২.৫ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে; যা মার্কিন ডলারের বৈশ্বিক প্রভাব বাড়াবে।
প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগের বৃদ্ধি
মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বিটকয়েন এক্সটেন্ড ট্রেডেন্ড ফান্ড (ETF)-এ ৩.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি বিনিয়োগ হয়েছে, যা জানুয়ারির পর সর্বোচ্চ। এটি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের আগ্রহেই প্রতিফলন।
যুক্তরাষ্ট্রে বিটকয়েনে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ গত কয়েক বছরে দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে; বিশেষ করে ২০২৪ সালের শুরু থেকে ইটিএফ অনুমোদনের পর। এতে হেজ ফান্ড, পেনশন ফান্ড, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি এবং এমনকি ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর আগ্রহ অনেক বেড়েছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের ক্রিপ্টো সহায়ক অবস্থান
২০২৫ সালের ৬ মার্চ, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে স্ট্রাটেজিক বিটকয়েন রিজার্ভ (Strategic Bitcoin Reserve) প্রতিষ্ঠা করেছেন; যা যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বিটকয়েন সংরক্ষণকে বৈধতা দিয়েছে। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ‘ক্রিপ্টো রাজধানী’ হিসেবে গড়ে তোলার প্রচেষ্টার অংশ।
স্ট্র্যাটেজিক বিটকয়েন রিজার্ভের উদ্দেশ্য ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ডিজিটাল সম্পদ নীতিতে নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা এবং বিটকয়েনকে একটি জাতীয় রিজার্ভ সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা।
২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত, যুক্তরাষ্ট্র সরকার আনুমানিক ২ লাখ বিটকয়েন ধারণ করে, যা বৈশ্বিকভাবে কোনো রাষ্ট্রের মধ্যে সর্বোচ্চ। এই রিজার্ভের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এবং ডিজিটাল অর্থনীতিতে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় বিটকয়েনকে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে বিবেচনা
যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ইল্ড বৃদ্ধির ফলে শেয়ার ও বন্ড বাজারে মন্দা দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরা বিটকয়েনকে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে বিবেচনা করছেন।
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার বাণিজ্য উত্তেজনা কমা এবং মুডিস, মার্কিন ঋণমান কমিয়ে দেয়ায়, বিনিয়োগকারীরা ডলারের বিকল্প বিনিয়োগ উৎস হিসেবে ক্রিপ্টোর দিকে ঝুঁকছেন।
বাজারের প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ ও ভবিষ্যদ্বাণী
বিভিন্ন বিশ্লেষক বিটকয়েনের দাম ২০২৫ সালের শেষ নাগাদ দেড় থেকে ২ লাখ ডলার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছেন। এই ভবিষ্যদ্বাণী বিটকয়েনের বাজেরে আরও আগ্রহ সৃষ্টি করছে।
বিটকয়েনের মতো অন্যান্য প্রধান ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলোর দামও বেড়েছে। তবে বিটকয়েনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অতটা বাড়েনি। দ্বিতীয় জনপ্রিয় ক্রিপ্টোকারেন্সি ইথারের দাম বৃহস্পতিবার সকালে আড়াই শতাংশ বেড়ে প্রতিটি মুদ্রার দাম হয়েছে ২ হাজার ৬১৮ ডলার। একই সঙ্গে ঊর্ধ্বমুখী আরেক মুদ্রা বাইন্যান্সের দামও। প্রতিটির মূল্য প্রায় ২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৮৬ ডলারে।
যদিও বিটকয়েনের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে, তবে এটি একটি অত্যন্ত অস্থির সম্পদ। আর তাই বিনিয়োগের আগে ঝুঁকি মূল্যায়ন করা জরুরি বলে মত বিশ্লেষকদের।